রাজ্য পুলিশের ডিজি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন পথ, পুলিশকে দুটি গুলি করলে পুলিশ চারটি গুলি করবে। সেই পথে হেঁটেই বাংলাদেশ সীমান্তে পলাতক বন্দি সাজ্জাককে (Sajjak Alam) এনকাউন্টারে খতম করল পুলিশ। গত বুধবার দুই পুলিশকর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল সাজ্জাক। চেষ্টায় ছিল বাংলাদেশে পালানোর। কিন্তু পুলিশ সেই সুযোগ দিল না। বাংলাদেশ পালানোর আগেই এনকাউন্টারে ধরাশায় করল গোয়ালপোখরের ফেরার বিচারাধীন বন্দি সাজ্জাক আলমকে।
আরও পড়ুন-‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলো’য় ফোনে ত্রিপল খাটিয়ে থাকা শেষ, আবাসের বাড়ি বৃদ্ধ দম্পতিকে
শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ সাজ্জাককে (Sajjak Alam) লক্ষ্য করে ৩ রাউন্ড গুলি চালায়। এরপর তাকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় সাজ্জাকের। গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায়, সাজ্জাক গোয়ালপোখরের শ্রীপুরে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশ ধাওয়া করে তাকে। কিচকতলা ব্রিজের কাছে পুলিশ তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। সাজ্জাক পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি চালায়। জখম হয় সে। তড়িঘড়ি তাকে উদ্ধার করে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় সাজ্জাকের। কালিয়াচকে পোলট্রি ফার্মের মালিক খুনে অভিযুক্ত সাজ্জাক আলম রায়গঞ্জ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বিচারাধীন বন্দি ছিল। গত বুধবার ইসলামপুর আদালতে হাজিরার পর প্রিজন ভ্যানে করে রায়গঞ্জ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাকে। সেই সময় গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়ার একরচালা কালীমন্দিরের কাছে শৌচকর্ম করার নাম করে প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে দুই পুলিশকর্মীকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। তারপর বাইকে চড়ে চম্পট দেয় সে। রায়গঞ্জ পুলিশ সুপার সাজ্জাকের মাথার দাম ধার্য করে ২ লক্ষ টাকা। বৃহস্পতিবার জখম দুই পুলিশকর্মীকে দেখতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাজ্জাককে গ্রেফতার করতে হবে বলে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, পুলিশের উপর গুলি চালালে পাল্টা ৪ গুণ গুলি চালানো হবে। ডিজির সেই বার্তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের এনকাউন্টারে খতম হল সাজ্জাক। তাকে পালাতে সাহায্যকারী আবাল এখনও ফেরার। আবালের স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবালের খোঁজে চলছে তল্লাশি।
মাত্র উনিশ বছর বয়সেই দাগি অপরাধী বনে যায় এন কাউন্টারে খতম সাজ্জাক আলম। করণদিঘির ত্রাস হয়ে ওঠে সে। শুধু খুন এবং পুলিশকে গুলি করে পালানোই নয়, তার বিরুদ্ধে ছিল ভুরিভুরি অভিযোগ। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, একাধিক মামলা ছিল তার নামে। এখন তার বয়স ২৫। এই বয়সেই দাগি অপরাধী সাজ্জাক। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আদালত থেকে জেলে যাওয়ার সময় পালানোর ছক কষে সে। এই কাজে তার সহযোগী ছিল আবুল। সে এখন পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।
ছোটবেলাতেই অপরাধ জগতে পা রেখেছিল সাজ্জাক। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই নানা কাজে হাত পাকায় সে। তারপর ২০১৯-এ ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। ১৯ বছর বয়সে ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন, তাকে দাগী অপরাধী বানিয়ে দেয়। তার নামে কাঁপতে শুরু করে করণদিঘি। নিহত ব্যবসায়ীর পরিবার তার ভয়ে আড়ষ্ট থাকত।
এমন দুষ্কৃতী সাজ্জাক সেই থেকে জেলে ছিল বিচারাধীন বন্দি হিসেবে। কিন্তু জেলে থেকেও যে তার অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তা প্রমাণ করে পুলিশকে গুলি করে পালানোর ঘটনা। অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেই তার হাতে উঠে এসেছিল আগ্নেয়াস্ত্র। কুয়াশার সুযোগ নিয়ে আদালত থেকে জেলে ফেরার সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সে। তারপর পালিয়ে যেতেও সক্ষম হয়। এমনই খতরনাক দুষ্কৃতী সাজ্জাকের খোঁজ পেতে ২ লক্ষ টাকা মাথার দাম ঘোষণা করে পুলিশ। তল্লাশি চলছিল। গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায়, বাংলাদেশে পালানোর ছক এসেছে সাজ্জাক। সেই মতো সীমান্ত ঘিরে শুধু হয় তল্লাশি। যখন আর পালানোর পথ নেই, তখন মরিয়া চেষ্টা করে বাংলাদেশ সীমান্তে গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করে সাজ্জাক। শুক্রবার ভোররাতে পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে তাকে লক্ষ্য করে। তাতেই খতম হয় সাজ্জাক।