সার যিনি দান করেন তিনিই সারদা। মাদুর্গা ও সরস্বতীর অন্য নাম।
‘সন্তোষের সমান ধন নেই, সহ্যের সমান গুণ নেই।’
‘তুমি কখনও বিপদে পড়বে না, তা ভেবো না। খারাপ সময় সবার জীবনেই আসে। তবে তা বরাবর থাকবে না। সেতুর নীচ দিয়ে জল যাওয়ার মতোই খারাপ সময় কেটে যাবে।’
‘জগৎকে আপনার করে নিতে শেখো, কেউ পর নয় মা, জগৎ তোমার।’
আরও পড়ুন-স্বামীজি আর ঠাকুরের শ্রীমা
আজ থেকে অত বছর আগে যখন সমাজ ছিল রক্ষণশীলতা ও উচ্চ- নীচ ভেদাভেদে ক্লিষ্ট তখন প্রথাগত শিক্ষার বাইরে থাকা এক নারীর এমন সহজ-সরল কথকতা। জাতপাত, ধনী-নির্ধনের বেড়া পেরিয়ে বিশ্বলোককে আপন করে নেওয়ার এমন অমলিন মন, অনাবিল ও অকৃত্রিম স্নেহ-মমতার পরশ দিয়ে জগৎকে আপন করে নেওয়ার মন্ত্রের উচ্চশিক্ষা দিয়ে কেবলমাত্র সাংগঠনিক শক্তি ও দার্শনিক চিন্তাধারার শরিক হওয়া যায় এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন তিনি। অন্যের সুখ-দুঃখের অনুভূতিতে একাত্ম হয়ে, শুদ্ধ মনে তিনি আত্মস্থ করতেন। মাতৃস্নেহের সুধাধারায় অভয়দায়িনী, স্নেহময়ী মা হিসাবে অপরিসীম সাংগঠনিক শক্তি, জনকল্যাণ এবং লোকশিক্ষায় সমাজসংস্কারে ব্রতী হয়েছিলেন শ্রীশ্রী ঠাকুরের জীবনসঙ্গিনী শ্রীমা।
সবাইকে সন্তানরূপে দেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল সারদা মায়ের। বিশেষ করে সমাজ যাকে দূরে ঠেলে দিত তাকেও আপন করে কাছে টেনে নিতে পারতেন তিনি।
তাই তো তিনি অকপটে বলেছিলেন— ‘যেমন আমি সতের ও মা, তেমন অসতেরও মা। আমি সত্যিকারের মা। গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয়, সত্য জননী।’
‘যদি কখনও কোনও ভীষণ বিপদে পড়ো ভয় নেই, জানবে তোমার একজন মা আছেন।’
তাঁর জননীসুলভ স্নেহ, কোমলতার সঙ্গে পবিত্রতা সেবা, কর্মকুশলতা, মমতা, ক্ষমা ইত্যাদি নানা গুণের পরিচয় আমরা বারবার পেয়েছি।
মানুষ বা জীবজন্তু শুধু নয়, সংসারের সামান্য ঝাঁটাটিরও তাঁর কাছে স্বীকৃতি ছিল। সংসারে যাকে আমরা সামান্য বলি, উপেক্ষা করি, তাকে ও অসামান্য সম্মান দানে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী।
বাংলার পুণ্যস্থান বাঁকুড়া জেলার শিরোমণিপুর থানার অধীনে মসিনাপুর গ্রাম। জয়রামবাটির দক্ষিণ-পশ্চিমের কোণে ছিল এই মসিনাপুর গ্রাম। এই গ্রামের হরিহরপাড়ায় আজও পুজো হয় জগৎ-জননী শান্তিময়ী মায়ের।
কেন?
অখ্যাত এক গ্রাম কী কারণে আজও লোকের মুখে ফেরে? জানতে হলে পিছোতে হবে বেশ কয়েক বছর আগে। সেসময়ে প্রসবক্রিয়ার কাজ সমাধা করার জন্য সন্তানসম্ভাবা মায়েদের জন্য নিযুক্ত হতেন ধাত্রী-মা। সাতবেড়ে, জয়রামবাটি, হলদি, জিরেট— এমন বহু গ্রামের মধ্যে হরিহরপাড়ার ভুবন হাঁড়ি সেই সময়ে এই কাজের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। হাঁড়িবউ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। শ্রীশ্রী মা সারদার ধাত্রী-মা ছিলেন এই ভুবন হাঁড়ি।
জন্মমুহূর্তে মায়ের দৈবসত্তার দর্শন পেয়ে সেই অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা তাঁর একমাত্র কন্যা চারু হাঁড়িকে তিনি বলেছিলেন।
আরও পড়ুন-অভয়ার মঞ্চ ব্যবহারের রাজনীতি এসইউসিআইয়ের নিশানায় সিপিএম
‘জয়রামবাটী রাম মুখুজ্জের মেয়ে সারু যে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ে নয় সেটা আমি ওর জন্মের সময় টের পেয়েছিলুম। সারুকে যখন তার মায়ের পেট থেকে বার করি, তখন মনে হল যেন একটা আলোর তাল আমার দুটো হাতে এল। আমার চোখ বুজে এল, ধাঁধিয়ে গেল চোখ দুটো। তারপর ভালো করে ধুইয়ে মুছিয়ে দেখি, না টুকটুকে মেয়েই হয়েছে। তখন আমি ভাবলুম হয়তো আমার চোখের ভুল।
তারপর যখন একুশ দিনে নাড়ি কাটলো তখনো সেই মেয়ের নাড়ির সুতোটা শুকাইনি, আমি তেল মালিশ করে দেবো বলে যেই কোলে তুলেছি তখনও দেখি তার জন্মবার সময়ের মতন আমার কোলে যেন একটা সোনার আলোর তাল। খুব ভয় পেয়েছিলুম, চোখ বুজে মা কালীর স্মরণ নিলুম।
পরে চোখ খুলে দেখি খুদে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিনই বুঝেছিল এই মেয়ে যে-সে মেয়ে নয়, ও খুব বড় হবে।
সারুর জন্মের পরেই তো ওদের বাপের বাড়-বাড়ন্ত হল, জমি জিরেত হল। সারু বড় হলে ওদের বাড়িতে যখন যেতুম সে বলতো— দাই- মা,এসো এসো, বসো বসো… আসন পেতে দিত, হাতের কাছে যা ফল মিঠাই থাকতো আমাকে যত্ন করে খেতে দিত। বলত খাও দাইমা খাও…।’
আমি কিন্তু তাকে দেখলেই বলতুম, ‘পেন্নাম মা লক্ষ্মী।’ সে অমনি বলতো, ‘দাই মা, আমি তোমার চেয়ে কত ছোট, আমাকে পেন্নাম জানাও কেন? আমি বলতুম মা রে তুই যে মা লক্ষ্মী, মা লক্ষ্মীকে পেন্নাম না জানালি হয়?
তক্ষুনি সারু বলতো অমন কথা বলো না, আমি তোমাদের সেই সারুই গো, সেই সারু বলে ছুট্টে পালিয়ে যেত…’।
শ্রী শ্রী মায়ের জাগতিকভাবে শুভ আবির্ভাবের প্রথম সাক্ষী ছিলেন এই ভুবন হাঁড়ি। সেই কারণেই আজও সেই বাড়িতে মায়ের নিত্য পুজো হয়। আর সেই অখ্যাত গ্রাম আজ বিখ্যাত।
ইতিহাস অনুযায়ী আঠারোশো তিপান্ন সালের বাইশে ডিসেম্বর বাংলা হিসেবে বারোশো ষাট সালের আটই পৌষ বৃহস্পতিবার রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং শ্যামাসুন্দরী দেবীর সংসারে জন্মগ্রহণ করেন সারদামণি। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সহধর্মিণী মা সারদা যখন দক্ষিণেশ্বরে থাকতেন তখন তাঁদের থাকার জায়গা ছিল উত্তর দিকে নহবতের ঘরে। শ্রীমা নহবতের যে ঘরটিতে থাকতেন তাঁর বিবরণ থেকে আমরা বুঝতে পারব যে তিনি কত কষ্টসহিষ্ণু ছিলেন যা সাধারণের চিন্তাভাবনার বাইরে। দক্ষিণেশ্বরের রানি রাসমণি দেবী দুটি নহবত তৈরি করিয়েছিলেন। একটি দক্ষিণ দিকে আরেকটি উত্তর দিকে। আর রাসমণির অন্তরের ইচ্ছা ছিল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মা ভবতারিণীকে ভারতীয় সংগীতের বিভিন্ন রাগ-রাগিণী শোনাবার, তাই এই দুটি নহবতখানা। এই নহবতের দক্ষিণ দিকে সানাই নাগারা বাজানো হত।
আরেকটিতে শ্রীমা সারদা দেবী যখন দক্ষিণেশ্বরে থাকতেন তখন তাঁর থাকার জায়গা মিলেছিল। নহবতের ঘরটির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ছিল সমান সাত ফুট ন’ ইঞ্চি। উচ্চতা ছিল ন’ ফুট তিন ইঞ্চি। ঘরের যাতায়াতের দরজাটি ছিল দু’ ফুট দু’ ইঞ্চি চওড়াতে আর উচ্চতা ছিল চার ফুট দুই ইঞ্চি।
শ্রীমা ছিলেন উচ্চতায় আনুমানিক পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। ভাবলে অবাক হতে হয় যে, ওই চার ফুট দুই ইঞ্চির উচ্চতার দরজা দিয়ে শ্রীমা যাতায়াত করতেন।
শ্রীমায়ের আত্মকথা থেকে জানা যায়— ‘প্রথম প্রথম ঘরে ঢুকতে মাথা ঠুকে যেত। একদিন তো কেটেই গেল। শেষমেশ অভ্যাস হয়ে গেছিল। দরজার সামনে গেলেই মাথা নিচু নিয়ে আসত। কলকাতা হতে সব মোটাসোটা মেয়ে লোকেরা দেখতে আসত। দরজার দু’দিকে হাত দিয়ে বলত আহা কী ঘরেই আমাদের সতীলক্ষ্মী আছেন গো যেন বনবাস গো…’।
নহবতের সম্বন্ধে শ্রীমা আরও বলেছেন— ‘(নহবতের) নিচের একটু খালিঘর, তা আবার জিনিসপত্রতে ভরা। মাথার উপরের সব শিকে ঝুলছে। রাতে শুয়েছি, মাথার উপরে মাছের হাঁড়ি কলকল করছে— ঠাকুরের জন্য শিঙি মাছের ঝোল হতো কি’না…’।
সবার বিছানা কীরকম ছিল বলতে গিয়ে মা বলছেন— ‘ঠাকুর কতগুলো পাট এনে আমায় দিয়ে বললেন— এগুলি দিয়ে আমায় শিকে পাকিয়ে দাও, আমি সন্দেশ রাখব, লুচি রাখব ছেলেদের জন্যে।’
‘আমি শিকে পাকিয়ে দিলুম আর পাটের ফেঁসোগুলো দিয়ে থান ফেঁড়ে মাথার বালিশ করলুম। চটের উপর পটপটে মাদুর পাততুম আর সেই ফেঁসোর বালিশ মাথায় দিতুম।’
ভাবলে অবাক হতে হয় কী কৃচ্ছ্রসাধন! কত আত্মত্যাগ! চাহিদাহীন, প্রত্যাশাহীন জীবন। বিশ্বজননী শ্রীশ্রী মা, তিনি সম্পূর্ণ অনাড়ম্বর এক জীবন কাটিয়েছেন তাঁর জীবদ্দশায়। এইখানেই তাঁর অসাধারণত্ব। এইখানেই তাঁর বিশেষত্ব।
পরবর্তী সময়ে ঠাকুরের নির্দেশ অনুযায়ী কামারপুকুরে মাটির চালের ঘরে থেকে শাক গুনে মোটা চালের ভাত খেয়েও দিন যাপন করেছেন।
মায়ের অনুযোগহীন, অভিযোগহীন, অভিমানহীন অনাড়ম্বর জীবনে একটাই পরমব্রত ছিল সেটা হল মানবকল্যাণ এবং মানবসেবা। তাঁর সন্তানদের দুঃখ কষ্টে, তাদের মাতৃস্নেহে পরমাত্মীয়ের মতো কাছে টেনে নেওয়া।
যেকোনও বিপদে, বিপর্যয়ে মা হিসেবে তাদের পাশে থাকা। সেখানে কোনও জাত ধর্ম, অস্পৃশ্যতার বাছবিচার ছিল না। কোনও রকমের ভেদাভেদ জ্ঞান বা কোনও প্রকারের উন্নাসিকতাও ছিল না।
নিজের জীবনযাপন দিয়ে সেই শিক্ষা এবং আদর্শ তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাই তো তিনি বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গে থেকো, ভাল হতে চেষ্টা করো, ক্রমে সব,সব হবে।’ লৌকিক জীবনে সারদা দেবীর স্বামী-শ্বশুর সেবা করেছেন, ভাইদের সংসার সামলেছেন, অর্থলোভী ঈর্ষাপরায়ণ, অর্ধ-উন্মাদ পরিজনদের দেখভাল করেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য রান্না করেছেন, শিষ্যদের চা তৈরির জন্য পাড়া ঘুরে ঘুরে দুধ জোগাড় করেছেন, শেষরাতে শয্যাত্যাগ, গঙ্গাস্নান, জপ ধ্যান নহবতের ছোট্ট পরিসরে রান্না, ভক্তদের সেবা যত্ন, অতিথি অভাগতদের পরিচর্যা, শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য জিওল মাছের সংরক্ষণ সবকিছু সযত্নে করেছেন মা সারদা।
নিজের দৈনন্দিন সুবিধা-অসুবিধা, দুঃখ-কষ্ট, শারীরিক ক্লেশ এইসব নিয়ে কখনও একটি বাক্যও ব্যয় করতেও দেখা যায়নি তাঁকে।
আরও পড়ুন-বিক্রমগড় ঝিলের দ্বিতীয় দফার সংস্কার শুরু হচ্ছে
এমনই অনুযোগহীন নিরহঙ্কারী মাটির মানুষ ছিলেন তিনি। জীবনের ত্যাগ, সত্যানুরাগ এবং অকৃত্রিম ভালবাসা যে যেকোনও জীবনকে সুষমামণ্ডিত করে তুলতে পারে এ কথা তিনি বারবার বলেছেন এবং নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়েছেন। তাঁর সরল এবং অকপট ভালবাসা উৎসারিত হয়েছে সকলের প্রতি। তাই তো তিনি বলেছেন— ‘যে এসেছে যে আসেনি যে আসবে— সকলের জন্যই রইল তা।’ তাঁর জীবন কতকটা নীরব প্রার্থনার মতো। তাঁর সব অভিজ্ঞতার মূলে আছে এক মঙ্গল বিধানের নির্ভরতা। জীবনের যেকোনও জটিল পরিস্থিতিতে সহৃদয় মীমাংসা করে দিতে মা সারদা পারতেন। চলমান জীবনের পরীক্ষায় তিনি বলেছেন, ‘যখন যেমন তখন তেমন যেখানে যেমন সেখানে তেমন যাকে যেমন তাকে তেমন।’
শ্রীমা ভাল রাঁধতে জানতেন। তাঁর রান্নার বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি তরকারিতে নুন-ঝাল-মশলা একটু কম দিতেন। শ্রীমায়ের হাতের কলাইয়ের ডাল, পোস্ত-চচ্চড়ি, মাছচাটুই সবার অত্যন্ত পছন্দের ছিল। কম ঝাল-মশলায় এমন সুস্বাদু রান্না যেন স্বর্গীয় কিছু! শুধু ঠাকুরই নন শ্রীমা জানতেন সমস্ত ভক্তের পছন্দ-অপছন্দের কথা। নরেন্দ্রের পছন্দ মোটা মোটা রুটি আর ঘন ছোলার ডাল। তাই নরেন্দ্র দক্ষিণেশ্বর এলে শ্রীমা নরেন্দ্রর জন্য ছোলার ডাল চড়িয়ে ময়দা মাখতে বসতেন। আবার পরিবেশনের ব্যাপারে শ্রীমায়ের কিছু নিয়ম ছিল। যেমন আসন, শালপাতা সব পরিষ্কার হওয়া চাই। শালপাতায় লেগে থাকা জল তিনি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে রাখতেন। যাতে রুটি পাতায় লেগে না যায়। খাবার পরিবেশনের পর কারও আসতে দেরি হলে তিনি আঁচল দিয়ে মাছি তাড়াতেন। ভক্তদের খাওয়ার সময় তিনি কাছে বসে খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন কেমন হয়েছে, কার পাতে ভাত নেই। রুটি শেষ, তরকারি কম ইত্যাদি কোনও কিছুই নজর এড়াত না। যার যেমন রুচি-পছন্দ তাকে সেই বুঝে যত্ন করে খাওয়াতেন। খাওয়ার পরে তিনি কাউকে উচ্ছিষ্ট তুলতে দিতেন না। কেউ খাওয়ার পরে এঁটো শালপাতা তুলে নিয়ে যাচ্ছে দেখলে তাকে বাধা দিয়ে বলতেন— ‘থাক লোক আছে।’ দেখা যেত সেই লোক শ্রীমা স্বয়ং! তাঁকে সকল বর্ণের উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করতে দেখে কেউ কেউ অভিযোগ করে বলতেন— ‘তুমি বামুনের মেয়ে, গুরু ওর, তোমার শিষ্য তুমি ওদের এঁটো নাও কেন?’
শ্রীমা উত্তর দিতেন, ‘আমি যে মা গো। মায়ে ছেলের করবে না তো কে করবে? একবার জয়রামবাটিতে শ্রীমায়ের ভাইঝি নলিনী এক মুসলমান মজুরকে খেতে দিচ্ছেন। পরিবেশনের সময় নলিনী উঠোন থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে খাবার দিচ্ছেন দেখে শ্রীমা বলে উঠলেন, ও কী রে ওভাবে খেতে দেয় নাকি? এই বলে শ্রীমা নলিনীর হাত থেকে থালা নিয়ে নিজেই পরিবেশন করলেন। শেষে যখন তিনি মজুরের উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করতে গেলেন তখন নলিনী ভয়ে চিৎকার করলেন— ‘পিসিমা তোমার জাত যাবে যে?’
সঙ্গে সঙ্গে শ্রীমা বললেন, ‘ছেলের এঁটো পরিষ্কার করলে জাত যায় নাকি!’
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
জগতের বিপথগামী মানুষ অথবা অসহায় আতুরজনদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়েছেন।
দেখিয়েছেন আশার আলো। কুলি, মজুর, মুচি মেথর, জেলে মেছুনি, সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী, ডাকাত, বারাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা, বিপ্লবী-সহ সমাজের সবস্তরের মানুষই তাঁর ভাল স্নেহ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়নি।
ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব যথার্থই বলেছিলেন, ‘সারদা সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী।’