গওহর জান, এক নক্ষত্রের নাম

নিশ্চিতভাবেই অসাধারণ সুন্দরী এবং সঙ্গীতপ্রতিভার অধিকারিণী ছিলেন শিল্পী। যে কোনও শিল্পী, তিনি যদি এই দুটি আশীর্বাদ লাভ করেন, তিনি এক অতুলনীয় শিল্পীর মর্যাদা লাভ করতে সমর্থ হন। তেমনই শিল্পী হলেন গওহর জান, যিনি এই মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তাঁর বৈচিত্রপূর্ণ জীবনকথা জানাচ্ছেন শঙ্কর ঘোষ

Must read

মুখবন্ধ
প্রায় ৪২৫ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করার পর একটি জুড়ি গাড়ি বেনারস থেকে কলকাতায় প্রবেশ করল। উত্তর কলকাতার চিৎপুর অঞ্চলের কলুটোলা নামে একটি জায়গায় এসে সেই জুড়ি গাড়িটি থামল। কাছাকাছি বউবাজার অঞ্চলের বাইজিদের কোঠা। কলকাতার এই চিৎপুর অঞ্চল ছিল ১০-১২ বছর বয়সি একটি মেয়ের কাছে তার স্বপ্নের শহরে প্রথম পদক্ষেপ। এই মেয়েটিই ধীরে ধীরে বিখ্যাত গায়িকা হয়ে উঠেছিলেন। চতুর্দিকে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর নাম গওহর জান।
শুরুর কথা
ধনী শিল্পবোদ্ধারা মালকাজানের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন। কারণ বেনারসের এই নামী তরুণী গায়িকা খুব শিগগির কলকাতার বাবুদের বাড়ি থেকে আসরের আমন্ত্রণ পেতে শুরু করে দিয়েছিলেন। শহর জুড়ে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পর মালকাজান এই ধরনের মুজরায় ছোট্ট মেয়ে অর্থাৎ গওহরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে শুরু করলেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি আউধের নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের দরবার থেকে আমন্ত্রণ পেলেন। সেই সভায় মালকার গায়কিতে নবাবের চোখে জল এসে গেল। তিনি তখনই তাঁকে সভাগায়িকা হিসেবে নিযুক্ত করলেন। সেদিনের দরবারে উপস্থিত ছিলেন বিনোদাদিন মহারাজ, নবাবের সভার নৃত্যশিল্পীর পুত্র। কিশোরী গওহরের প্রতিভা বিনোদাদিনের নজর কেড়েছিল। মালকাকে তিনি গওহরকে শিক্ষার্থী হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলেন। মা-মেয়ের আনন্দ যেন আর বাঁধ মানতে চাইল না। কলকাতা শহরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের এই লক্ষ্য পূর্ণ হল। সেই সঙ্গে শুরু হল ছোট্ট গওহরের অবাধ সাফল্য যাত্রার সূচনা। বিখ্যাত শিল্পী বামাচরণ ভট্টাচার্যের কাছে গওহর শিখেছিলেন বাংলা গান। রমেশচন্দ্র দাস গওহরকে শেখালেন কীর্তন। সৃজনবাই তাঁকে শিখিয়েছিলেন ধ্রুপদী। গওহর শিখেছিলেন ইংরেজি। মালকা নিজেই গওহরকে উর্দু এবং ফারসি শেখাতেন এবং সেই সঙ্গে শিখিয়েছিলেন কাব্যরচনা কৌশল। হিন্দুস্তানি, বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দুতে পড়তে লিখতে এবং গান গাইতে শিক্ষা পেলেন গওহর। ইংরেজি ও ফারসি ভাষা বলতেও শিক্ষা করলেন। ১৮৮৫ সালের এক সকালবেলায় এই চিৎপুর রোডের বাড়িতে পুলিশ এসে দরজায় কড়া নাড়ে। মালকা জানতে পারেন খুরশিদ খুন হয়েছে। বাবার মৃত্যুতে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করেন গওহর। খুরশিদকে নিজের বাবা হিসেবেই জেনে বড় হয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর যখন গওহরকে কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছিল না, মালকা তখন তাঁকে সত্যটা জানান। আর্মেনিয়ান রবার্ট উইলিয়াম ইয়ো ওয়ার্ডের কথা জানালেন, যিনি তাঁর আসল পিতা। তখন গওহরের বয়স ৬ বছর পূর্ণ হয়নি। পুরো ব্যাপারটাই তাঁর কাছে এক বিশাল ধাক্কার মতো। ধীরে ধীরে গওহর স্বাভাবিক হতে শুরু করলেন এবং পরিপূর্ণ নারীত্বের দ্বারে এসে উপনীত হয়েছেন। ১৮৮৬ সালে তাঁর ১৩ বছরের জন্মদিন খুব ধুমধাম সহকারে চিৎপুর রোডের বাড়িতে পালন করা হয়। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। কলকাতার সমস্ত অভিজাত পরিবার এবং বাইজিদের এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একজন অত্যন্ত ধনী এবং লম্পট ব্যক্তি। তিনি খয়েরাগড়ের বৃদ্ধ রাজা। তিনি সেই রাতে গওহরের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে যথেচ্ছভাবে সারা রাত্রি ব্যবহার করেন। এটা গওহরের পক্ষে খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এই অন্যায়ের ফলস্বরূপ অন্তঃসত্ত্বা গওহর এক মৃত শিশু প্রসব করেছিলেন পরবর্তীতে।

আরও পড়ুন-গীতা মা

অবস্থার উন্নতি
একবার মালকা দ্বারভাঙা রাজদরবার থেকে অনুষ্ঠান করার নিমন্ত্রণ পেলেন। নিজে যাওয়ার বদলে তিনি গওহরকে পাঠালেন। এতদিন পর্যন্ত তাঁর মায়ের সহকারী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। কিন্তু এবার এককভাবে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ পেলেন তিনি। অনুষ্ঠানের সাফল্য তাঁর নামের পিছনে ছোট্ট একটা শব্দ যোগ করে তাঁকে গওহর জান নামে ডাকা হতে লাগল। কোনও বিশিষ্ট মেহফিল যেন গওহরকে ছাড়া সম্পূর্ণই হত না।
প্রেমের উন্মেষ
১৮৮৭ সালের কথা। বেনারসের বিখ্যাত রাই পরিবারের বংশধর ছগন বেনারস থেকে কলকাতায় এলেন শুধুমাত্র গওহরের গান শুনবেন বলে। চওড়া কাঁধের সুদর্শন পুরুষ, প্রশস্ত কপাল, গভীর উজ্জ্বল দুটি চোখ সুপুরুষ। সঙ্গে এসেছেন তাঁর বন্ধু মনোহর। ঘরে ঢুকে ছগনকে দেখামাত্রই কোনও এক অজানা কারণে গওহর তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হলেন। ছগনের সামনে সেই সন্ধ্যায় গাওয়া গান তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা গান। এরপর ছগন আর গওহরের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তাঁর ভালবাসার মানুষটির সঙ্গে গওহর পাড়ি দিলেন বেনারসে। কিন্তু গওহরের কপালে যে সংসার, স্বামী-সুখ নেই তা তিনি বুঝলেন সময় পেরতেই। পরিবারের কথায় একটি সুন্দরী বুদ্ধিমতী পাঞ্জাবি ব্রাহ্মণ মেয়েকে ছগন বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান। এ তো তিনি কখনও আশাই করেননি। ছগন তাঁকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন না এটা বুঝতে দেরি হয় না। আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করেননি। জিনিসপত্র সব গুছিয়ে নিয়ে ছগনকে শেষ বিদায় জানিয়ে গওহর ১৮৯১ সালের ৩০ জুলাই কলকাতায় ফিরে এলেন।
সঙ্গীতের জগতে প্রত্যাবর্তন
শেঠ দুলিচাঁদ তখনকার দিনে কলকাতার খুব নামকরা সঙ্গীত পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নিজে একজন বিত্তবান মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী ছিলেন। গভীর সঙ্গীত প্রীতির কারণে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন নাম করা গায়ক-গায়িকাদের সান্ধ্যকালীন বৈঠকে আমন্ত্রণ জানাতেন। তাঁর বাড়িতে সঙ্গীতসন্ধ্যাগুলিতে আমন্ত্রণ পাওয়া যে কোনও শিল্পীর পক্ষেই খুব সম্মানজনক বলে মনে হত। সে আসরে গওহর নিমন্ত্রিত। শেঠ দুলিচাঁদের এরকম একটি অনুষ্ঠানে ঠিক হল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বিখ্যাত শিল্পী ভাইয়া গণপত রাও। তাঁকে সকলে ভাইয়া সাহেব বলে থাকেন। সেই ভাইয়া সাহেব প্রতিশ্রুতি দিলেন সেদিনের সন্ধ্যায় তিনি সকলকে একটা চমক দেবেন। বহু প্রতীক্ষিত সন্ধ্যাটি এল। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সমস্ত দিকপাল শিল্পী পৌঁছলেন সেই দুলিচাঁদের বাড়িতে। প্রস্তুত সুসজ্জিত হলঘর। সেই ঘরে ঢুকে গওহর রঙিন উত্তরীয় পরা লম্বা পাকানো গোঁফওয়ালা এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করলেন। তিনি ভাইয়াসাহেব। তাঁর ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শান্ত নম্র অথচ অসাধারণ সুন্দর দেখতে এক ব্যক্তি। তাঁকে চিনতে পারলেন গওহর। বেনারসের দিনগুলিতে এই ব্যক্তিকেই গওহর মৌজু নামে চিনতেন। মেহফিল শুরু হল এবং প্রত্যেক শিল্পী অসাধারণ অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছিলেন। এরপর ভাইয়া সাহেব দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে উঠলেন। তিনি তাঁর পাশে বসা থাকা যুবককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এর নাম মউজুদ্দিন, তাঁর শাগরেদ বা ছাত্র’। ‘পিয়া বিনা নহি আওয়াত চয়ন’। এই গানটি এত দরদ দিয়ে মউজুদ্দিন আবেগের সঙ্গে গাইলেন উপস্থিত সঙ্গীতশিল্পী সকলে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। গওহর সত্যি সত্যি সেই রাতে কেঁদে ভাসলেন। শেষে তিনি ভাইয়া সাহেব এবং মউজুদ্দিনের পায়ে পড়ে গেলেন। গওহর তাঁদের অনুরোধ করলেন যে তাঁরা যেন তাঁকে ছত্রছায়ায় গ্রহণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গীতের গভীরতা কিছু অংশ অন্তত তাঁকে উপহার দেন। গওহর তাঁর সমসাময়িক কোনও শিল্পীর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। মউজুদ্দিন ছাড়াও তিনি কিছুটা শিখেছিলেন পিয়ারা সাহেবের থেকে।

আরও পড়ুন-এবার বাড়ি লিফ্টিংয়ে তিন শর্ত, পুনর্বাসন দেবে পুরসভা

জনপ্রিয়তার শিখরে
কলকাতার অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর সুনাম। মাইসোরের মহারাজা দশম চামারাজেন্দ্র এক রসিক মানুষ ছিলেন এবং প্রায় কলকাতায় আসতেন ভারতের ভাইসরয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ভারতীয় সঙ্গীতের নতুন নক্ষত্র গওহরকে একটি অনুষ্ঠান দেখতে আসেন এবং তাঁর গভীরভাবে ভাল লাগে। তিনি গওহরকে সুদূর দক্ষিণের রাজত্ব মাইসোর প্রদেশে অনুষ্ঠান করার আমন্ত্রণ জানালেন। গওহর সেখানে গিয়ে সেখানকার দর্শকদের মুগ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মাইসোর শহরটির প্রেমে পড়ে গেলেন। তাঁর জীবনে মাইসোর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করেছিল।
জীবনে নতুন মানুষের আগমন
সেই সময় বহরমপুরের ধনী জমিদার নিমাই সেনের সঙ্গে গওহরের একটি রোমান্টিক সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। গওহর প্রথম তাঁকে দেখেছিলেন মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারিতে একটি অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার সময় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। নিমাই সেনের সঙ্গে গওহরের আবেগঘন প্রেম সম্পর্কে বহু গল্প শোনা যায়। ছগনের সঙ্গে যখন তাঁর সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল, তখনই গওহর ঠিক করেন যে এই ব্যাপারে তিনি সতর্ক থাকবেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি নিমাই সেনকে সত্যিই ভালবেসে ফেলেছিলেন। সকলের মতো তাঁকে হারাতে চাননি। সেই কারণে গওহর নিমাইকে বিয়ে করে তাঁদের সম্পর্কের একটি আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন। তবে নিমাই সেন তাঁকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে কিছুতেই সম্মত হলেন না। ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক ভেঙে গেল।
গায়কির গুণাগুণ
গওহরের গায়কির সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপযুক্ত কাঠামো এবং একইসঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ততার মিশেল একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গওহর দেশের বৃহত্তর শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। বিভিন্ন ধারার গান রেকর্ড করেছেন। খেয়াল থেকে ধ্রুপদ, ঠুমরি থেকে দাদরা, ভজন, গজল, হোরি, তারানা এবং চৈতি। তাঁর বহুবর্ণ রঞ্জিত সাঙ্গীতিক জীবনে তিনি প্রায় ছশোর কাছাকাছি গান রেকর্ড করেছিলেন। অনেক সংশয় ও সমালোচনা সত্ত্বেও গওহর সঙ্গীতে নিজস্ব সৃষ্টিশীলতা ও তাঁকে নিজের মতো করে উপস্থাপনা করার সাহস দেখিয়েছিলেন।
জীবনে আবার এল প্রেম
১৯০৪ সালে বম্বে সফরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হল অমৃত কেশব নায়কের। এঁরা একসঙ্গেই একদা শিক্ষা করেছিলেন বিনোদাদিন মহারাজের কাছে। অমৃত এবং গওহর যেন অনেক দিনের হারানো বন্ধুর মতো পরস্পরের দেখা পেলেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আকৃষ্ট হলেন পরস্পরের প্রতি। গওহরের জীবনে সবকিছুই ছিল। যা তিনি চাইতেন পেতেন। একমাত্র ব্যতিক্রম একজন প্রকৃত সঙ্গী। অমৃত বিবাহিত হলেও মনে হয়েছিল তিনি তাঁর জীবনের একেবারে সঠিক মানুষ। অমৃতের সঙ্গে বম্বেতে থেকে যাওয়াই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন। এদিকে, ১৯০৬ সালে মাত্র ৫০ বছর বয়সে মালকা জান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মালকা জানের মৃত্যু গওহরের এক বিশাল মানসিক আঘাত। এই দিকে গওহরের অনুপস্থিতিতে অমৃত মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ১৯০৭ সালের ১৮ জুলাই সকালটা অন্য সব দিনের মতোই ছিল। মঞ্চে আলো এবং অভিনয়ের মহড়া চলছিল। হঠাৎ অমৃত অসম্ভব বুকের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন এবং বিরতি নিয়ে চলে যান গ্রিনরুমে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩০ বছর। শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন গওহর। এক বছরের মধ্যেই তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি মানুষকে হারিয়েছেন।

আরও পড়ুন-রাত দখলের নাটুকেরাই অশ্লীল-কাণ্ডে অভিযুক্ত

শেষ সময়ে
কিছুদিনের জন্য তিনি এসেছিলেন মাইসোরে। ১৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ায় মাইসোর যেন জমে গেল। এত ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন গওহর। শারীরিক অসুস্থতার চেয়েও বেশি করে মানসিক অবসাদ, ক্রমাগত হতাশা যেন তাঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল। তাঁর বেঁচে থাকার ইচ্ছা, গান গাওয়া, নাচের ইচ্ছা সবই অনেক আগে থেকেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৩০ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার মিস গওহর জান ভারতীয় সঙ্গীতের সম্রাজ্ঞী, কোকিলকণ্ঠী এবং ভারতের প্রথম গ্রামাফোন শিল্পী চিরতরে নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। কৃষ্ণরাজেন্দ্র হাসপাতালের একবারে নির্জন কোণে একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় চলে গেলেন তিনি। রেখে গেলেন বহু বিখ্যাত গান, যা পরবর্তী কালের শিল্পীদের কাছে পাথেয় হয়ে আছে।

Latest article