দাঁতের যত্নে

দাঁতব্যথা হেলাফেলার নয় কারণ রোগগ্রস্ত দাঁত থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে সুস্থ দাঁতেও। তাই দাঁতের স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে পালিত হয় জাতীয় দাঁতব্যথা দিবস। কেন হয় দাঁতে ব্যথা? প্রতিরোধ করবেন কীভাবে? লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেন এমন মানুষ কমই রয়েছেন তাই দিনে দিনে বাড়ছে দাঁতের সমস্যা। তাই দাঁতের বিভিন্ন রোগ এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ফেব্রুয়ারি মাসে পালিত হয় ন্যাশনাল টুথএক ডে বা জাতীয় দাঁতব্যথা দিবস। শুধু দাঁত নয়, মুখের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতেও দিনটি পালন করা হয়।
কী কী করা যেতে পারে এই দিনটায়। অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের দাঁতের সমস্যাগুলিকে জানা এবং বোঝা। সেই সঙ্গে দাঁতের যত্ন এবং দাঁতব্যথা প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা।
দাঁতব্যথা কী
দাঁতের সবচেয়ে ভেতরের স্তরটি হল ডেন্টাল পাল্প যা সংবেদনশীল স্নায়ু এবং রক্তনালি দিয়ে তৈরি। এই অংশে প্রদাহ শুরু হলে তখন দাঁতে ব্যথা হয়। দাঁতের ভেতরে এবং আশেপাশে ব্যথা অনুভূত হয় বা অস্বস্তি হতে থাকে। ব্যথা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং কখনও একটানা বা কখনও মাঝে-মাঝেও হতে পারে। দাঁতের স্নায়ুমূলে জ্বালাপোড়া হয়। দাঁতব্যথা আসলে একটি উপসর্গ যা থেকে বোঝা যায় যে কিছু একটা সমস্যা রয়েছে তখন অবিলম্বে চিকিৎসক বা ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন-আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা, বিদেশি নির্বাচনে বড় গলদ, সরব প্রাক্তনরা

দাঁতব্যথার উপসর্গ
কম্পনজনিত ব্যথা
হালকা থেকে তীব্র একটানা কম্পনজনিত বা তীব্র ব্যথা।
সংবেদনশীলতা
গরম বা ঠান্ডা খাবার খেলে বা সাধারণ তাপমাত্রার জল খেলেও দাঁতে সংবেদনশীলতা বা সেনসিটিভিটি অনুভূত হয়।
অস্বস্তি
দাঁত বা চোয়ালে সাধারণ অস্বস্তি, চাপ, অথবা মৃদু ব্যথা। ওই দাঁতে চাপ দিলে বা ওই পাশ দিয়ে খাওয়াদাওয়া করলে ব্যথার অনুভূতি।
দাঁতফোলা
আক্রান্ত দাঁতের চারপাশের মাড়ি এমনকী মুখও ফুলে যেতে পারে। দাঁতের ভেতরে বা চারপাশে একটা মৃদু টান ও হালকা অনুভূতি সেই সঙ্গে ব্যথা।

আরও পড়ুন-দোহা ডায়মন্ড লিগ দিয়ে ফিরছেন নীরজ

দাঁতব্যথার কারণ
দাঁতব্যথার সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ হল এনামেলের ক্ষয় এবং সেই কারণে তৈরি হওয়া গর্ত। এছাড়া দাঁতে আঘাত লাগা, গর্ত, দাঁতের সংবেদনশীলতা, দাঁতের ফিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং মাড়ির রোগ ইত্যাদি কারণও রয়েছে।
দাঁতে গর্ত বা ক্যাভিটি
দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে গেলে দাঁতে ছোট গর্ত তৈরি হয় সেটাই হল ক্যাভিটি। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে দাঁতের ব্যথা শুরু হবার আগেই কিন্তু চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে গর্তগুলি খুব যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং আপনার দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। খাবার চিবিয়ে খাওয়ার সময় যদি আপনি তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে এটি দাঁতের ব্যথার লক্ষণ হতে পারে।
ফিলিং যখন ফেল
দাঁতের ফিলিং বা ক্রাউন কোনও কারণে আলগা হয়ে গেলে বা ভেঙে গেলে ডেন্টিনের মুখ খুলে যায় তখনই দাঁতে সংবেদনশীলতা হয় এবং ব্যথা শুরু হয়। ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে দাঁতের নিচের দিকে এগতে থাকে। তাই ফিলিং আলগা হলে বা ফিল করার পরেও ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
দাঁতে ফোড়া
দাঁতের ফোড়া বা পেরিয়াপিকল অ্যাবসেস দাঁতব্যথার অন্যতম কারণ। দাঁতের স্নায়ু কাজ করা বন্ধ করে দিলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাঁতে ফোঁড়া হয়। ফোঁড়া সংক্রমিত হয়ে পুঁজ হয় এবং আশপাশে ছড়িয়ে যায়। ওই অংশ ফুলে যায়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এই ফোঁড়াই মারাত্মক হতে পারে।
এনামেল ক্ষয়
দাঁতের এনামেলের ক্ষয় হলে ডেন্টিন বা দাঁতের ভিতরের স্তরটি খুলে যায় যা দাঁতে সেনসিটিভিটি তৈরি করে। দাঁত অরক্ষিত এবং দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে দাঁতের ব্যথা শুরু হয়। সেই ব্যথা তীব্রতর হতে থাকে।
সংবেদনশীলতা
দাঁতের ভিতরের স্তর অর্থাৎ ডেন্টিনের মুখ খোলা থাকলে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং ব্যথা হয় তবে তা স্থায়ী হয় না কিছুক্ষণ পরে কমে যায়। এই সেনসিটিভিটি খুব গরম বা ঠান্ডা কিছু খেলে বা জল খেতে গিয়ে, ব্রাশ করতে গিয়েও হতে পারে। যদি দাঁত সংবেদনশীল হয় তবে খুব গরম বা ঠান্ডা খাবার, পানীয় এড়িয়ে চলুন, নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। সেনসিটিভ দাঁতের জন্য টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
দাঁতফাটা
দাঁত যদি কোনও আঘাতপ্রাপ্ত হয়, কোনও কারণে ফেটে যায় তাহলে তাকে বলে ক্র্যাকড টুথ সিনড্রোম। ফাটল ছোট হলে খুব বেশি ক্ষতি হয় না কিন্তু ঠিকমতো ব্যবস্থা না নিলে ব্যথা হতে পারে অন্য দাঁতেও ফাটল ধরতে পারে।
আক্কেল দাঁত
আক্কেল দাঁত বা থার্ড মোলার এটা হল স্থায়ী দাঁতের একবারে শেষ সেটের দাঁত। যেটা পরে বেরয় এবং পর্যাপ্ত জায়গা পায় না। ফলে বেড়ে ওঠার সময় ব্যথা হয় এবং খাবারের অংশবিশেষ আটকে যন্ত্রণা শুরু হয়। এ থেকে মাড়িতেও সংক্রমণ হয় পাশের দাঁত ক্ষয়ে যায় খুব ব্যথা বা যন্ত্রণা হয়। এছাড়া সাইনোসাইটিস জিঞ্জিভাইটিস, পেরিওডনটাইটিস ইত্যাদির দাঁতের রোগের কারণেও দাঁতের যন্ত্রণা হয়।

আরও পড়ুন-স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ১৩ নামী সংস্থার ৫.২৫ কোটির লেটার্স অফ ইনটেন্ট স্বাক্ষর

দাঁত সুস্থ রাখতে
আমাদের মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি বা ওরাল হেল্থ মেনে চলা জরুরি। ডেন্টাল চেক-আপ করান।
দিনে দুবার ব্রাশ এবং ফ্লস করুন এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন।
ভিটামিন বি, সি, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরে থাকে।
চিনিযুক্ত খাবার বা পানীয়, মিষ্টি এগুলো কম খান। খেলে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন।

Latest article