প্রতিবেদন : যুক্তি, নীতি কোনও কিছুরই ধার ধারল না মোদি সরকার। কার্যত গায়ের জোরেই মঙ্গলবার লোকসভায় এল ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল (One Nation One Election)। এদিন প্রথম থেকেই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ- বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের দাবি মেনে ডিভিশন (ভোটাভুটি) করতে বাধ্য হল কেন্দ্র। তাও একবার নয় দুবার ভোটাভুটি করতে হয়। তাতেও দুই তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপির শাসক জোট। তীব্র কটাক্ষ করে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-হ্যান্ডেলে লেখেন, বিজেপির অপচেষ্টা গণতন্ত্রের উপর একটি নির্লজ্জ আক্রমণ। এক দেশ এক ভোট বিল জনগণের ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার হরণ করতে চায়। এদিন প্রথমবার ভোটাভুটিতে ফলাফল হয় ২২০-১৪৯। দ্বিতীয়বারের ফলাফল ২৬৯-১৯৮। কিন্তু বিরোধীদের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত বিলটি জেপিসিতে (যৌথ সংসদীয় কমিটি) পাঠাতে বাধ্য হয় সরকারপক্ষ। মঙ্গলবার ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল পেশের আগে এক্স হ্যান্ডেলে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, সংসদে যখন সংবিধান-বিতর্ক এখনও চলছে, আজকে একটি সাংবিধানিক সংশোধনী বিল পেশ করার জন্য বিজেপির অপচেষ্টা গণতন্ত্রের উপর একটি নির্লজ্জ আক্রমণ। এক দেশ এক ভোট বিল জনগণের ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার হরণ করতে চায়। কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক লিখেছেন, বাংলা চুপ করে বসে থাকবে না। এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে। তাঁর যুক্তি, এক দেশ এক ভোট নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। তার মধ্যেই এই বিল পেশ মোটেই কাম্য নয়। এটা শুধু গণতন্ত্রের উপর আঘাত নয়। এতদিন ধরে সংবিধানকে মজবুত করে তুলতে দেশের মনীষীরা যে সংগ্রাম করেছেন, তা তছনছ হতে চলেছে।
আরও পড়ুন- উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী, ক্রিসমাস উৎসব শুরু হবে ১৯ ডিসেম্বর
আসলে এই বিল নিয়ে সর্বপ্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসই। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলের যৌক্তিকতা নিয়ে সর্বপ্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাই এদিন তৃণমূল লোকসভায় প্রথম থেকেই কোমর বেঁধে নেমেছিল বিলটির বিরোধিতায়। বিল পেশ হওয়ামাত্রই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোর উপর আঘাত। তাঁর যুক্তি, যে বিল সংবিধানের মূল কাঠামোর উপর আঘাত হানে তা ভাইরাসের নামান্তর মাত্র। এই বিল পাশ হলে রাজ্য বিধানসভাগুলির অটোনমি বিঘ্নিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ৮৩ (৫) ধারা এবং ৮৩ (২) ধারা পরস্পর-বিরোধী। এই দুই ধারাকে কখনোই একসঙ্গে মেলানো যায় না। বিধানসভা নির্বাচনে যেমন জনতার রায়ে সরকার গঠিত হয়, লোকসভাতেও ঠিক তাই। স্বাভাবিকভাবেই মেয়াদ শেষের আগে কোনও সরকারকে ভেঙে দেওয়া যায় না। বিধানসভা ও লোকসভা সম্পূর্ণ আলাদা, স্বতন্ত্র। তাই এক দেশ এক ভোটের নামে সবকিছু ভেঙে দেওয়া যায় না। এটা বিপদের কারণ হতে পারে। সেই কারণে যেমন চলছে চলুক না! অসুবিধাটা কোথায়? কল্যাণের অভিযোগ, এই আইন নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংশোধনী নয়। ব্যাপারটা আসলে কোনও এক ব্যক্তির নিজস্ব স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ভাইরাস আইন।