চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: সংযুক্ত সময়ের শেষ মিনিটে আলবার্তো রডরিগেজের গোলার মতো শট জালে জড়াতেই যুবভারতীতে গগনভেদী গর্জন। গ্যালারি জুড়ে মোবাইল ক্যামেরায় হাজার জোনাকির আলো। গ্যালারির একাংশে সমর্থকরা তুলে ধরলেন ব্যানার, সেখানে লেখা ‘মেরিনার্স দি হার্টস’। ডিজে বাজল, সঞ্চালক চিৎকার করে উঠলেন, ‘দিস ইজ হোয়াট চ্যাম্পিয়ন্স ডু’। গতবারের মতো এবারও গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছিল সেই কেরল। এগিয়ে থেকেও জোড়া ভুলে ম্যাচ হারতে বসেছিল মোহনবাগান। শেষ পর্যন্ত খারাপ দিনেও তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল জোসে মোলিনার দল। স্প্যানিশ কোচের কয়েকটি অবশ্যম্ভাবী বদল আর কামিন্স ও আলবার্তোর গোলে স্বস্তির নিশ্বাস। পাঁচ গোলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও ৩-২ ফলে কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে এককভাবে শীর্ষে মোহনবাগান। টানা চার ম্যাচ জয়ে ১১ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট মোলিনা ব্রিগেডের। এদিন গোয়ার সঙ্গে ড্র করায় ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বেঙ্গালুরু এফসি। দুর্দান্ত জয়ের পর মাঠে দাঁড়িয়ে মোহনবাগানের টিম মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার ঘোষণা, পরের হোম ম্যাচ বিনা পয়সার টিকিটে দেখতে পারবেন সমর্থকরা।
আরও পড়ুন-মাঠে আবার ধান্দাবাজরা
নোয়া সাদাউ ও জেসুস জিমেনেজদের নিয়ে কেরলের আক্রমণভাগ এবার যতটা শক্তিশালী, ঠিক ততটাই কমজোরি তাদের রক্ষণ। কিন্তু মোহনবাগানের ডিফেন্স এদিন এতটাই হতাশ করল, নোয়ারা গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে খালি হাতে তাঁদের কোচি ফিরতে হত না। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট মোহনবাগান রক্ষণে নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল নোয়া ও জিমেনেজের যুগলবন্দি। এই সময়ে অন্তত দু’গোলে পিছিয়ে পড়তে পারত মোহনবাগান। কিন্তু গোলের নীচে সেই বিশাল কাইথের বিশ্বস্ত হাতেই রক্ষা পায় দল। বক্সের বাইরে থেকে নোয়ার জোরালো শট অপুইয়ার গায়ে লেগে গোলে ঢুকছিল। অনেকটা লাফিয়ে ডানহাতে দুর্দান্ত ফিস্ট করে গোল বাঁচান বিশাল। এরপরই বাঁ-দিক থেকে নোয়ার বাড়ানো পাস ছোট বক্সে চকিতে ব্যাক হিল করেছিলেন জিমেনেজ। কিন্তু অসাধারণ রিফ্লেক্সে তা বাঁচিয়ে দেন বিশাল।
৩২ মিনিটে খেলার গতির বিরুদ্ধে গোল করে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। ভুল করে বসেন কেরল গোলকিপার শচীন সুরেশ। আশিস রাইয়ের শট বাইরে ক্লিয়ার না করে শুধু আটকে দেন তিনি। সামনেই ছিলেন জেমি ম্যাকলারেন। বল জালে জড়াতে তাঁকে কোনও পরিশ্রম করতে হয়নি। পিছিয়ে পড়ে কেরল গোল শোধের মরিয়া চেষ্টা করলেও মোহনবাগানও চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু এদিন কোনও কিছুই ঠিকঠাক হয়নি মোলিনার দলের। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই (৫১ মিনিট) শুভাশিস বসুর ভুলে গোলশোধ করে দেয় কেরল। বিশালের কাছ থেকে বল পেয়ে মিস পাস করেন শুভাশিস। সেই ভুলের সুযোগ নিয়েই গোল করে যান জিমেনেজ। ১-১ অবস্থায় এরপর লড়াই হয় সমানে-সমানে। মোহনবাগানের হয়ে লিস্টন সুযোগ নষ্ট করেন। নোয়ার দুটো শট বাঁচান বিশাল।
আরও পড়ুন-ইউপিএসসিতে প্রথম দুই স্থানেই এবার বঙ্গসন্তান, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
৭৭ মিনিটে অপ্রত্যাশিত ভুল করে বসেন বিশাল। অদ্রিয়ান লুনার ফ্রি-কিক তালুবন্দি করতে পারেননি বাগান গোলকিপার। বল মাটিতে পড়ার সঙ্গেই জোরালো শটে গোল করে কেরলকে এগিয়ে দেন দ্রিনচিচ। পিছিয়ে পড়ে আহত বাঘের মতো ঝাঁপাল মোহনবাগান। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ছিলেন না। মোলিনা বার করলেন তাঁর আস্তিনের দুই তাস জেসন কামিন্স ও আশিক কুরুনিয়নকে। আশিস রাই ও লিস্টনকে তুলে রক্ষণে লোক কমিয়ে আক্রমণে শক্তি বাড়ালেন। তাতেই বাজিমাত। দুই সুপার সাবের পায়েই ৮৬ মিনিটে সমতাসূচক গোল। কুরুনিয়নের পাস থেকে গোলে শট নেন দিমিত্রি। গোলকিপারের সামনে দাঁড়ানো কামিন্সের পায়ে লেগে বল জালে জড়িয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত সময়ের শেষ মিনিটে আলবার্তোর দূরপাল্লার শটে বিশ্বমানের গোলে নিশ্চিত হল সবুজ-মেরুনের জয়।