খাদান

দুই বন্ধু শ্যাম মাহাতো আর মোহন কীর্তনিয়ার রুদ্ধশ্বাস ভাগ্যজয়ের কাহিনি নিয়ে আজ বড়পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে মহাকাব্যিক অ্যাকশনধর্মী ছবি ‘খাদান’। ছবির পরিচালক সুজিত রিনো দত্ত। কয়লাখনির মাফিয়াদের অন্ধকার জগতে অ্যাকশন অবতারে অবতীর্ণ হবেন বিধ্বংসী দেব। দর্শক, অনুরাগীদের উত্তেজনা তুঙ্গে। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

‘সরদারি অত সিধা বাত লয়,
যে একা সব সয় ওই সরদার হয়’
লম্বা চুল, একগাল দাড়ি, মুখে জ্বলন্ত বিড়ি। যে বিড়িটা একটা সময় তার মুখের ভিতরে চলে যায়। আগুনখেকো এক পুরুষ কুঠার হাতে একের পর এক শত্রুনাশ করে চলেছে। এমন মেঠো সংলাপ, ছন্নছাড়া লুকে কিছুদিন আগে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন দেব। ‘খাদান’ (Khadaan) ছবি টিজারে অ্যাকশন অবতারে বিধ্বংসী দেব অনুরাগীদের নজর কেড়েছিলেন। অবশেষে আজ মুক্তি পাচ্ছে পরিচালক সুজিত রিনো দত্তের সেই মহাকাব্যিক অ্যাকশনধর্মী ছবি ‘খাদান’। শ্যুটিং শুরুর দিন থেকে এই ছবি চর্চায় তার কারণ দেব। এই ছবিটা অনেকগুলো কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম হল, ঠিক দশ বছর পর আবার মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে এলেন দেব। আবার পাগুল, চ্যালেঞ্জ, রংবাজের মতো পুরনো ক্যারিশমায় দেখা যাবে তাঁকে। বিগত কয়েক বছর একটু অন্যরকম ছবিতেই দর্শক দেবকে দেখেছেন। গত বছর ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’, ‘বাঘা যতীন’ বা ‘প্রধান’-এর মতো ছবিতে দেবকে ‘অ্যাকশন’-এ দেখা গেলেও সেগুলো পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবি ছিল না। এবার তিনি তাঁর ভক্ত এবং অনুরাগীদের সেই ইচ্ছে পূরণ করলেন। আরও একটা বিষয় হল, প্রথম কোনও ছবি টিজার লঞ্চ থেকেই যে ছবিটার সঙ্গে দক্ষিণী অ্যাকশন ছবির তুলনা করা হচ্ছে। দেবের লুক, ছবির ঝলক দেখে নেটনাগরিকের একাংশ ‘কেজিএফ’ এবং ‘সালার’ ছবির প্রসঙ্গও তুলেছেন। এমনটা কিন্তু আগে কোনও ছবিতে হয়নি। তাই ছবিটা নিয়ে প্রত্যাশা অনেকখানিই বেড়ে রয়েছে। সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারল ‘খাদান’ আজকে সেটাই দেখার।
এই ছবি কোনও সুপার হিরোর গল্প নয়। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনও নয়। এটা আসলে কয়লা মাফিয়াদের অন্ধকার জীবনের রুদ্ধশ্বাস এক কাহিনি। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা শ্যাম মাহাতো দামোদর উপত্যকায় আসেন কয়লাখনির শ্রমিক হয়ে। এখানেই তার দেখা হয় কীর্তনিয়া মোহন দাসের সঙ্গে। যিনি দারুণ শ্রীখোল বাজান। কীভাবে দুই বন্ধু মোহন এবং শ্যাম অপরাজেয় মনোবল নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যায় নিজেদের এবং অন্যান্য শ্রমিক বন্ধুর ভবিতব্য লেখে। এই নিয়ে গল্প ‘খাদান’-এর। শুনতে খুব সহজ সরল মনে হলেও ছবিটা ততটাও সহজ, সরল নয়। পুষ্পারাজের পর এবার কয়লা খনির মাফিয়ারাজের কাহিনি দেখবেন দর্শক। এই ছবির শেষ পর্বেও থাকবে চমক। আর ছবি জুড়ে রয়েছে দেবের আগুনঝরানো পারফর্মেন্স। ‘খাদান’-এ দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেব। ছবিটি প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে দেব বলেন, ‘খাদান আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা ছবি কারণ, এই ছবির গল্পটা যখন শুনেছিলাম একটা গোটা বিশ্ব দেখতে পেয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় হল, এটা এই রাজ্যের ঘটনা, বাংলার গল্প, বাঙালিদের গল্প। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় কোল মাইন এই বাংলাতে— দামোদর ভ্যালিতেই রয়েছে। আমার পরিচালকও এখানকারই মানুষ। কোল মাইন এলাকাগুলো সবটাই রিজার্ভ এরিয়া। কিন্তু ওইখানকার ছেলে হবার সুবাদে ওই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ও পরিচিত, ওখানকার নিয়মকানুন সব ওর জানা ফলে ও গল্পটা বাস্তবসম্মতভাবে তৈরি করতে পেরেছে। তখন গল্পটা শুনে দেখতে গিয়েছিলাম খনি অঞ্চল। সেখানে খাদানে যখন ঢুকলাম তখন দেখলাম এ এক অন্য পৃথিবী। মাটির চারশো ফিট নিচে। সবকিছু খুব পরিকল্পিতভাবে তৈরি। সবরকম ব্যবস্থাপনা রয়েছে। ওপেন খাদান যেগুলো দেখলাম সেগুলো দেখাও এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। তখন মনে হয়েছিল এই জগৎটা যদি দর্শকদের দেখাতে পারি তাহলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে। দর্শকদেরও তো পছন্দ বদলায়, রুচি বদলায়। ‘খাদান’ তেমনই এক ধরনের ছবি যা দর্শকের রুচির বদল ঘটাবে। ছবিটা মুক্তির আগেই আমরা অনেকটা রেসপন্স পেয়ে গিয়েছিলাম।’

আরও পড়ুন- সুপ্রিম প্রশ্নের মুখে সিবিআই, কিছু অযোগ্যের জন্য কেন ২৬ হাজারের চাকরি যাবে

ঠিক তাই খাদান আজ রিলিজ হলেও অনেক আগেই ছবি সুপারহিট হয়ে গেছে বলা যায়, তার কারণটা হল ‘খাদান’ (Khadaan) টিমের বেঙ্গল ট্যুর। এই ছবির প্রচারের উদ্দেশ্যে এক অভিনব পন্থা নেওয়া হয়েছিল নির্মাতাদের পক্ষ থেকে। যার পুরো কৃতিত্বই দেবের। ‘খাদান’ ছবির থিমে একটা গোটা বাস সাজিয়ে সেই বাসে চড়ে বাংলার বুকে তিন হাজার কিলোমিটার সফর পার করেছেন দেব-সহ গোটা খাদান টিম। দুর্গাপুর, বর্ধমান, হাওড়া, মধ্যমগ্রাম, মালদা, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি— কোনও জায়গা বাদ রাখেননি তাঁরা। যে বেঙ্গল ট্যুরে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছে ‘খাদান’ টিম। ফলে বাংলার কোনায় সবার মুখে একটাই ছবির কথা ছিল ‘খাদান’। এটা নাকি ২০২৪-এর সবচেয়ে বড় বাংলা ছবি। কাজেই মুক্তির দিন যে দর্শকের উন্মাদনা তুঙ্গে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
খাদান ছবিতে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত। তিনি মোহন দাসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই প্রসঙ্গে যিশু জানালেন, বাংলা ছবির মোড় ঘোরাবে ‘খাদান’ এটাই আমার বিশ্বাস। যখন গল্পটা শুনি খুব অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এমন একটা ছবি করা কি সত্যি সম্ভব! দেব আমাকে বলেছিল ও সম্পূর্ণ চেষ্টা করবে, ও যেমনটা ভেবেছে ছবিটা নিয়ে, যাতে ঠিক তেমনটাই রূপ পায়। আমি এই ছবির একটা অংশ হতে পেরে খুশি।

‘খাদান’-এর (Khadaan) শ্যুটিং হয়েছে রানিগঞ্জের খনি এলাকায়। দেব আর যিশু সেনগুপ্ত ছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন অভিনেত্রী বরখা বিস্ত, ইধিকা পাল, অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী, সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, স্নেহা বোস, রাজা দত্ত, সুজন নীল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। খাদানের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন রথীজিৎ ভট্টাচার্য, স্যাভি গুপ্ত, নীলয়ন চট্টোপাধ্যায়। গানের কথা লিখেছেন ঋতম সেন এবং নীলয়ন চট্টোপাধ্যায়। গানে গেয়েছেন সন্দীপ নন্দী, জুন ব্যানার্জি, অরিজিৎ, অভিজিৎ ভট্টাচার্য প্রমুখ। কাহিনি, চিত্রনাট্য এবং সংলাপ স্বয়ং পরিচালকের। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বিশ্বরূপ বিশ্বাস। ‘খাদান’ ছবির প্রযোজক নিসপাল সিং-এর সুরিন্দর ফিল্মস এবং দেব-এর প্রযোজনা সংস্থা দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স লিমিটেড।

Latest article