প্রতিবেদন: কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তৈরি হওয়া পিএম কেয়ারস তহবিলে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগৃহীত হচ্ছে পাঁচ বছর পরেও। এখনও এই তহবিল কোথা থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করছে এবং কীভাবে সেই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে উচ্চবাচ্য নেই মোদি সরকারের। ভারতে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকদের আস্থার প্রতীক হিসেবে একটি তহবিল ঘোষণা করেছিল। এটি হল পিএম কেয়ারস। এর পুরো নাম, ‘প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সহায়তা ও জরুরি পরিস্থিতির ত্রাণ তহবিল’।
আরও পড়ুন-অনুপ্রবেশ কীভাবে? প্রশ্ন তুলে সরব তৃণমূল
এই তহবিল প্রতিষ্ঠার প্রথম মাসেই ৩,০০০ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটি একটি সংকটের মধ্যে আশার প্রতীক হওয়ার কথা ছিল। অন্তত তেমনভাবেই তা প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রায় পাঁচ বছর পরও কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রকাশিত এই তহবিলের আর্থিক প্রতিবেদনগুলিতে স্পষ্টতা অনুপস্থিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বারবার তথ্য অধিকার আইনের (আরটিআই) অধীনে এই তহবিল সম্পর্কে নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এটি একটি সরকারি সংস্থা নয়, বরং একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, যা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য ‘ট্রাস্টি’ দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ পিএম কেয়ারস তহবিল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপরে চারটি আর্থিক বছরের জন্য ‘রিসিট এবং পেমেন্ট অ্যাকাউন্টস’ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এই প্রতিবেদনগুলি খুব সাধারণ এবং শুধু আয় (স্বেচ্ছায় অনুদান, বিদেশি অনুদান, সুদ ইত্যাদি), ব্যয় (অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত অন্যান্য খরচ) এবং অবশিষ্ট অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করেছে। এতে বিস্তারিত আর্থিক বিবরণী, যেমন: কারা কত টাকা অনুদান দিয়েছে, অর্থ কোথায় ব্যয় হয়েছে এবং কবে ব্যয় হয়েছে, সেই তথ্য নেই। এমনকী অডিট রিপোর্টের পর্যবেক্ষণগুলিও অন্তর্ভুক্ত নেই। ইন্ডিয়া স্পেন্ড জানিয়েছে, পিএম কেয়ারস গঠনের দুই মাসের মধ্যে তহবিলে কমপক্ষে ৯,৬৭৭.৯ কোটি সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৪,৩০৮.৩ কোটি টাকা সরকারি সংস্থা এবং কর্মচারীদের কাছ থেকে এসেছে। কর্মচারীদের একদিনের বেতন কেটে নেওয়া ৪৩৮.৮ কোটি টাকা এই তহবিলের অংশ ছিল। এভাবে টাকা কাটায় ক্ষুব্ধ বহু কর্মচারীই। ‘ইন্ডিয়া স্পেন্ড’ হল ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে ব্যাপক তথ্য সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা জানিয়েছে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের জন্য রিসিট এবং পেমেন্ট স্টেটমেন্ট প্রকাশ করা হয়নি। অথচ ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ওই তহবিলে প্রায় ৯০৯ কোটি টাকা স্বেচ্ছা-অনুদান এবং ২.৫৭ কোটি বিদেশি অনুদান সংগ্রহ করা হয়। ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তহবিলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬,২৮৪ কোটি টাকা অবশিষ্ট ছিল। পিএম কেয়ার্সের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, পিএম কেয়ারস তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটর সরবরাহে, অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য তহবিল প্রদানে, অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনায়, অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল স্থাপনে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে হাসপাতালগুলিতে সরবরাহ করা সরঞ্জামের নাম বা পরিমাণ সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত নেই। তহবিলে কারা টাকা দিয়েছেন, তারও কোনও উল্লেখ নেই পিএম কেয়ারস-এর আর্থিক প্রতিবেদনে। সব মিলিয়ে এই বিপুল আর্থিক তহবিল ঘিরে পদে পদে অস্বচ্ছতা।