বাংলার রকস্টার রূপম ইসলাম। ‘ফসিলস’-এর মূল গায়ক। এর বাইরেও আছে আলাদা পরিচয়। একক গায়ক হিসেবে। লেখক হিসেবে। ইতিমধ্যেই বেরিয়েছে তাঁর ১০টি বই। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দ্বিতীয় কবিতার বই ‘নীলাভ এক, নিদ্রাবন্দর’। সেই উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর, বাইপাস সংলগ্ন কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি-র অ্যাম্ফিথিয়েটারে আয়োজিত হয়েছে এক জমজমাট অনুষ্ঠান। গায়কের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন আর জে দীপ। রূপম নিজে জনপ্রিয়। জনপ্রিয় তাঁর বেশকিছু গানও। শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। জনপ্রিয়তা কিন্তু নানা সময় বিড়ম্বনায় ফেলে মানুষকে। কীভাবে? রূপম বললেন, ‘সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের একজন তারকাকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। জনপ্রিয়তার কারণেই। মৃত্যু হয়েছে একজন ভক্তের। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এটা কিন্তু তৈরি হয়েছে মানুষের ভালবাসা থেকেই। ফলে কোনটা যে ভাল, কোনটা যে খারাপ, তার হিসাব করা মুশকিল।’
পারফর্মার হিসেবে দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে পারেন তিনি। সেটা শুধু মঞ্চে থেকেই নয়, মঞ্চের বাইরে থেকেও। রূপম জানালেন, সমাজ মাধ্যমেও হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তার জন্য আমাকেও নানারকম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। আসলে জীবনটাই তো বিপজ্জনক। আরও বললেন, ‘একটা সময় উৎসব-বিরোধী ছিলাম। পরে উপলব্ধি করেছি, উৎসবে মানুষের চেহারা পাল্টে যায়। মানুষ একটা অদ্ভুত জিনিস খুঁজে পায়, যেটা আসলে পৃথিবীতে নেই।’
আরও পড়ুন-নান্দীকার জাতীয় নাট্য উৎসব
গান শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা নয়, স্বচ্ছলতাও দিয়েছে তাঁকে। তবু নিজেকে দরিদ্র মনে হয় তাঁর। কেন? রূপমের ব্যাখ্যা, ‘দারিদ্র অনেক রকমের হয়। যেমন, আমার নিজের কোনও স্বাধীনতাই নেই। ইচ্ছেমতো বাইরে বেরোতে পারি না। বাড়িতেই থাকি। এটাও কিন্তু এক ধরনের দারিদ্র্য। মনের মতো খাবার খেতে পারি না। শরীরের কথা ভেবে। পেশাগত কারণে। এও এক ধরনের দারিদ্র্য। কোনওভাবেই মুক্ত নই আমি। ঘেরাটোপে বাঁধা। যখন গাড়ি নিয়ে বের হই, তখনও কাঁচ ঢেকে নিতে হয়। এর থেকে বড় দারিদ্র্য, দুরবস্থা কী হতে পারে? জনপ্রিয়তা এইভাবেই মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলে।’ তিনি খাঁচা ভাঙতে চান। মাঝেমধ্যে ভাঙেনও। গানবাজনার মাধ্যমেই এই ভাঙন তাঁর কাছে ধরা দেয়।
আরও পড়ুন-ফাইনালে ভারত
কবি জয় গোস্বামীর প্রশংসা এবং আশীর্বাদ পেয়েছেন রূপম। ‘মেঘবালিকা’র কবি পাঠ করেছেন তাঁর কবিতা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখানো হয়েছে সেই ভিডিও। দীপের সঙ্গে আলাপচারিতার পর হাতে গিটার তুলে নিয়েছেন রূপম। গলা ছেড়ে ধরেছেন গান। একে একে শুনিয়েছেন ‘আমি তো দেখিনি ভোর হওয়া কাকে বলে’, ‘এক শান্ত নদীর কথা ভাবো’, ‘ভুলে যায়’, ‘তোকে ধ্বংস করতে আসছে’, ‘ভাষা কোনো অবোধ শিশু নয়’, ‘বই চোর’ প্রভৃতি জনপ্রিয় গান। মঞ্চে তাঁর পরিবেশনা দেখে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকরা ভেসে গিয়েছেন সুরের মূর্ছনায়। গান থেকে খুঁজে পেয়েছেন প্রেম ও প্রতিবাদের ভাষা। কমবয়সিদের পাশাপাশি দর্শকাসনে ছিলেন কয়েকজন প্রবীণও। তাঁরাও উপভোগ করেছেন রঙিন সন্ধ্যাটি।