বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যশৃঙ্খলে সবচেয়ে শিখরে থাকা প্রাণীটি হল মানুষ। যার অর্থ মানুষ সর্বভুক অর্থাৎ যা কিছু খাদ্যযোগ্য মানুষ তাই ভক্ষণ করতে পারে বা বলা ভাল খাদ্যশৃঙ্খলের নিচে থাকা সবকিছুই মানুষের খাদ্যের তালিকার মধ্যে পড়ে। কিন্তু তাই বলে মানুষ কি মানুষকেই ভক্ষণ করতে পারে? মানুষ সর্বভুক হলেও সে তার নিজের প্রজাতিকেই ভক্ষণ করবে— সে আবার হয় নাকি! আর শুধু মানুষ কেন, কোনও জীবই নিজের প্রজাতিকে সচরাচর ভক্ষণ করে না, তা সে যতই হিংস্র হোক না কেন। তবে কিছু প্রজাতির পশুতে এমনকী মানুষেও কিন্তু এরকম প্রবণতা থাকে যে তারা নিজের প্রজাতিকেই ভক্ষণ করে। একে বলে ক্যানিবালিজম।
আরও পড়ুন-চল্লিশেও রোনাল্ডো গোল মেশিন
ক্যানিবালিজম চর্চার ইতিহাস
অনেকদিন আগে পড়া এক গল্প মহম্মদ নাজিমউদ্দিনের ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’-তে দেখানো হয়েছিল মানুষ কীভাবে পরিস্থিতির শিকার হয়ে নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে মৃত মানুষের শরীরের নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খেয়েছিল এবং ক্রমে তা অভ্যাসে পরিবর্তিত হয়। ইতিহাস বলে সপ্তম শতকে মুসলিম-কোরাইশদের যুদ্ধের সময় ক্যানিবালিজমের ঘটনা ঘটে। ৬২৫ সালে উহুদের যুদ্ধের সময় হামযা ইবনে আবদু মুত্তালিব নিহত হলে তার হৃৎপিণ্ড ভক্ষণের চেষ্টা করেন কোরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবাহ। পরে তিনি মুসলমান হয়ে যান। ইনি ইসলামি ইতিহাসে উম্মাইয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠা করেন। জেরুজালেমেও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে। মুসলিম পরিব্রাজক ইবনে বতুতা বলেন যে তাঁকে এক আফ্রিকান রাজা সতর্ক করে বলেন যে কাছেই নরখাদক আছে। তবে বতুতা এ-ও বলেন যে আরব ও খ্রিস্টানরা ছিল এর থেকে নিরাপদ কারণ তাদের মাংস ছিল অপরিণত। ইউরোপে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এরকম ঘটনা ঘটে যেখানে হাজারের মতো বিটুমিন-এ সংরক্ষিত মমি মাটির ওপর নিয়ে এসে সেগুলিকে ওষুধ হিসেবে বিক্রি করা হয়। আবার ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির প্রায় ১,০০,০০০ যুদ্ধবন্দি সেনাকে রাশিয়ার সাইবেরিয়াতে পাঠানোর সময় তারা ক্যানিবালিজমের আশ্রয় নিয়েছিল। কারণ ছিল তাদের ক্রমাগত কম পরিমাণ খাবার সরবরাহ ও অসুখে আক্রান্ত হওয়া। মাত্র ৫,০০০ বন্দি শেষপর্যন্ত স্ট্যালিনগ্রাডে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল। ল্যান্স নায়েক হাতেম আলি নামে একজন ভারতীয় যুদ্ধবন্দি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউ গিনি-তে জাপানি সেনাদের মাংস খাওয়ার কথা বলেন। তারা জীবন্ত মানুষের শরীর থেকে মাংস কেটে নিত ও ওই ব্যক্তিকে তারা নালায় ফেলে মারত।
১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপানি সেনা চিচিজিমাতে পাঁচজন আমেরিকান বিমান সেনাকে হত্যা করে খেয়ে ফেলে। বিশ শতকে নরমাংস ভোজন হয়েছে ধর্মীয় কারণে। খরা, দুর্ভিক্ষে ও যুদ্ধবন্দিদের ওপর নির্যাতনের অংশ হিসেবে, যাকে আইনের লঙ্ঘন হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে। আঘোরী নামে উত্তর ভারতের এক ক্ষুদ্র উপজাতি মানুষের মাংস খায় প্রধানত তাদের ধর্মীয় উপাসনার অংশ হিসেবে ও অমরত্ব অর্জনের জন্য। তারা মনে করে এভাবে তারা অতি-প্রাকৃতিক শক্তিও লাভ করবে। তারা মানুষের মাথার খুলিতে খাবার খায় বয়স বেড়ে যাওয়া রোধ করতে ও ধর্মীয় সুবিধা পেতে। ১৯৩০-এর দশকে ইউক্রেনে, রাশিয়ার ভলগা, দক্ষিণ সাইবেরিয়া ও কুবানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। জেমস ডব্লু ডেভিডসন ১৯০৩ সালে তাঁর লেখা বই ‘দ্য আইল্যান্ড অব ফরমোসা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে কীভাবে তাইওয়ানের চিনা অভিবাসীরা তাইওয়ানের আদিবাসীদের মাংস খেয়েছিল ও বিক্রি করেছিল। ১৮০৯ সালে নিউজিল্যান্ডের মাওরি উপজাতিরা নর্থল্যান্ডে দ্য বয়েড নামের একটি জাহাজের প্রায় ৬৬ জন যাত্রী ও ক্রু-কে খুন করে ও তাদের মাংস খায়। মাওরিরা যুদ্ধের সময় তাদের প্রতিপক্ষের মাংসও খায় স্বাভাবিকভাবে। অনেক সময় সাগরযাত্রীরা ও দুর্যোগে আক্রান্ত অভিযাত্রীরাও টিকে থাকার জন্য অন্য সহযাত্রীদের মাংস খেয়েছে। ১৮১৬ সালে ডুবে যাওয়া ফেঞ্চ জাহাজ মেডুসার বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা ক্যানিবালিজমের আশ্রয়ে মৃত যাত্রীদের ভক্ষণ করে টানা চারদিন সাগরে ভেসে ছিল। ১৯৭০-এ খেমর রগ বিদ্রোহের সময় কম্বোডিয়ার একদল সেনা কয়েকজন বিদ্রোহীর যকৃৎ ও হৃৎপিণ্ড কেটে বার করে নিয়েছিল বলে অভিযোগ। যুদ্ধের সময় অথবা পরে শিবিরে ফিরে তারা সেগুলি খেয়েছিল বলেও মনে করা হয়।
ক্যানিবালদের বসতি ও
তাদের অস্তিত্ব
ক্যানিবালিজিমের চর্চা শুরু হয়েছিল লিবিয়া ও কঙ্গোতে বেশ কিছু যুদ্ধে। এক সময় ফিজিকে বলা হত মানুষখেকো দ্বীপ। বিংশ শতকেও এখানে ক্যানিবালিজমের প্রচলন ছিল। শেষ খোঁজ পাওয়া ক্যানিবালদের বাসস্থান ছিল নাইহেহে গুহা। নিউ গিনির পশ্চিমে কোরোয়াই উপজাতির মানুষরা প্রতিশোধ নেওয়ার পদ্ধতি হিসেবে মানুষের মাংস খেয়ে থাকে। এই সম্প্রদায়ে মোটামুটি ৪০০০ মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে। এরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের মাংস খায় বলে ধারণা। ২০০৩-এ দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধের পর রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কঙ্গো প্রশাসনের প্রতিনিধি সিনাফাসাই মাকেলো। সেখানে তিনি দাবি করেছিলেন যে ইতুরি প্রদেশে তাঁর কয়েকজন কর্মীকে জীবন্ত অবস্থায় ছিঁড়ে খেয়েছিল কঙ্গোর বিদ্রোহীরা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তরফে লিবেরিয়ার গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত প্রত্যন্ত জায়গায় চিকিৎসার জন্য যাওয়া কয়েকজন ডাক্তার ক্যানিবালিজম প্রত্যক্ষ করেছিলেন বলে দাবি করেন। এই উদাহরণ থেকে বাদ পড়ে না ভারতও। ভারতেও নাকি অস্তিত্ব আছে ক্যানিবালিজমের। আঘোরি সাধু নামে বিশেষ এক সন্ন্যাসী সম্প্রদায় তাঁদের মার্গ সাধনার পদ্ধতি হিসেবে মৃত মানুষের মাংস খেয়ে থাকেন। আর্মিন মিউইস নামে এক জার্মানের মানুষের মাংস খাওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই। বড় হয়ে এজন্য ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনও দেয় সে। জুটেও যায় এক ‘খদ্দের’। ৪৩ বছরের বার্নড ব্র্যান্ডিস নিজেকে খাওয়ানোর জন্য আবেদন করে। ১২ ইঞ্চি লম্বা ছুরিতে ব্র্যান্ডিসকে কেটে টুকরো করে মিউইস। তারপর সেই টুকরো দিয়েই ডিনার সারে সে। সে এই পুরো ঘটনাটা ভিডিও রেকর্ডিংও করে রাখে। জার্মানিতে ক্যানিবালিজম অপরাধ না হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও মিউইসের নামে শুধু মানুষ খুনের মামলাই দায়ের করা হয়। রামেস্টেইন ব্যান্ডের মেইন টেইল ও ব্ল্যাড বাথ ব্যান্ডের ইটেন গান এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে রচিত। নুকু হিভায় বান্ধবীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়াতে ক্যানিবালদের খপ্পরে পড়েছিলেন স্টিফান রামিন। স্থানীয় একজন ট্যুর গাইড বেড়াতে নিয়ে গিয়ে তাঁর বান্ধবীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করে। ওই অঞ্চলে মানুষের মাংস খাওয়া হয় বলে নিজেই দাবি করে সে। কোনওভাবে সে-যাত্রা রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। ফ্লোরিডার রাস্তায় রোনাল্ড পোপ্পো নামে এক ব্যক্তির মুখ কামড়ে ছিঁড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এক উলঙ্গ ব্যক্তি। রোনাল্ডকে বাঁচাতে হামলাকারীকে গুলি করে মারে পুলিশ। জানা গিয়েছে ওই ক্যানিবালের নাম রুডি ইউগিন। পাপুয়া নিউ গিনির উপত্যকাতেই রয়েছে এমন এক উপজাতি যা নরখাদক হিসেবেই পরিচিত। ফোর নামের এই বিশেষ উপজাতি দেশের পূর্বাঞ্চলেই বসবাস করত যারা সাধারণত নির্জনেই থাকতে পছন্দ করত। এদের অত্যন্ত পছন্দের খাবার হল মানুষের মস্তিষ্ক ও মাংস। জানা যায়, যখনই ফোর উপজাতির কেউ মারা যেত, তারা তাদের প্রিয়জনকে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের মৃতদেহ খেয়ে নিত। মৃতদেহের মস্তিষ্কের মাংস খেত শিশু এবং মহিলারা। শরীরের বাকি অংশের মাংস খেত এই উপজাতির পুরুষরা। তবে মৃতদেহের মস্তিষ্ক খাওয়ার ফলে এদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। দেখা দেয় এক ভয়ঙ্কর রোগ যার নামা ‘কুরু’। কুরু নামের এই বিশেষ রোগে আক্রান্ত হন এই উপজাতির বেশিরভাগ মানুষই। প্রায় ২ শতাংশ মানুষ মারাও যায় এই রোগে। ১৯৫০-এর দশকে এই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয় এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই কুরু-মহামারীও হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু ফলস্বরূপ এটি ফোর উপজাতির শরীরে একটি বিশেষ অণুর প্রতি অনাক্রম্যতা তৈরি করে। এই অণু কুরু, ম্যাড কাউ ও ডিমেনশিয়া রোগের প্রধান কারণ। এ ছাড়াও এর প্রভাবে এই উপজাতির জিনে এমন অন্যান্য অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যা মানুষের সাধারণ জিন থেকে ছিল একেবারেই আলাদা।
ড্রেঞ্জেল ভারগাস নামের ভেনেজুয়েলার একজন ব্যক্তি ২ বছরে কমপক্ষে ১০ জন ব্যক্তিকে খুন করে খেয়ে ফেলেন যাকে ১৯৯৯ সালে আটক করা হয়। জেফরি ডাহমার নামের আমেরিকান একজন ব্যক্তির বাড়িতে মানুষের হাড় ও মাংস পাওয়া যায়। তাকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৯১ সালে। পিটার ব্রায়ান নামের একজন ব্রিটিশকে ইস্ট লন্ডনে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয় যিনি তাঁর বন্ধুকে খুন করেন ও খেয়ে ফেলেন। নিজের মাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ খাওয়ার অভিযোগে স্পেনের আলবার্তো সানচেজ গোমেজ নামে এক যুবককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল তার দেশের আদালত। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্পেনের পূর্ব মাদ্রিদে এ ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় গোমেজকে আটকের পর তার মায়ের মরদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাড়ির পাশ থেকে কিছু প্লাস্টিকের পাত্র থেকে উদ্ধার করা হয়। সে-সময় গোমেজ মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিলেন বলে দাবি করলেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে।
আরও পড়ুন-৪৫০ শ্রমিক পরিবারকে চা-সুন্দরী প্রকল্পে বাড়ি দেবে রাজ্য সরকার
নরমাংস ভক্ষণের কারণ
নরমাংস ভক্ষণের কারণ হিসেবে সেগুলি সামনে আসে সেগুলি হল মূলত সাংস্কৃতিক রীতি হিসেবে অনেক প্রজাতির কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা, চরম পরিস্থিতিতে দুর্ভিক্ষের সময় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নরমাংস ভক্ষণ করা হয়েছে বহু ক্ষেত্রে। এ ছাড়া মানসিক সমস্যার কারণে বা সামাজিক আচরণের বিচ্যুতির কারণেও অনেক সময় মানুষ নরমাংস ভক্ষণ করে। সবশেষে নরমাংস ভক্ষণে বহুদিন যৌবন ধরে রাখা যায় বলেও অনেক সম্প্রদায়ের মানুষ মনে করে বলে জানা যায়।
প্রাথমিকভাবে নরমাংস ভক্ষণের রীতি দুই প্রকার— প্রথমত, একই সম্প্রদায়ের মানুষের মাংস খাওয়া; অন্যটি হচ্ছে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের মাংস খাওয়া। তবে এই অভ্যাসে দুই ধরনের নৈতিক পার্থক্য আছে। একটি হচ্ছে একজনকে হত্যা করে তার মাংস খাওয়া ও আরেকটি হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে মৃত মানুষের মাংস খাওয়া।
নরমাংসের পুষ্টিগুণ
প্রত্নতাত্ত্বিক জেমস কোল মানবদেহের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করে উল্লেখ করেছেন যে, নৃতাত্ত্বিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ড অনুসারে, মানুষের প্রায় সমস্ত ভোজ্য অংশ কখনও কখনও খাওয়া হত শুধুমাত্র কঙ্কালের পেশি, টিস্যু (একটি সংকীর্ণ অর্থে ‘মাংস’ বা ‘মাংস’) নয়, ‘ফুসফুস, যকৃৎ, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, স্নায়বিক টিস্যু, অস্থিমজ্জা, যৌনাঙ্গ এবং ত্বক’ আর সেইসঙ্গে বৃক্কও ছিল মানুষের ভোজ্য। একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য এই সমস্ত ভোজ্য অংশের সম্মিলিত পুষ্টির মান প্রায় ১,২৬,০০০ কিলোক্যালরি (kcal)। যেহেতু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক শক্তির চাহিদা প্রায় ২৪০০ কিলোক্যালরি, তাই একটি মৃত পুরুষের দেহ ২৫ জন পুরুষের একটি দলকে দু’দিনেরও বেশি সময় ধরে খাওয়াতে পারত, যদি তারা শুধুমাত্র মানুষের মাংস ছাড়া আর কিছুই না খেয়ে থাকে। এখানে একটি কথা না উল্লেখ করলেই নয় যে, মানুষের অঙ্গসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হল মানুষের যকৃৎ ও হৃৎপিণ্ড।
চিনে, বহু শতাব্দী ধরে চিকিৎসার অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে নরমাংস ভক্ষণ অনুশীলন করা হয়েছিল। মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের যকৃতের অংশ-সহ তাদের নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে তাদের অসুস্থ আত্মীয়দের নিরাময়ের জন্য সেগুলিকে সেদ্ধ করে খাওয়াতেন। শিশুদের কখনও কখনও হত্যা করা হত কারণ তাদের হৃৎপিণ্ড সেদ্ধ করে খাওয়াকে একজনের জীবন বাড়ানোর একটি ভাল উপায় হিসাবে বিবেচনা করা হত। ট্যাং-এর সম্রাট উজং তাঁর প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ‘পনেরো বছর বয়সি ছেলে ও মেয়েদের যকৃৎ ও হৃৎপিণ্ড’ পাঠাতে, এই আশায় যে এই ওষুধ তাঁকে নিরাময় করবে!
আরও পড়ুন-মুজিবের স্মৃতি ভাঙার নিন্দা, বাংলাদেশকে কড়া বার্তা ভারতের, তলব রাষ্ট্রদূতকে
নরমাংস ভক্ষণের এই প্রথা বহু প্রাচীন যা শুধু গোটা পৃথিবীর নয়, ভারতের সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাসে ঠিক একইভাবে বহমান। তবে সত্যিই মানুষের মাংস মানুষকে বলীয়ান করে কি না, এই মাংস যৌবন অক্ষুণ্ণ রাখতে আদৌ সাহায্য করে কি না তা নেহাত মুচমুচে গল্প হিসেবে ভাল লাগলেও যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এটি তর্কের দাবি রাখে।