হিন্দি ছবি আর বাংলা ছবির তেমন রেস কোনওদিনই হয়নি। কারণ হিন্দি ছবি সর্বভারতীয় আর বাংলা ছবি আঞ্চলিক। তবু বলিউড আর টলিউডে এখন চলে সমানে সমানে টক্কর। দুই তরফেই ভাল ভাল ছবি সারাবছর রিলিজ হতে থাকে। আর দুই ধরনের ছবির দর্শক সংখ্যাও বেশ ভাল। যেমন কিছুদিন আগে একই দিনে মুক্তি পেল হিন্দি ছবি ‘আজাদ’ এবং বাংলা ছবি ‘ফেলুবক্সী’ (Felu Bakshi)। দুটি ছবিই সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের।
আজাদ
কয়েক যুগ আগেও বলিউডে একটা ট্রেন্ড ছিল নতুন মুখ দিয়ে ছবি হিট করানো। সেই সব ছবি সুপারহিটও হতো। যেমন সানি দেওল, অমৃতা সিং ডেবিউ করেছিলেন ‘বেতাব’ ছবিতে, সঞ্জয় দত্ত ,টিনা মুনিম ডেবিউ করেছিলেন ‘রকি’ ছবিতে। আমির খান জুহি চাওলার ‘ক্যায়ামত সে ক্যায়ামত তক’ আরও কত। তেমনই সদ্য মুক্তি পেল পরিচালক অভিষেক কাপুরের ঐতিহাসিক ড্রামা ‘আজাদ’। এখানেও দুই নতুন মুখ। অমন দেবগণ এবং রাশা থাডানি। নবাগতরা তারকাদের পরিবার থেকে এলেও বড়পর্দায় কতটা প্রত্যাশা জাগাল? যদিও ‘আজাদ’ ঠিক প্রেমকাহিনি নয়। ভিন্ন ধরনের গল্প। ছবির পটভূমিকা বুন্দেলখণ্ড। ১৯২০-র ইংরেজ শাসনকাল। যখন দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। একজন মানুষ এবং একটি ঘোড়া এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র। মানুষ আর পশুর মধ্যে গড়ে ওঠা পারস্পরিক বন্ধন, সততা, সাহসিকতা, ও ঐক্যবদ্ধতার গল্প ‘আজাদ’। আজাদ নামের একটি ঘোড়া যাকে ইংরেজ অফিসার মেরে ফেলতে চাইলে ঠাকুর বিক্রম সিং তাকে টাকা দিয়ে কিনে নেয়। অন্যদিকে মহারাণা প্রতাপের গল্প শুনতে শুনতে বেড়ে ওঠা গ্রামের সাহসী ছেলে গোবিন্দ। সে তার বাবার সঙ্গে ওই গ্রামেরই জমিদারের আস্তাবলে কাজ করে। গোবিন্দর ঘোড়সওয়ারি দারুণ পছন্দ। কিন্তু দরিদ্র ছেলেটির অনুমতি ছিল না যে সে ঘোড়সওয়ারি করবে। একদিন লুকিয়ে ঘোড়সওয়ারি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। সেই অন্যায়ের অপরাধে চাবুকের আঘাত সহ্য করতে হল তাকে। সে পালায় এবং ঘটনাচক্রে তাঁর দেখা হয় বিপ্লবী ঠাকুর বিক্রম সিং-এর সঙ্গে। তাঁর দলের অংশ হয়ে যায় গোবিন্দ। সেখানেই আজাদকে দেখে সে। ধীরে ধীরে আজাদের সঙ্গে তৈরি হয় তার গভীর বন্ধন। কী হবে এরপর রহস্যই তাঁদের জন্য যাঁরা ছবিটা দেখেনি।
‘আজাদ’ ছবির মাধ্যমে বলিউডি ছবিতে পা রাখলেন দুই স্টার কিড। অজয় দেবগনের ভাগ্নে অমন দেবগণ ও রবিনা ট্যান্ডনের মেয়ে রাশা থাডানি। অজয় দেবগণকে এই ছবিতে দেখতে পাওয়া যাবে একটি ছোট্ট অথচ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে। মূলত অজয়ের মতো হেভি ওয়েট অভিনেতার ঘাড়েই ছিল ছবির অর্ধেক ভার। ফলে উতরে অনেকটাই গেছে ছবি। এছাড়া ছবিতে রয়েছেন ডায়না পেন্টি পীযূষ মিশ্র, ও মোহিত মালিক প্রমুখ। ছবির গল্প লিখেছেন রীতেশ শাহ এবং চন্দন আরোরা। চিত্রনাট্যকার ঋতেশ শাহ, সুরেশ নায়ার, চন্দন অরোরা। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অমিত ত্রিবেদী। প্রযোজক রনি স্ক্রুওয়ালা এবং প্রজ্ঞা কাপুর।
আরও পড়ুন- লিভ-ইনকে আইনি স্বীকৃতির সুপারিশ রাজস্থান হাইকোর্টের
ফেলুবক্সী
এক রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্ত করতে শহরে গোয়েন্দা ফেলু বক্সী (Felu Bakshi)। শুনতে কেমন চেনা চেনা ঠেকছে তাই না! ঠিকই ধরেছেন ফেলুদার ফেলু আর ব্যোমকেশ বক্সীর বক্সী দুয়ে মিলে ফেলুবক্সী। একদিকে সেই সত্যজিৎ রায়ের যুগের বাংলা ছবির রাশভারী গোয়েন্দা যার চোখেমুখে অভিজ্ঞতার ছাপ, হাঁটাচলা-কথাবার্তা তীক্ষ্ণ। আবার উল্টোদিকে নিপাট বাঙালি ব্যোমকেশ। দেখতে ছিমছাম সাদামাঠা কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ক্রিমিনালের কালঘাম ছুটিয়ে দেওয়া সত্যান্বেষী। তাহলে কি ফেলুবক্সী এই দুজনের ছায়া চরিত্র? একেবারেই না। পরিচালক দেবরাজ সিংহর ফেলুবক্সী কিন্তু একেবারেই আলাদা।
শহরের অভিজাত মুখার্জিবাড়ি। সেই বাড়ির কর্তা অনিমেষ মুখার্জির একমাত্র ছেলে গৌরব ও তার স্ত্রী লাবণ্য ফিরেছে বোস্টন থেকে। বাড়িতে খুশির হাওয়া। বিবাহবার্ষিকীতে গৌরব-লাবণ্য কেক কাটবে এমন সময় বুকে ব্যথায় কাতর হয়ে ওঠে গৌরব। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ আসে। পোস্টমর্টেমে কিছুই প্রমাণিত হয় না। দিশেহারা অনিমেষ ফেলুবক্সীর বাড়ি যান। তার সন্দেহ ছেলে খুন হয়েছে। এখানেই শেষ নয় এরপরে ঘটতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা আর বিষয়টা জটিলতর হতে থাকে। তদন্ত শুরু করেন ফেলুবক্সী। গৌরবের মৃত্যু কি স্বাভাবিক না তাকে খুন করা হয়েছিল? যদি খুন হয়, তাহলে খুনী কে? কীভাবে ফেলুবক্সী (Felu Bakshi) করবেন সেই রহস্যের উদঘাটন। জানতে হলে যেতে হবে পেক্ষাগৃহে।
যেভাবে গল্প এগিয়েছে বেশ ভাল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছবিতে রহস্যের জাল বিছিয়েছেন পরিচালক। থ্রিলার ছবির সব রসদ রয়েছে। অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীর ছক ভেঙেছেন তার চরিত্রে। তাঁর অভিনয়, অ্যাকশন সবটা বেশ জমজমাটি। সোহমের পাশাপাশি তাঁর সহকারীর চরিত্রে মধুমিতা অনবদ্য। মধুমিতা দারুণ অ্যাকশন করেছে। ছবিতে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। ‘ফেলুবক্সী’র মাধ্যমে প্রথমবার টলিউডে পা রাখলেন পরীমণি। এছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন শতাফ ফিগর, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, অনিন্দিতা সরকার, কৌশিক ভট্টাচার্য, পূজা সরকার প্রমুখ। কাহিনিকার কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়।