যাত্রীসুরক্ষায় রেলের অন্তহীন ব্যর্থতা

মুখেই শুধু আস্ফালন। যাত্রী সুরক্ষার গালভরা প্রতিশ্রুতি কিন্তু আসলে সবই ফাঁকা আওয়াজ।

Must read

প্রতিবেদন: মুখেই শুধু আস্ফালন। যাত্রী সুরক্ষার গালভরা প্রতিশ্রুতি কিন্তু আসলে সবই ফাঁকা আওয়াজ। মোদি সরকারের রেলমন্ত্রক যে যাত্রী সাধারণের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে মোটেই আগ্রহী নয় তার আবার প্রমাণ মিলল শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা। একের পর এক ট্র্যাজেডির শিকার যাত্রীসাধারণ।

আরও পড়ুন-সম্মানের ডার্বি জয় লাল-হলুদের

২০২৩-এর ২ জুন: সন্ধ্যায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল ওড়িশার বালেশ্বর। বাহানগায় মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ২৯৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়। আহত হয়েছিলেন প্রায় ১২০০ জন। শুধু করমণ্ডল এক্সপ্রেস নয়, ২০২৩ সালে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৭টি রেল দুর্ঘটনা হয়েছে ভারতে। ওই বছরে শুধু জুনেই ঘটেছিল ৬টি দুর্ঘটনা।
৮ জুন: বালেশ্বেরের পরের দুর্ঘটনাটি ঘটে ৬ দিনের মধ্যেই। ৮ জুন দুপুর ৩টে নাগাদ উটি থেকে মেট্টুপালায়ামগামী নীলগিরি মাউন্টেন রেলের একটি কামরা কুন্নুরের কাছে লাইনচ্যুত হয়।
৯ জুন: পরের দুর্ঘটনা ১ দিন পরেই। লাইনচ্যুত হয় বিজয়ওয়াড়া-চেন্নাই সেন্ট্রাল জনশতাব্দী এক্সপ্রেসের একটি কামরা। চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে কারশেডের দিকে যাচ্ছিল ওই ট্রেন।
১১ জুন: চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে তিরুভাল্লুর যাওয়ার পথে লোকাল ট্রেনের একটি কোচ বেসিন ব্রিজ স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়।
২২ জুন: চেন্নাই থেকে মুম্বইগামী লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেসের একটি কামরায় আচমকা আগুন লেগে যায়।
২৫ জুন: বাঁকুড়ার ওন্দাগ্রাম স্টেশনের কাছে লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িকে পিছন দিক থেকে সজোরে ধাক্কা মারে অন্য একটি মালগাড়ি। মালগাড়ির ইঞ্জিন-সহ বেশ কয়েকটি বগি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে। রীতিমতো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২টি মালগাড়ির মোট ১৩টি বগি। রেলের তথ্যের দাবি, এই দুর্ঘটনার জেরে রেলের ১০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছিল। তবে করমণ্ডলের দুর্ঘটনা ছাড়া, ২০২৩ সালের জুন মাসে ঘটা বাকি পাঁচটি ট্রেন দুর্ঘটনার একটিতেও কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
৭ জুলাই: পরের দুর্ঘটনা ফলকনামায় অগ্নিকাণ্ড। তেলঙ্গানার ইয়াদাদ্রি-ভুবনগিরি জেলার বোমাইপল্লি এবং পাগিদিপল্লির মধ্যে হাওড়াগামী ফলকনামা এক্সপ্রেসের তিনটি কামরায় আগুন লাগে। কেউ হতাহত হয়নি।
২৬ অগাস্ট: দুর্ঘটনার কবলে ভারতগৌরব ট্রেন। ভোরবেলায় লখনউ-রামেশ্বরম ভারত গৌরব ট্রেনের একটি কামরায় আগুন লাগে। মাদুরাই স্টেশনের কাছে। দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যু হয় ৯ জনের। আহত ২০ জনেরও বেশি। রেলের তরফে জানানো হয়েছিল, কামরায় একটি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেখানেই আগুন লেগে বিপত্তি হয়।

আরও পড়ুন-উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে আরও বেশি করে থাকবেন অধ্যাপকরা: ব্রাত্য

২৩ সেপ্টেম্বর: ভালসাদ স্টেশন পার হওয়ার সময় তিরুচিরাপল্লী-শ্রীগঙ্গানগর হামসফর এক্সপ্রেসের দু’টি কামরায় আগুন ধরে যায়। তবে সেই ঘটনায় কেউ মারা যাননি।
২৬ সেপ্টেম্বর: রাতে একটি লোকাল ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে মথুরা স্টেশনের ২এ প্ল্যাটফর্মে উঠে যায়।
১১ অক্টোবর: রাত ১০টা নাগাদ আনন্দ বিহার টার্মিনাল-কামাখ্যা জংশন নর্থ-ইস্ট এক্সপ্রেসের ছ’টি কামরা বিহারের বক্সার জেলার রঘুনাথপুর স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়। প্রাণ হারান ৪ যাত্রী। জখম ৭০ জনেরও বেশি।
২৯ অক্টোবর: রাত ৯টা নাগাদ অন্ধ্রের কোট্টভালাসা স্টেশনের কাছে বিশাখাপত্তনম-রায়গাদা এবং বিশাখাপত্তনম-পালাসা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সংঘর্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত প্রায় ৫০।
৩১ অক্টোবর: গাজিপুর থেকে দিল্লির আনন্দ বিহারগামী সুহেলদেও সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের কাছে লাইনচ্যুত হয়। নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়ার কাছে দিল্লি-দ্বারভাঙা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে আগুন ধরে যায়। জখম হন বেশ কয়েকজন যাত্রী।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪:‌ ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের বিদ্যাসাগর ও কাশিটার স্টেশনের মাঝে লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় দুই যাত্রীর মৃত্যু হয়। ডাউন অঙ্গ এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ভুয়ো খবর ছড়ানোয় যাত্রীরা চেন টেনে ট্রেন থামায়। ট্রেন থেকে নেমে রেললাইন ধরে হাঁটার সময় আসানসোল–ঝাঝা ট্রেনের ধাক্কায় দু’জন মারা যান। আহতও হন অনেকে।
এরপরেই ১৭ জুন, সোমবার সকালে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস।‌‌‌‌‌‌
২২ জানুয়ারি ২০২৫:‌ জলগাঁওতে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে পুষ্পক এক্সপ্রেস। প্রাণ হারান ১৩, গুরুতর জখম হন ১৫ জন।

Latest article