গঙ্গাসাগর বারবার

বহু ঘটনার সাক্ষী গঙ্গাসাগর। কিছু ঘটনা চমকপ্রদ। রীতিমতো বিস্ময় জাগায়। মেলায় ঘটে নানা সংস্কৃতির মিলন। মহামানবের সাগরতীরে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর ভিড়ে ভারতদর্শন হয়ে যায়। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

পবিত্র তীর্থক্ষেত্র
মানুষ। মানুষ। কাতারে কাতারে মানুষ। পাশে মানুষ। সামনে মানুষ। পিছনে মানুষ। বিস্তীর্ণ তট। ঢল নামিয়েছে গোটা ভারতবর্ষ। নানা প্রদেশ। নানা ভাষা। নানা পরিধান। মিলেমিশে একাকার। এ যেন মহামানবের সাগরতীর। সাধু-সন্ন্যাসী যেমন আছেন, তেমনই আছেন গৃহী। নারী এবং পুরুষ। সকলেই এসেছেন পুণ্য লাভের আশায়। মাহেন্দ্রক্ষণে সাগরসঙ্গমে একটা ডুব। ধুয়ে দেবে সমস্ত পাপ। এনে দেবে পুণ্য। প্রত্যাশা এইটুকুই। পৌষ সংক্রান্তির নরম ভোরে কনকনে ঠান্ডা বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এই হল গঙ্গাসাগরের মাহাত্ম্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র গঙ্গাসাগর। বছর বছর এই দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয় মেলা। সূচনায় বর্ণিত ছবিটি তারই।
রামায়ণ ও মহাভারতে উল্লেখ
গঙ্গাসাগর বাংলার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম মহাতীর্থ। লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটে। এর উল্লেখ ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতেও পাওয়া যায়। প্রশ্ন হল, কীভাবে তীর্থস্থানে পরিণত হল গঙ্গাসাগর? কীভাবে সূচনা হয়েছিল মেলার? সনাতন ধর্মানুসারে, একবার রাজা সাগর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র সাগর রাজার অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করে বেঁধে রাখেন পাতাললোকে। সাগররাজ যখন তাঁর অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া খুঁজতে আসেন, তখন তাকে খুঁজে পান কপিলমুনির আশ্রমের পাশে। রাজা সাগর মনে করেন, কপিলমুনি তাঁর যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করেছেন। রাজার মনের কথা জানতে পেরে কপিলমুনি ক্রুদ্ধ হন এবং রাজার ৬০ হাজার পুত্রকে ভস্মীভূত করেন। এরপর রাজা সাগরের বংশের পরবর্তী প্রজন্ম ভগীরথ, মহাদেবের আরাধনা করেন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করে গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। গঙ্গার সেই পবিত্র জলস্পর্শে সাগর বংশের ভস্মীভূত সন্তানরা নিজেদের জীবন ফিরে পান এবং তাঁরা নির্দ্বিধায় স্বর্গে গমন করেন। সেই কারণেই জায়গাটা পবিত্র মনে করা হয়। ধীরে ধীরে পরিণত হয় পবিত্র তীর্থস্থানে।

আরও পড়ুন-নবনীতার নারী-ভাবনা

এক মহান ঐতিহ্য
প্রাচীন লোককথা অনুযায়ী, গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির মন্দির প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন রানি সত্যভামা। ১৪৩৭ সালে মন্দিরের বর্তমান আরাধ্য মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন স্বামী রামানন্দ। এ এক মহান ঐতিহ্য। মন্দির ঘিরে বসে মেলা। স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, অতীত দিনে সাগরদ্বীপের জমিদার ছিলেন যদুরাম। মেদিনীপুর থেকে এসেছিলেন। যদুরামই রামানন্দী সাধুদের মন্দিরের দায়িত্বে প্রথম নিয়ে আসেন। কিছুদিন বাদে সেই সাধুরা দাবি করেন, রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভগীরথের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কপিলমুনিও স্বয়ং বিষ্ণু। তাঁর বাবা কর্দম মুনি বিষ্ণুকে পুত্র হিসাবে চেয়েছিলেন। ফলে বিষ্ণু কপিল হিসাবে জন্ম নেন। বিষ্ণু ও রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষদের এই মন্দিরের অধিকারী তাই তাঁরাই, জমিদার নন। যদিও মনে করা হয়, এর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনি না থাকলে লাট অঞ্চলে জঙ্গল সাফ করে পরবর্তী কালে জমিদারি, কপিলমুনি কিছুই ভাবা যেত না।
যুবকের ঘরে ফেরা
নানা ঘটনার সাক্ষী সাগরতট। জনসমুদ্রে মানুষের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা যেমন আছে, তেমনই আছে হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার ঘটনাও। বিহারের মুকেশের কথাই ধরা যাক। এসেছিলেন গঙ্গাসাগর মেলায়। কথা ছিল মেলা শেষে পরিবারের সঙ্গে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু সে আর হল কই! দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। তাঁকে ফেলে চলে যান বাকিরা। তবে গঙ্গাসাগরে এসে পুণ্য অর্জন করেছিলেন মুকেশ। দেরিতে হলেও ফল পেয়েছিলেন। কীভাবে? কলকাতা থেকে একদল পশুপ্রেমী যুবক দ্বীপাঞ্চলে পথ-কুকুরদের খাবার দিতে এসেছিলেন। কিছু ভবঘুরে মানুষ ওই খাবার কুকুরদের থেকে কেড়ে নিজেরাই খেতে শুরু করেন। যা দেখে ওই যুবকেরা আবার কলকাতায় ফিরে ভবঘুরে মানুষগুলোর জন্য খাবার ও কম্বল নিয়ে আসেন। তাঁরা জানতে পারেন স্থানীয় এক ব্যক্তি একজন ভবঘুরেকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। ওই ভবঘুরে তাঁর নিজের পরিচয় ভুলে গিয়েছিলেন। তখন এক পশুপ্রেমী যুবক ভবঘুরে যুবকের পরিচয় জানতে চেয়ে নামখানার বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হ্যাম রেডিওর সৌজন্যে জানা যায়, বিহারের ভাগলপুর জেলায় ব্রহ্মচারী গ্রামে ওই যুবকের বাড়ি। নাম মুকেশ যাদব। প্রায় ১৪ বছর আগে গঙ্গাসাগর মেলায় এসেছিলেন তিনি। তাঁদের পাড়ার কিছু লোকজনের সঙ্গে। পথ হারিয়ে মুকেশ দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তারপর থেকে আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা গঙ্গাসাগর মেলায় অনেকবারই এসেছেন। মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে মুকেশের নাম। তবে শূন্য হাতেই তাঁদের ফিরতে হয়েছে। শেষমেশ তাঁকে ফিরে পাওয়া যায়। হারিয়ে যাওয়ার ১৪ বছর পর। গঙ্গাসাগরে ডুব দিয়েছিলেন মুকেশ। তিনি মনে করেন, আত্মীয়- পরিজনদের ফিরে পেয়েছেন পুণ্যার্জনের ফলে।
স্বামী-স্ত্রীর দেখা
সাগরে হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীকে ফিরে পেয়েছিলেন স্বামী। কয়েক বছর আগের ঘটনা। ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা, ২৭ বছর বয়সি গুবারি তাঁর ১১ বছরের ছেলে এবং স্বামী ললিতের সঙ্গে কলকাতায় আসেন।
চিকিৎসার জন্য। শহরের ভিড়ে হারিয়ে যান স্বামী-স্ত্রী। দমদম বিমানবন্দরের সামনে থেকে গুবারিকে উদ্ধার করে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় পুলিশ। মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ওই মহিলা পুলিশকে তাঁর বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেননি। তবে একটা সময় গুবারি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন। পুলিশকে তাঁর বাড়ির ঠিকানা বলেন। পুলিশ মহিলার বাড়ি খুঁজতে শুরু করে। এরই মধ্যে এসে যায় গঙ্গাসাগর মেলা। সেখানে যান গুবারি। আচমকাই স্বামী ললিতের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যায়। ১৩ বছর পর মহামানবের সাগরতীরে মহামিলন ঘটে দু’জনের।

আরও পড়ুন-দ্বৈত ও অদ্বৈত বেদান্তের মাঝে বিবেকানন্দ সেতু

দ্বিতীয় বিয়ের লোভে
কয়েক বছর আগের ঘটনা। দ্বিতীয় বিয়ের লোভে স্ত্রীকে সাগর মেলার ভিড়ে ফেলে পালিয়েছিলেন স্বামী। বিহারের পশ্চিম নওয়াদা জেলার বাসিন্দা তিনি। মহা সমস্যায় পড়েন মহিলা। ইতস্তত ঘুরতে থাকেন। উপায় না দেখে একটা সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই মহিলা। পরে হ্যাম রেডিওর সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনা মেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল।
সাধুর মুখোমুখি
আরও একটি ঘটনার সাক্ষী গঙ্গাসাগর। অশক্ত শরীরে প্রতি বছর সাগরদ্বীপের এই মেলায় আসতেন অন্নপূর্ণা দেবী। একমাত্র পুত্র অপূর্বর হাত ধরে। এইভাবেই কেটে যায় বছর কুড়ি। বেড়েছে বয়স। তবু সত্তরোর্ধ্ব অন্নপূর্ণা দেবীর নিয়মের অন্যথা হয়নি। পুণ্যলাভের মোহ তাঁর নেই। নাস্তিক না হলেও, চরম আস্তিক বলতে যা বোঝায়, ছিলেন না কোনওকালেই। তবু বছরে একবার গঙ্গাসাগর মেলায় আসতেই হত তাঁকে। ঘুরে দেখতেন সাধুদের আখড়া। সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রতিও যে তাঁর তীব্র আকর্ষণ, তা নয়। খুঁজে খুঁজে একজন সাধুবাবার সামনেই তিনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। চুপচাপ। অপলক। তারপর তাঁকে প্রণাম করে ধীর পায়ে ফিরে যেতেন। যদিও সাধুবাবা ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ভক্তিভরে কে প্রণাম রেখে গেলেন, তাকিয়েও দেখতেন না।
শেষ যেবার এসেছিলেন অন্নপূর্ণা দেবী, অন্যবারের মতো সেবারও সমুদ্রতীরে জনসমুদ্র। সাধুদের আখড়ায় ঘুরে ঘুরে তিনি খুঁজে চলেছিলেন একজনকে, সেই সাধুবাবাকে। একদিন, দু’দিন, তিনদিন। কিন্তু দেখা মিলল না তাঁর। অন্নপূর্ণা দেবী স্মরণ করেছিলেন কুড়ি বছর আগের একটি বিশেষ মুহূর্ত। গৃহত্যাগের সময় অমরেন্দ্র বলেছিলেন, ‘দেখা হবে। বছরে একবার। গঙ্গাসাগর মেলায়।’ সচ্ছলতা ছিল সংসারে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সন্ন্যাসজীবন বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অমরেন্দ্র। ততদিনে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে পুত্র অপূর্ব। স্বামীকে বাধা দেননি অন্নপূর্ণা। ‘আর কোনও দিন দেখা হবে না?’ স্ত্রীর কান্নাভেজা এই প্রশ্নের উত্তরে অমরেন্দ্র বলেছিলেন উপরের কথাগুলো। সেইসঙ্গে এও বলেছিলেন, ‘যদি কোনও দিন আমার দেখা না পাও, বুঝবে আমি অমৃতলোকে যাত্রা করেছি।’
ভেঙেছে মেলা। ফেরার পালা। কুড়ি বছরে প্রথমবার সাগরে ডুব দিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা দেবী। লালপাড় শাড়ির বদলে জড়িয়ে নিয়েছিলেন সাদা থান।
বাঘে খেয়েছে
বাংলা সাহিত্যের পাতায় রয়েছে গঙ্গাসাগর মেলার উল্লেখ। বড়ু চণ্ডীদাসের রাধা সাগরসঙ্গমে আত্মহত্যা করতে চায়। লিখেছেন ‘সাগরসঙ্গমজলে ত্যজিব মো কলেবরে।’ পুণ্যস্থান হতে পারে, কিন্তু তখন স্পষ্টত মেলা ছিল না। মেলার ভিড়ে রাধা কীভাবে আত্মহত্যা করবে? ১৮৬৬ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসে সাগর-ফেরত যাত্রী ও মাঝিরা নবকুমারকে জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যায়। তাদের ধারণা, নবকুমারকে বাঘে খেয়েছে। প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কারকে ত্যাগ করে বারংবার নতুন ধর্মের কথা বলে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রথম উপস্থাপন এই উপন্যাস। সেখানে নবকুমার তীর্থযাত্রার কথা ভাবে না, উলটে ‘রঘুবংশম্’ আওড়ায়! প্রকৃতি নিয়ে রোমান্টিকতাও শেক্সপিয়র, শেলি, কিট্স ও ইংরেজি সাহিত্যের অবদান। এর তেরো বছর আগে, ১৮৫৩ সালে ‘সংবাদ প্রভাকর’ খবর করেছে ‘সাগর হইতে প্রত্যাগত ব্যক্তির দ্বারা অবগত হইলাম… টৌন মেজর সাহেব চারিটা তোপ ও এক দল সৈন্য-সহ তথায় উপস্থিত থাকিয়া অবিশ্রান্ত রূপে তোপ করাতে ব্যাঘ্রের ভয়বৃদ্ধি হয় নাই, কেবল তিন জন নাবিক বনমধ্যে কাষ্ঠ কাটিতে গিয়া উক্ত জন্তুর দ্বারা হত হইয়াছে।’

আরও পড়ুন-স্বামীজির প্রদর্শিত পথে গড়ে উঠুক যুবসমাজ

চল তোরে দিয়ে আসি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেবতার গ্রাস’। সন্তান বিসর্জন। ‘চল তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে’ পড়লেই কাঁটা দেয় গায়ে। কোন তীর্থক্ষেত্রে লোকে স্বেচ্ছায় সন্তানকে ভাসিয়ে দেয়? লর্ড ওয়েলেসলি না থাকলে এই প্রথাটিও রদ হত না। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পদসঞ্চার’ উপন্যাসে মারাত্মক এক জায়গা আছে। পর্তুগিজ আক্রমণের পটভূমিকায় উপন্যাস, নায়িকা গত দু’-তিন বছর ধরে কথা বলে না, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তান্ত্রিক কুলপুরোহিত এক পর্তুগিজ কিশোরকে বলি দিয়েছিলেন, তার পর থেকেই নীরব হয়ে গিয়েছে সেই মেয়ে। গঙ্গাসাগরে দেখা গেল, সন্তান ভাসাতে এসেছেন এক রানি। পরদিন মূক সেই মেয়ে ‘আঁ আঁ’ চিৎকার করে ওঠে। সাগরের স্রোতে তার সামনে এক শিশুর ছিন্ন শরীর, গঙ্গায় অর্ঘ্য দেওয়া হয়েছিল, তার পর মাছেরা খুবলে খেয়েছে। নরবলি আর সন্তান বিসর্জনকে পাশাপাশি রেখে দিয়েছিলেন লেখক। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সাগরসঙ্গম’ গল্পে মুখুজ্যেবাড়ির আচারসর্বস্ব বিধবা দাক্ষায়ণী প্রতিবেশীদের সঙ্গে চলেছেন সাগরস্নানে। যৌনকর্মীদের একটি দলও সেই নৌকায়, তাদের মেয়েটি মিথ্যে কথার ঝুড়ি। বিধবা ব্রাহ্মণীর গা রাগে রি-রি করে ওঠে। গল্পের শেষে মেয়েটি গঙ্গাসাগরের হাসপাতালে জ্বরে মারা যায়। ডাক্তার তাকে দাক্ষায়ণীর মেয়ে ঠাওরান, বামুনের বিধবাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘স্বামীর নাম?’ আচারসর্বস্ব বিধবা বলেন, ‘দিন, লিখে দিচ্ছি।’ গঙ্গাসাগরই মহিলাকে ব্রাহ্মণত্বের সংস্কার ছাপিয়ে মানুষের ধর্মে উত্তীর্ণ করে।
সংস্কৃতির মহামিলন
একটি প্রাচীন কাল আছে গঙ্গাসাগরের। তখন আলো ছিল না, রাস্তাঘাট এত উন্নত ছিল না। একটা সময় প্রাইভেট বাসে যাত্রীদের বসার জন্য মেঝেতে খড় বিছিয়ে দেওয়া হত। রেক্সিন-আঁটা সিটে বসলে ১০ টাকা ভাড়া, খড়ের মেঝেতে বসলে ৭ টাকা। জেটিঘাট পৌঁছতে ভরসা ভ্যানরিকশা। এখন ধর্মতলা, বাবুঘাট থেকে বাস সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে লট নম্বর ৮-এর জেটিঘাটে। কাকদ্বীপ, নামখানা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন। ঘাটে যাওয়ার জন্য ম্যাজিক থেকে টোটো, সবই মজুত। ২৫-৩০ বছর আগের প্রাক্-আধুনিক গঙ্গাসাগরে ছিল না বিদ্যুৎ। মেলার সময় চলত ডিজেল-চালিত জেনারেটর সেট। এখন আমূল বদলে গেছে। একটা সময় পথ ছিল দুর্গম। সুন্দরবন অঞ্চল। বিপদ মাথায় যেতে হত। তখন বলা হত ‘সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার’। এখন কিন্তু বারবার যাওয়া যায়। বর্তমান রাজ্য সরকার তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে ঘটে নানা সংস্কৃতির মহামিলন। কপাল ঠুকে পৌঁছে যান মহামানবের সাগরতীরে। ছোট্ট পরিধির মধ্যে হাসতে হাসতে হয়ে যাবে ভারতদর্শন।

Latest article