নিভৃতবাসিনী বীণাপাণি

সরস্বতী বিদ্যার দেবী। কখনও তিনি হংসবাহনা কখনও-বা ময়ূর। এর তাৎপর্য কী? এই বিদ্যার দেবীর জন্ম কীভাবে? পুরাণ কী বলছে? অন্য রাজ্য বা ধর্মে সরস্বতীর স্থান কী? লিখলেন তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক

Must read

মধু ঋতু, পিকু কুহরিত দিবা এবং বছরের শুরুতেই নিভৃতবাসিনী বীণাপাণীর (Saraswati Puja 2025) মর্ত্যে আগমন।
তিনি বিদ্যার দেবী। আলোকময়ী, সর্বশুক্লা তিনি। বিশ্বভুবনের প্রকাশ তাঁর জ্যোতিতে। অজ্ঞানতার আঁধার দূর করার দেবী তিনি। জ্ঞানের পুণ্যজ্যোতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে তিনি বিরাজমান।
সরস্বতী শব্দের অর্থ ত্রিলোকব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অর্থাৎ জ্যোতির্ময়ী। অন্যটি জল বা নদী।
ঋকবেদে আছে “অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী”, সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব।

দেবীর সৃষ্টি ও পুরাণ
পুরাণ অনুযায়ী, দেবী সরস্বতীর উত্থান ব্রহ্মার মুখ থেকে। দেবীর সমস্ত সৌন্দর্য ও দীপ্তির উৎস মূলত ব্রহ্মা।
বায়ু পুরাণ অনুযায়ী, নিজ অন্তর থেকে দেবী সরস্বতীকে সৃষ্টি করেন। সরস্বতীকে আশ্রয় করেই ব্রহ্মার পূজা সৃষ্টির সূচনা।
কীভাবে এই দেবী সৃষ্টি হলেন সে-নিয়ে পুরাণে এক আশ্চর্য গল্প আছে। হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ আসনে থাকা তিন দেবতার অন্যতম হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। তাঁদের নিয়েই ত্রিমূর্তি।
পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মা হলেন স্বয়ম্ভূ। অর্থাৎ তাঁর কোনও পিতা ও মাতা নেই। তিনি নিজেই নিজের জন্ম দিয়েছেন।
এক আশ্চর্য জন্মের পর ব্রহ্মা ধ্যানে বসেন সেই ধ্যানে তিনি তাঁর সকল ভাল গুণকে একত্রিত করতে থাকেন। ব্রহ্মার সমস্ত ভাল গুণ একত্রিত হয়ে তা ধীরে ধীরে এক নারীর আকার নিতে থাকে। এইভাবেই ব্রহ্মার মুখগহ্বর থেকে সৃষ্টি হয় দেবী সরস্বতীর।
পুরাণে এ-ও বলা আছে সরস্বতীর রূপে ও নিজ সৃষ্টিতে ব্রহ্মা এতই মুগ্ধ ছিলেন যে সরস্বতী যেদিকেই থাকুক না কেন তিনি যাতে তাঁকে দেখতে পান এমন কামনা করে বসেছিলেন। সেই কারণেই ব্রহ্মার নাকি চারটি মুখ বা মাথা।
সরস্বতীর বাগ্মিতার ক্ষমতা ও দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সরস্বতীকে বাগ্দেবী নামে ভূষিতা করেন ব্রক্ষ্মা।
গরুড় পুরাণে সরস্বতীর শক্তি অষ্টবিধা। কী কী সেই অষ্টবিধা?
শ্রদ্ধা, ঋদ্ধি, কলা, মেধা, তুষ্টি, পুষ্টি, প্রভা ও স্মৃতি— এই হল অষ্টবিধা। তন্ত্রে বর্ণিত এই অষ্টশক্তি যথাক্রমে, যোগ, সত্য, বিমল, জ্ঞান, বুদ্ধি, স্মৃতি, মেধা ও প্রজ্ঞা।
ক্ষেত্রভেদে তিনি দ্বিভুজা অথবা চতুর্ভুজা। বাহন মরাল অথবা ময়ূর।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভুজা সরস্বতী পূজিতা হন। তিনি অক্ষমালা কমণ্ডলু, বীণা ও বেদ ও পুস্তকধারিণী।
আবার বাংলা তথা পূর্ব ভারতের সরস্বতী দ্বিভুজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।

এখন প্রশ্ন হল, রাজহাঁস তাঁর বাহন কেন?
কারণ জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে সর্বোচ্চই হাঁসের সমান গতি যেমন জ্ঞানময় পরমাত্মা সর্বব্যাপী।
জলে স্থলে অনলে অনিলে সর্বত্র তাঁর সমান প্রকাশ। হাঁস, জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুধ মেশা থাকলে স্বভাবত জল সরিয়ে দুধই সংগ্রহ করে। জ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রেও হাঁসের এই স্বভাব সেই তাৎপর্যই বহন করে।
অবিদ্যা থেকে বিদ্যাকে ছেঁকে নেওয়াই তো আসল শিক্ষা। তাই সরস্বতী হংসবাহিনী।
কখনও তিনি আবার ময়ূরাসীনা। এর অর্থ হল ময়ূর অহংকারী। নিজের রূপের মোহে নিজেই আবিষ্ট। তাই তাঁকে বহন করে সরস্বতী শিক্ষা দেন “বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্।”
আবার আরেকটি পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, সতীর আত্মাহুতির পর দেবাদিদেবের মনে কাম ও প্রেম জাগৃত করার জন্য দেবতারা কামদেবের সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ হওয়া এবং পার্বতীর সঙ্গে মিলনই ছিল যার মূল উদ্দেশ্য।
দেবতাদের অনুরোধ মেনে নিয়ে কামদেব রতির সঙ্গে মিলে শিবের ধ্যান ভঙ্গ করেন। তখনই প্রচণ্ড ক্রোধে শিব কামদেবকে তাঁর তৃতীয় নেত্র দিয়ে ভস্ম করে দেন। ফলে রতি বিলাপ শুরু করেন। তখন শিব রতিকে আশীর্বাদ করেন যে কামদেব আবার আগের রূপে বিরাজ করবেন।
শিব আরও বলেন যে, কামদেবের মৃত্যু হয়নি, তিনি অনঙ্গ। তাঁর শরীর নষ্ট হয়েছে এবং তিনি কোনও শরীরে বাস করবেন না।
কামদেবকে কৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্ন রূপে শরীর লাভ করার আশীর্বাদ দিয়েছিলেন মহাদেব।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বসন্ত পঞ্চমীর দিন তাই কামদেবেরও পুজো করা হয়ে থাকে।

সরস্বতীর নানা রূপ-রং
তিন গুণের মধ্যে তিনি সত্ত্ব গুণময়ী। ভাল গুণের প্রতীক। পবিত্র গীতার চতুর্দশ অধ্যায়র শ্লোকে আছে “ তত্র সত্ত্বং নির্মলাত্বাৎ” অর্থাৎ সত্ত্ব, তমো ও রজো গুণের মধ্যে সত্ত্ব গুণ অতি পবিত্র গুণ। স্বচ্ছতার প্রতীক। নির্মলতার প্রতীক। আবার ওই অধ্যায়ের সতেরো নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে “সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং” অর্থাৎ সত্ত্ব গুণে জ্ঞান লাভ হয়। তাই জ্ঞানময়ী দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিতা বলে তাঁর গায়ের রং শুক্লবর্ণ। পবিত্রতার মূর্তি।
অনন্ত জ্ঞানময় ঈশ্বরের বাকশক্তির প্রতীক বাগদেবী। সরস্বতীকে প্রথমে আমরা নদী রূপে, পরে বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে কল্পনা করে থাকি। গতিময় জ্ঞানের জন্যই ঋকবেদে তাঁকে নদীরূপে কল্পনা করা হয়েছে। যিনি প্রবাহরূপে কর্মের দ্বারা অনন্ত সমুদ্রে মিলিত হয়েছেন।
সাম গায়কেরা কল্যাণময়ী নদী তীরে বসে বেদমন্ত্র উচ্চারণে ও সাধনে নিমগ্ন হত। তাদের উদাত্ত কণ্ঠে সাম সঙ্গীতের প্রতীকী বীণা, দেবীর করকমলে।
আশ্রমবাসী ঋষিরা বেদ, বেদাঙ্গ-বেদান্ত আশ্রয় করে সাধনা করতেন।
স্কন্দ পুরাণের প্রভাসখণ্ডে দেবী সরস্বতী নদীর উপর অবতরণের কাহিনি বর্ণিত আছে।
নদীর রূপে সরস্বতী মূর্তি অষ্টভুজা।
বাণ, কার্মুক, শঙ্খ, চক্র, হুল, মশাল, শুল ও ঘণ্টা ছিল তাঁর অস্ত্র। সরস্বতীর এই সংহার রূপেও কিন্তু তাঁর জ্ঞানের ভাবের হানি হয়নি। তিনি “একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা” বলে মোহদুষ্ট শুম্ভকে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেছিলেন। সেই ভাব থেকেই দেবী পুস্তকহস্তে গ্রন্থ রচনা সহায়ক লেখনীটিও তাঁর সঙ্গে।
আবার মার্কেণ্ডেয় পুরাণে ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’র উত্তরলীলায় শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক অসুরদের বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তির কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল মহাসরস্বতী।
নানা রূপ ধারণ করতে পারেন এই দেবী, এই কারণে সরস্বতীর আরেক নাম শতরূপা।
বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, তন্ত্র, সংহিতা, রামায়ণ, মহাভারত, সাহিত্য এবং ইতিহাসে দেবী সরস্বতীর বিভিন্ন কাহিনি এবং বিভিন্ন রূপের কথা আমরা পাই।

আরও পড়ুন- মৃত কুম্ভের মেলায় বিজ্ঞাপনের মারণ বীজ বনাম গঙ্গাসাগর মেলায় আতিথেয়তার নম্র বিচ্ছুরণ

দেবী পুরাণের কথকতা
পুরাণ থেকে জানতে পারি যে, সরস্বতী নদীর মহিমার সঙ্গে নারীজাতির একটি শুচিতার সম্পর্ক ছিল। স্বর্গের সুন্দরী অপ্সরা নর্তকীদের মধ্যে সরস্বতীর প্রভাব ছিল যথেষ্ট। এই নিয়েও রয়েছে একটি সুন্দর কাহিনি।
বিশ্বামিত্র মুনি ছিলেন রাজঋষি অর্থাৎ রাজর্ষি। তিনি ব্রহ্মর্ষি হতে না পারায় মহামুনি বশিষ্ঠের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল না। বশিষ্ঠ মুনি যেহেতু ব্রহ্মর্যি ছিলেন তাই বিশ্বামিত্রের তীব্র ক্ষোভ ছিল। কালে-দিনে যা ভীষণ ক্রোধের আকার নিল।
তিনি এই সময় সরস্বতী নদীকে আদেশ করলেন ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ মুনির আশ্রমকে ভাসিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কিন্তু সরস্বতী নদী তাতে কোনওমতেই সম্মত হলেন না।
তখন বিশ্বামিত্রের অভিশাপে সরস্বতী রক্তনদীতে পরিণত হলেন। সরস্বতীর এই ভয়াবহ রূপ মহাদেব মেনে নিতে পারলেন না। দেবাদিদেবের আশীর্বাদে সরস্বতী পূর্বাবস্থা ফিরে পেলেন এবং সরস্বতী শ্রেষ্ঠা নারীরূপে সম্মানিত হলেন।
তবে বিশ্বামিত্রের উত্তেজনা কিন্তু ধিকিধিকি করে আরও বাড়ল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আরও কঠোর তপস্যায় বসবেন। যাতে তিনি স্বর্গের অধিপতি হতে পারেন। এদিকে, দেবরাজ ইন্দ্র সব বুঝতে পেরে বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গের উদ্যোগ নিলেন।
তিনি ঠিক করলেন মুনিদের মতিভ্রম ঘটাতে পারে একমাত্র স্বর্গের অপ্সরারাই।
ঊর্বশী, রম্ভা এঁদের ওপর তিনি দায়িত্ব দিলেন বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভাঙানোর জন্য। কিন্তু মুনির ধ্যান ভাঙাতে এঁরা ব্যর্থ হলেন। অবশেষে দেবরাজের নির্দেশে এলেন মেনকা। মর্ত্যে এসে প্রথমেই তিনি সরস্বতী নদীতে স্নান সেরে শুচিস্নিগ্ধা হলেন। তারপর পঞ্চশরে জর্জরিত বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গ করে পুষ্কর তীর্থে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। স্বর্গের অধিপতি বা ব্রহ্মর্ষি হওয়া এর ফলে কোনওটাই বিশ্বামিত্রের হল না।
সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হল ‘জলবতী’ অর্থাৎ নদী।
তবে, আমরা যে সরস্বতীর আরাধনা করি তিনি বিদ্যার দেবী। জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুল প্রিয়া, পলাশ প্রিয়া প্রভৃতি নামেও পরিচিত তিনি।
এই ঘটনার পর থেকে মুনিঋষিদের কাছেও তিনি শুধু শুচিস্নিগ্ধা নদী রূপেই নয়, শ্রদ্ধা ও সম্মানের মূর্ত প্রতীক রূপে চিহ্নিত হলেন।
বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, তন্ত্র, সংহিতা, রামায়ণ-মহাভারত, সাহিত্য এবং ইতিহাসে দেবী সরস্বতীর এই ধরনের বিভিন্ন কাহিনি এবং বিভিন্ন রূপের কথা আমরা পেয়েছি।
দেবী মহাসরস্বতীর রূপকল্পনায় ভাবা হয়েছে তাঁর গায়ের রং শ্বেতশুভ্র, বসন সাদা এবং তাঁর পদ্মের আসনও সাদা।

বেদের জননী
বেদ যেহেতু চারটি। ঋক, সাম, যজু এবং অথর্ব। দেবী সরস্বতীর চারটি হাতকে চার বেদের প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হয়।
সরস্বতীর নানারকম রূপ আছে। যেমন চতুর্ভুজা সরস্বতী— চার হাতে বই, মালা, বীণা এবং জলপাত্র কোথাও বা পাত্র থাকে না। বীণাটি দু-হাতে ধরা থাকে।
বই হল গদ্যের প্রতীক, মালা কবিতার, বীণা সঙ্গীতের আর জলপাত্র পবিত্র চিন্তার।

সরস্বতীর আরাধনা
ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতিমাসে শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির ওপর তালপাতার দোয়াত-কলম রেখে পুজো করার প্রথা ছিল।
শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, স্লেট, দোয়াত, কলমে দেবী সরস্বতীর পুজো করত। সরস্বতী পুজোর দিন ইংরেজি বইয়ের পুজো নিষিদ্ধ ছিল, কারণ ইংরেজি ম্লেচ্ছ ভাষা।
আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজোর প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।

বৌদ্ধ ধর্মে সরস্বতী
গৌতম বুদ্ধের পরবর্তী যুগের সম্রাট অশোকের কারণে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে।
সেইরকমই পাল রাজারা মহাজান ধর্মালম্বী হলেও তারা শৈব ধর্মকে ও সমানভাবে মর্যাদা দিতেন। বৌদ্ধ ধর্মের ওপর শৈব ধর্মের প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করে। তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের একটি ধারা হল বজ্রযান। এখান থেকেই বৌদ্ধ তান্ত্রিকেরা তাঁদের বজ্রযান গ্রন্থে সরস্বতীকে অন্তর্ভুক্ত করেন।
সেখানে সবার উপরে বোধিসত্ত্ব। তার নিচেই মঞ্জুশ্রী। ইনি বাগ্ দেবতা বা বিদ্যার অধিপতি। বাগেশ্বরী সরস্বতী তাঁর শক্তি।
বৌদ্ধদের সাধন মেলায় রূপভেদে সরস্বতীর পাঁচটি নাম পাওয়া যায়। মহা সরস্বতী, বজ্রবীণা সরস্বতী, বজ্র সারদা সরস্বতী, আর্য সরস্বতী ও আর্যবজ্র সরস্বতী। তন্ত্রে এরা সবাই মাতৃকা মূর্তি।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সরস্বতী উপাসনা ভারত থেকে চিন, জাপান, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশের ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যায়। জাপানের সাতটি সৌভাগ্য দিদি ও দেবতার মধ্যে একজনের নাম বেনতেন। ইনিই ভারতের সরস্বতী (Saraswati Puja 2025)।
বাংলার ধর্মীয় লোকগাথার মধ্যে দিয়ে জাপান ও ভারতের বাইরের বৌদ্ধ দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছিল দেবী সরস্বতীর পুজো। ভিন্ন ভিন্ন নামে হলেও তিনি সেখানে বিদ্যা ও সংস্কৃতির দেবী।
যে কোনও দেশে যেকোনও রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নামে ও প্রথায় তাঁর আরাধনা করা হোক না কেন মূলত তিনি বিদ্যারই দেবী।
মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গৃহস্থ ঘরেও শিক্ষার্থীরা তাঁর আরাধনায় ব্রতী হয়।
অনেক সময় ছোট শিশু বা নবীন পড়ুয়ার হাতে খড়ি ও অভিভাবকেরা এই বিশেষ শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দিয়ে থাকেন।
বিদ্যার সূচনা লগ্ন থেকেই আর দেবীর আশীর্বাদ দিয়ে তার শুভারম্ভ করা এই থাকে অভিপ্রায়।
শুধু বিদ্যাশিক্ষায় নয়, গান-বাজনা বা কোনও যন্ত্রসঙ্গীতে তালিমের সূচনাও অনেকে এই শুভদিনে করে থাকেন।

Latest article