প্রতিবেদন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নথিপত্রবিহীন ২০ হাজার ভারতীয়কে ফেরত নিতে নরেন্দ্র মোদি সরকার আপত্তি জানাবে না। বরং সহযোগিতা করবে। বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও ‘অনিয়মিত অভিবাসন’ ইস্যুটি উত্থাপন করেন। দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং অনিয়মিত অভিবাসন সম্পর্কিত উদ্বেগগুলি মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। জয়শঙ্কর ও রুবিওর বৈঠক শেষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক প্রেসনোটে একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুই বিদেশমন্ত্রী ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য যৌথ অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে দিল্লিতে সরকারি এক সূত্র অনুযায়ী, ভারত নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের তাগিদে এবং বৈধভাবে যাতে আরও বেশি ভারতীয় সেদেশে যাওয়ার সুযোগ পান, সেই স্বার্থে কাজ করতে চায়। দিল্লির সরকারি সূত্রে খবর, ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১ হাজার ৫২৯ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে। বিনা বাক্যব্যয়ে ভারত তাদের গ্রহণও করেছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অটুট রাখার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়নি দিল্লি। এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য অনেক বিষয়ের মতো অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি তাঁর কট্টর মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার যে নিয়ম ও রীতি এখনও চালু, তিনি তার বদল ঘটাতে চান। বিশেষ করে অতীতে যাঁরা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কড়া নীতি প্রয়োগ করলে ভারতের চিন্তা অবশ্য আরও বেড়ে যাবে। কারণ ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, আমেরিকায় জন্ম নিলেই মার্কিন নাগরিক হওয়ার দিন শেষ। যদি কোনও শিশুর বাবা-মা বৈধ নাগরিকত্বের অধিকারী না হন তবে আমেরিকায় জন্ম নিলেও নাগরিকত্ব পাবে না তাদের সন্তান। আর এই নিয়ম বলবৎ হলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়বে ভারতীয়রাই।
আরও পড়ুন-ইডিকে জরিমানা করল বম্বে হাইকোর্ট
তবে আশার কথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বাতিল করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত ২২টি অঙ্গরাজ্য ও ২টি শহর। অঙ্গরাজ্য ও শহরগুলির কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি এ আইনি লড়াইয়ে শরিক হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠনও। মামলায় যুক্তি দেওয়া হয়, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেষ্টা মার্কিন সংবিধানের ভয়ানক লঙ্ঘন। মামলায় আরও বলা হয়েছে, বৃহত্তর পটভূমিতে প্রেসিডেন্টের অভিবাসন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে। তা সত্ত্বেও নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ প্রেসিডেন্টের আইনি এক্তিয়ারবহির্ভূত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে দেশে এখন অন্তত ৫০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বসবাস করছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অন্যরা অভিবাসী।
আরও পড়ুন-সইফের ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তি হাতছাড়া?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ৩৪ শতাংশকে অবৈধ ঘোষণা করে ফেরত পাঠালে দেশে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে। তবে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ফেরত নিতে ভারত আপত্তি জানাবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, অবৈধ বসবাসকারী ভারতীয়ের সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজারের মতো। তাঁদের মধ্যে ২০ হাজার ৪০৭ জন ভারতীয়ের কাছে কোনওরকম নথি নেই। তাঁদের অনেকে বিতাড়নের চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত, অনেকে সে দেশের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) আটক কেন্দ্রে বন্দি রয়েছেন। তাঁরা দেশে ফেরার অপেক্ষায়। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্রের মতে, ট্রাম্প যেভাবে শুরু করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে, খুব শিগগির তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্য, অভিবাসীদের প্রশ্নে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সব সময় সহযোগিতার ভিত্তিতে চলে। অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার প্রশ্নে দুই দেশ সহমত। এটা করার প্রধান কারণ, যাতে বৈধভাবে ভারতীয়রা সে দেশে যেতে পারেন। জয়সওয়াল বলেন, সহযোগিতা আছে বলেই গত বছরের অক্টোবরে সে দেশ থেকে বিমানবোঝাই অবৈধ ভারতীয়রা দেশে এসেছিলেন।