ছায়াছবির মহোৎসব

দেশ-বিদেশের ছবি। আড্ডা। আলোচনা। বক্তৃতা। প্রদর্শনী। তারকাদের মেলা। সেলফি। কেনাকাটা। পেটপুজো। প্রেম। সবমিলিয়ে ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ছিল জমজমাট। প্রায় প্রতিটি শো ছিল হাউসফুল। পুরস্কৃত করা হয়েছে সেরাদের। তারপর? ৮ দিনের আন্তরিক আয়োজনের পরিসমাপ্তি। ছড়িয়েছে মনখারাপ। যদিও তার আগেই পূর্ণ হয়েছে প্রাপ্তির ভাঁড়ার। আবারও এক বছরের প্রতীক্ষা। চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে এসে লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

উৎসবের সেরা
মায়াময় ছায়াছবি। বিশুদ্ধ কবিতার মতো। সংলাপ আছে। তুলনায় কম। ছবি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আশ্চর্য নীরবতা। চরিত্ররা সহজেই পড়ে নেয় একে-অপরের মনের ভাষা। চোখের ভাষা। নীরব সেই ভাষা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না দর্শকেরও। ছবিটি হল বুলগেরিয়ার ‘তারিকা’। মূলত বাবা-মেয়ের গল্প। অসুস্থ মেয়ে তারিকা এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে গ্রামের শেষপ্রান্তে ছোট্ট কুটিরে থাকেন শ্রমজীবী আলি। অসুস্থতার কারণে তারিকাকে অশুভ মনে করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ। এঁকে দেয় দূরত্ব। প্রকৃতি টানে তারিকাকে। একা একা ঘুরে বেড়ায় পাহাড়, নদী, জঙ্গলে। পশু, পাখি, পতঙ্গ যেন তার বন্ধু। মাঝেমাঝে পাখি, পতঙ্গের মতো ডানা মেলে উড়ে যেতে চায় এই শান্ত বালিকা। একজন বালক তাকে দূর থেকে দেখে। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই বালকের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক ঘটনার জন্য সমাজ দায়ী করে তারিকাকে। মেয়র-সহ গ্রামের লোকজন দলবেঁধে তাদের বাড়ি আক্রমণ করে। কিন্তু কেউই পায় না তারিকার নাগাল। স্নিগ্ধ মুখের বালিকা ডানা মেলে উড়ে যায়। পতঙ্গের মতো। অসাধারণ এক ছবি। পরতে পরতে লেগে রয়েছে হলুদ বিষণ্ণতা, মনকেমনিয়া সুর। তারিকার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় ভেসেলা ভালচেভার। আলির চরিত্রে জাচারি বাহারোভ। ছবির পরিচালক মিলকো লাজারোভ। প্রযোজক ভেসেলকা কিরয়াকোভা। ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার হয়েছে ছবিটির। সেরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে জিতে নিয়েছে গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অ্যাওয়ার্ড। পরিচালকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ট্রফি, ৫১ লাখ টাকা অর্থমূল্য এবং শংসাপত্র। সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে হীরালাল সেন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে কন্নড় ছবি ‘লাচ্ছি’। ট্রফির সঙ্গে পরিচালক ও প্রযোজকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা অর্থমূল্য এবং শংসাপত্র।

আরও পড়ুন-বোকারোতে পথ দুর্ঘটনায় মৃত ৫, আহত ৩

জাফর পানাহি সম্পাদিত
জার্মানির ‘দ্য উইটনেস’ ঘিরে আগ্রহ ছিল। কারণ নাদের সাইভার পরিচালিত ছবিটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জাফর পানাহির নাম। তিনি সম্পাদক। ২০২২ সালের কারাবাসের পর এই ছবির মাধ্যমেই ছায়াছবির জগতে ফেরেন। ছবির গল্প এগিয়েছে টারলানকে ঘিরে। তিনি প্রৌঢ়া। অবসরপ্রাপ্ত নৃত্য শিক্ষিকা। তাঁর পালিতা কন্যা আছে, নাতনি আছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভুলত্রুটিগুলো প্রতি মুহূর্তে ধরা পড়ে তাঁর চোখে। নৃত্যকলার প্রতি ভালবাসার কারণে তাঁর পালিতা কন্যা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকেন টারলান। কন্যার হত্যার বিচার চেয়ে মুখোমুখি হন পুলিশের। সমস্ত রকমের ভয় উপেক্ষা করে মুখ খোলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী জামাতার বিরুদ্ধে। যদিও জামাতা ছাড়া পেয়ে যান। এটা মেনে নিতে পারেন না টারলান। প্রতিশোধ নিতে জামাতার পানীয়ের মধ্যে মিশিয়ে দেন বিষ। পাপের হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করে নাতনি। তার দু’চোখেও জ্বলতে থাকে প্রতিশোধের আগুন। মিউজিকের তালে তালে নেচে ওঠে সে। অবিকল মায়ের মতো। বাবার চোখের সামনে। দাঁড়ায় খোলা আকাশের নিচে। এইভাবেই সে নেয় মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ। থ্রিলারধর্মী ছবি। নির্মেদ। টানটান। টারলানের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় মারিয়াম বোবানির। কখনও নীরব, কখনও সরব। মেথড অ্যাক্টিং কোন উচ্চতায় যেতে পারে, দেখিয়েছেন তিনি। ছবিটির ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার ছিল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।

আরও পড়ুন-বিজেপি রাজ্যে দুর্গামন্দিরের ভিতরে কিশোরীকে গণ.ধর্ষণ, নিন্দায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস

রবীন্দ্র-চরিত্রে অনবদ্য ভিক্টর
শেষ বয়সে আর্জেন্টিনার তরুণী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব রচিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। নিজের বাড়িতে রেখে অসুস্থ কবির সেবাযত্ন করেছিলেন এই বিদেশিনি। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ রবীন্দ্র-ভক্ত। কবিগুরু ভালবেসে ভিক্টোরিয়ার নাম দিয়েছিলেন ‘বিজয়া’। তাঁর উদ্দেশ্যেই লিখেছিলেন কাব্যগ্রন্থ ‘পূরবী’। তাঁদের পবিত্র সম্পর্কের গল্প নিয়েই আর্জেন্টিনার পরিচালক পাবলো সিজার তৈরি করেছেন ‘থিংকিং অফ হিম’। ছবিটি ছিল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। হয়েছে স্পেশাল স্ক্রিনিং। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিক্টোরিয়ার চরিত্রে এলিওনোরা ওয়েক্সলার। এছাড়াও আছেন রাইমা সেন, হেক্টর বোর্দিনি। ছবিটি দেখার মতো। তবে নিখুঁত নয়। অতীতের পাশাপাশি ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনা, যা পুরোপুরি কাল্পনিক। তফাত বোঝানো হয়েছে রঙিন এবং সাদাকালোয়। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ছবি, ফলে বাদ যায়নি শান্তিনিকেতন। দুর্বল সম্পাদনার কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটেছে ছন্দপতন। একদম শেষে ‘হৃদমাঝারে রাখবো’ গানটির ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। পরিবর্তে ব্যবহার করা যেত রবীন্দ্রনাথের গান। এইটুকু ত্রুটি বাদ দিলে বলা যায়, মহৎ উদ্দেশ্য ছিল পরিচালকের। বাজারি গপ্পো এড়িয়ে দুই অসমবয়সীর ঐশ্বরিক ভালবাসা আন্তরিকতার সঙ্গে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

আরও পড়ুন-শিক্ষাব্যবস্থার মুকুটে আরও এক পালক! NAAC-এর সেরা তকমা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়কে, গর্বিত মুখ্যমন্ত্রী

ছবির প্রেক্ষাপট রেঙ্গুন
পর্তুগালের ছবি মিগুয়েল গোমেস পরিচালিত ‘গ্র্যান্ড ট্যুর’। প্রিমিয়ার হয়েছে ২০২৪-এর ২২ মে, ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে। পরিচালক জিতেছেন সেরার পুরস্কার। ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরে, ৯৭ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্মের জন্য পর্তুগিজ এন্ট্রি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে হয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার। সিনেমা ইন্টারন্যাশনাল বিভাগে। ছবির কিছুটা অংশ রঙিন, কিছুটা সাদাকালো। প্রেক্ষাপট ১৯১৭-র রেঙ্গুন। ব্রিটিশ বেসামরিক কর্মচারী এডওয়ার্ড বিয়ের দিন তাঁর বাগদত্তা মলিকে ত্যাগ করেন। মলির অবস্থার কথা ভেবে বিষণ্ণ অবস্থায় পালিয়ে যান। নাছোড় মলি অনুসরণ করেন এডওয়ার্ডের পথ। দু’জনেই মুখোমুখি হতে থাকেন বিচিত্র ঘটনার। এডওয়ার্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছেন গনসালো ওয়াডিংটন। মলির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ক্রিস্টা আলফায়েট। ছবিটি অসাধারণ। মনে দাগ কেটে যায়।
প্রিমিয়ারের আগে বিতর্ক
‘দ্য সিড অফ দ্য সেক্রেড ফিগ’ ২০২৪ সালের একটি রাজনৈতিক থ্রিলার। রচনা এবং পরিচালনা ইরানের মোহাম্মদ রাসউলফের। কাহিনি দানা বেঁধেছে ইমানকে ঘিরে। তিনি তেহরানের বিপ্লবী আদালতের তদন্তকারী বিচারক। দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিবাদ তীব্র হওয়া সত্ত্বেও অবিশ্বাস এবং বিভ্রান্তির সঙ্গে লড়াই করেন। তাঁর বন্দুক রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। একটা সময় তিনি স্ত্রী এবং দুই কন্যার চোখে অবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। শেষপর্যন্ত তাঁর ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়। ইমনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিসাগ জারেহ। অন্যান্য চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন সোহেলা গোলেস্তানি, মাহসা রোস্তামি এবং সেতারেহ মালেকি। ২০২৪-এর ২৪ মে, ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছে। জুরি প্রদান করেছে বিশেষ পুরস্কার। প্রিমিয়ারের আগে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। ইরানি কর্তৃপক্ষ পরিচালককে আট বছরের কারাদণ্ড দেয়। তিনি সফলভাবে জার্মানিতে পালিয়ে যান, কানে রেড কার্পেটে অংশ নেন। ছবিটি ৯৭তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্মের জন্য জার্মান এন্ট্রি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে সিনেমা ইন্টারন্যাশনাল বিভাগে।

আরও পড়ুন-জয়নগরে ৬২ দিন, ফরাক্কায় ৬১ দিনে চরম শাস্তি আদালতের: বিচার পেয়ে গ্রামে পুলিশকে সংবর্ধনা

বিদ্যাকে ঘিরে উন্মাদনা
বলিউড-অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। নিজেকে মনে করেন অর্ধেক বাঙালি। বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর টান। কেরিয়ার শুরু করেছেন বাংলা ছবি দিয়েই। ছবির নাম ‘ভালো থেকো’। মুক্তি পেয়েছিল ২০০৩ সালে। বলিউডে তাঁর অভিনীত প্রথম ছবিতেও ছিল বাংলা যোগ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ‘পরিণীতা’ তৈরি করেছিলেন পরিচালক প্রদীপ সরকার। বিদ্যা অভিনয় করেছিলেন ললিতা চরিত্রে। বিভিন্ন সময়ে শ্যুটিংয়ের কাজে এসেছেন বাংলায়। হিন্দি ছবিতেও তাঁর মুখে শোনা গেছে বাংলা সংলাপ। সবমিলিয়ে তিনি বাংলাকে খুবই ভালবাসেন। বাংলাও ভালবাসে তাঁকে। তাই বাংলার ডাক উপেক্ষা করতে পারেন না। ‘ভালো থেকো’র পরিচালক গৌতম হালদার প্রয়াত হয়েছেন সম্প্রতি। তাঁর স্মরণে ছবিটি দেখানো হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। আমন্ত্রণ পেয়ে এসেছিলেন বিদ্যা। শিশির মঞ্চে মেতে ওঠেন আলাপচারিতায়। তারপর নন্দনে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। নিজের অভিনয় জীবনের কথা শোনান তিনি। বলেন গৌতম হালদার, প্রদীপ সরকার, সুজয় ঘোষের সঙ্গে কেমন ছিল কাজের অভিজ্ঞতা। ‘ভুল ভুলাইয়া থ্রি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে। দারুণ রোমাঞ্চিত তিনি। এও জানান, ভারতের অন্যান্য ভাষাতেও ছবি করতে চান। পরিচালনায় আসতে চান? রেখেছিলাম প্রশ্ন। উত্তরে বিদ্যা বলেন, ‘না, না। পরিচালনা বা প্রযোজনার ইচ্ছা আমার নেই। মন দিয়ে অভিনয়টাই করে যেতে চাই।’
সত্যজিৎ-স্মারক বক্তৃতায় বাল্কি
বলিউডের অন্য ধারার পরিচালক আর. বাল্কি। বিনোদন এড়িয়ে বাস্তবধর্মী ছবি তৈরি করেন। বলেন সময়ের কথা, সমাজের কথা। তাঁর প্রথম ছবি ‘চিনি কম’-এ ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। পরে বাল্কি উপহার দিয়েছেন ‘পা’, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’, ‘প্যাডম্যান’, ‘শমিতাভ’, ‘মিশন মঙ্গল’, ‘ঘুমের’ প্রভৃতি ছবি। তারকারা তাঁর ছবিতে ধরা দেন চরিত্র হয়ে। ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছিলেন তিনি। শিশির মঞ্চে উপস্থাপন করেন সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা। তাঁকে স্বাগত জানান উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। বক্তৃতায় বাল্কি বলেন চলচ্চিত্রে অতীত এবং বর্তমান সময়ের ছবির কথা। বলিউডের সাম্প্রতিক হিট ছবিগুলো প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, ছবিগুলো জঘন্য এবং একঘেয়ে। আগেকার মশলা বা পয়সা উসুল করা ব্যাপার, উত্তেজনা কিছুই আর নেই। দর্শকরা আগের ছবিগুলোর লার্জার দ্যান লাইফ ব্যাপার দেখে মোহিত হতেন। এখন সেটা নেই। তাঁর মতে, শৈল্পিক বা মেধার দিক দিয়ে ছবিগুলো নিম্নমানের। একই সঙ্গে রয়েছে বিনোদনেও ঘাটতি। মারাত্মক ভাবে মার্কেটিং করতে হয়, প্রচার করতে হয়। যাতে দর্শকদের ম্যানিপুলেট করা যায়। যতক্ষণে দর্শকরা বোঝেন যতটা প্রচার করা হয়েছে ততটা ভাল নয়, তার আগেই ছবিটা বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসা করে নেয়। তিনি আরও জানান, আগে বলিউডের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। সেটা এখন আর নেই। কারণ মানুষের কনটেন্ট পছন্দের ধরন বদলেছে। স্মারক বক্তৃতা ছাড়াও উৎসবে বিভিন্ন দিন আয়োজিত হয়েছে আলোচনাসভা। ছবির প্রচার করেছেন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালকরা।

আরও পড়ুন-হাইকোর্টে লাল কেল্লার অধিকার দাবি করলেন মুঘল পুত্রবধূ

আড্ডায় মুখরিত একতারা
চলচ্চিত্র উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ‘সিনে আড্ডা’। আসর বসেছিল একতারা মুক্তমঞ্চে। প্রতিদিন দেখা গেছে চাঁদের হাট। কমেডি চরিত্রের অভিনেতাদের নিয়ে একদিন আড্ডা জমিয়েছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। বিষয় ‘এমনও হাসি আছে বেদনা মনে হয়’। ছিলেন রজতাভ দত্ত, বিশ্বনাথ বসু, কাঞ্চন মল্লিক, অম্বরীশ ভট্টাচার্য প্রমুখ। ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট গোপন রেখে কীভাবে দর্শকদের আনন্দ দেন অভিনেতারা, বললেন তাঁরা। সিনেমার সাফল্যের পিছনে জুটি না গল্প, কীসের অবদান? এই বিষয়ে একদিনের আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, হরনাথ চক্রবর্তী, সোহম চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, পাওলি দাম। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুই খ্যাতনামা শিল্পী পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার এবং পণ্ডিত তন্ময় বসু। তাঁদের যুগলবন্দি দেখা গেল ‘চলচ্চিত্রে রাগের চালচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে। আরেক দিনের ‘সিনে আড্ডা’য় ছিলেন অনুপম রায়, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচী, জোজো, তৃষ্ণা প্রমুখ। কথায়-গানে তাঁরা আসর জমিয়ে তোলেন। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি এবং তথ্যচিত্রের রমরমা নিয়েও বসেছিল আড্ডা। বিভিন্ন দিন আড্ডার আসরে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। ব্যবস্থাপনায় স্বরূপ বিশ্বাস। আড্ডার আগে সিনে ক্যুইজ ঘিরেও দেখা গেছে দর্শকদের উৎসাহ। দেশ-বিদেশের ছবি। প্রচার। প্রদর্শনী। তারকাদের মেলা। সেলফি। কেনাকাটা। পেটপুজো। প্রেম। সবমিলিয়ে ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ছিল জমজমাট। নন্দন, রবীন্দ্রসদন-সহ বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে প্রায় প্রতিটি শো ছিল হাউসফুল। পুরস্কৃত করা হয়েছে সেরাদের। তারপর? ১১ ডিসেম্বর পরিসমাপ্তি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত ৮ দিনের এই আন্তরিক আয়োজনের। ছড়িয়েছে মনখারাপ। যদিও তার আগেই পূর্ণ হয়েছে প্রাপ্তির ভাঁড়ার। আবারও এক বছরের প্রতীক্ষা।

Latest article