প্রতিবেদন : বাংলাদেশ সীমান্তে এখনও টেনশন অব্যাহত। মেখলিগঞ্জ থেকে মালদহ— থমথমে সীমান্ত এলাকা। বিএসএফের নজরদারিতে শৈথিল্য ও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বেনিয়ম প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে সীমান্ত এলাকার সুরক্ষার বিষয়টি। অরক্ষিত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলেও এবার বিজিবির বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিএসএফ কোনও কোনও ক্ষেত্রে রণভঙ্গ দিলেও এপার বাংলার গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে সীমান্ত পাহারায় রুখে দাঁড়াচ্ছেন। কার্যত এ রাজ্যের বাসিন্দাদের মনের জোর আর সংঘবদ্ধ হওয়ার কারণেই কিছুটা হলেও কাজ হচ্ছে। বেশিরভাগ জায়গাতেই পরিস্থিতির এখনও উন্নতি হয়নি। বালুরঘাট-হিলি সীমান্তেও পরিস্থিতি একই রকম প্রায়। উন্মুক্ত সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় কৃষিজমিতে বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল কুচলিবাড়ি গ্রামে। বিএসএফের ০৬ ব্যাটেলিয়ান শনিবার দিনভর কড়া নিরাপত্তায় ঘিরেছে গোটা এলাকা৷ জানা গেছে শনিবার নতুন করে বেড়া দেওয়ার কাজ হয়নি। তবে রবিবার ফের ভারতীয় কৃষকরা এই বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এপারে মেখলিগঞ্জ আর ওপারে আছে বাংলাদেশের দহগ্রাম অঙ্গারপোতা গ্রাম। বাংলাদেশের এই গ্রামের বাসিন্দারা তিন বিঘা করিডর হয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করেন। বাংলাদেশের গ্রামে সীমান্ত এলাকা ঘিরে রেখেছে বিজিবি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে কাঁটাতারহীন অবাধ এলাকা৷ কুচলিবাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সীমান্তে কাঁটাতার না থাকায় অনায়াসে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা যাতায়াত করে ভারতীয় জমিতে। এমনকী রাতের অন্ধকারে ভারতীয়দের গরু নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। বিএসএফকে এ-ব্যাপারে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই নিজেরাই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন-সেবাশ্রয়ে ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ পেলেন চিকিৎসা! ডাক্তার-স্বেছাসেবকদের ধন্যবাদ সাংসদের
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু অংশ কাঁটাতারে ঘেরা না থাকলেও মূলত সীমান্তের বেশিরভাগ অংশই কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। কাঁটাতারের ওপারেও রয়েছে ভারতীয় ভূখণ্ড। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের ৫নং ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবরামপুর, চকরাম, হিলি ব্লকের ধলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঈশ্বরপাড়া, শ্রীরামপুর, উত্তর জামালপুর, পাঞ্জুল গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম আপতর, হিলি গ্রাম পঞ্চায়েতের হাঁড়িপুকুর-সহ একাধিক জায়গায় কাঁটাতারের ওপারে রয়েছে ভারতীয় কৃষকদের কৃষিজমি। যে জমিতে চাষাবাদ করেন সীমান্ত-ঘেঁষা গ্রামের কৃষকরা। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁদের চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন-মাসের পর মাস বান্ধবীর দেহ রেখে দিল ফ্রিজে! ভয়াবহ ঘটনা বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে
মালদহের শুকদেবপুর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ এখন আর হবে না, প্রেস বিজ্ঞপ্তি করে বিএসএফের তরফ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে। ফলে উন্মুক্ত অবস্থায় থাকবে শুকদেবপুরের ১২০০ মিটার সীমান্ত এলাকা। বর্তমানে এই এলাকায় বাড়ানো হয়েছে বিএসএফ জওয়ানের সংখ্যা। এমনকী বাড়ানো হয়েছে নজরদারিও। ঘটনার পর থেকে শুকদেবপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কমেছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। এলাকার অভিভাবকেরা ভয়ে ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন শুকদেবপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিদ্যুৎ পাল। তিনি জানান, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএসএফ বিজিবির মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাই ভয়ে গ্রামবাসীরা ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না।