প্রতিবেদন : বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে আর্তনাদ। চূড়ান্ত ডামাডোল চলছে দলে। আদি-নব্য-তৎকাল বিজেপির দ্বন্দ্ব তো আছেই, সেই সঙ্গে অলিতে গলিতে গজিয়ে উঠেছে বিজেপির নানা লবি। ক’দিন আগেই বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ‘গদ্দার’দের বিরুদ্ধে তাল ঠুকেছিলেন। তার পাল্টা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর পোস্টিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তাঁর প্রার্থীপদ নিয়েও উঠে পড়ে প্রশ্ন। এবার সুকান্ত মজুমদারের এলাকার বিজেপি বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায় বেসুরো গাইতে শুরু করলেন। বিজেপিতে বিধায়কদের সিদ্ধান্তের কোনও মূল্য নেই বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। এ-বিষয়ে তৃণমূলের স্পষ্ট কথা, এইসব নিতান্তই বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের বিধায়ক নিজেই বলছেন মতামত নেওয়া হচ্ছে না। যাঁরা ভোটে সাহায্য করেননি তাঁদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে মাথায়। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, বিজেপির মধ্যে এসব গোষ্ঠীবাজি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। আমাদের নেত্রী বলেন, আপনারা সবাই মতামত জানান। মতামত জানানোর সম্মান এখানে রয়েছে। আর ওখানে বিজেপির বিধায়ক আর্তনাদ করছেন, জানেনই না কোথায় কী হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-দেউচা-পাঁচামির কাজ শুরু হয়েছে দ্রুতলয়ে, ১৪৩ জন পেলেন সংশোধিত পরচা
বিজেপি বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায় বলছেন, দলে বিধায়কদের সিদ্ধান্তের কোনও মূল্য নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি পোস্ট করেন, ৪১ নম্বর গঙ্গারামপুর বিধানসভার আজকে মণ্ডল সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হল। দেখলাম নির্বাচিত বিধায়কদের দলে কোনও মূল্য নেই। আমি দেখলাম করদহ, ভিকাহারের মণ্ডল সভাপতিকে আমি চিনিও না, জানিও না।
তিনি আরও লেখেন, আমার দল সবাই জানে। আমি শুধু বিধায়ক নই, একজন সংগঠকও। দলের অত্যন্ত পুরনো সংগঠকদের নাম দিয়েছিলাম মণ্ডল সভাপতি হিসাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ডিআরডিও এবং জেলা সভাপতি, যাঁরা আমাকে গত বিধানসভায় হারানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের কথায় সভাপতি করেছে। কারণ তাঁরা আগামী নির্বাচনে হারানোর চেষ্টা করবেন। আমি ভীষণভাবে দুঃখিত ও সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানাচ্ছি। আশা করি দল নির্বাচন জয়ের স্বার্থে বিবেচনা করবে।
আরও পড়ুন-যোগেশে সরস্বতী পুজো বিভ্রান্ত করছে বিজেপি
গঙ্গারামপুর এই বিধায়ক এই পোস্ট করে বুঝিয়ে দিলেন, দলে অন্দরে তৈরি রয়েছে একাধিক গোষ্ঠী। বহু লবিতে বিভক্ত বিজেপি। অনেকেই বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ থেকে বারবার বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলছেন।
অন্যদিকে জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ মামলার চার্জশিটে সুপারিশের ক্ষেত্রে গদ্দার অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী, ভারতী ঘোষদের নাম থাকায় কটাক্ষ করে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছিলেন। তার পাল্টা বিজেপিই অভিযোগ করে, ২০০৯ সালে সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তৎকালীন জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহিকে ধরে স্ত্রী দেবপ্রিয়া চট্টোপাধ্যায়কে প্রাথমিক স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রভাব খাটিয়ে একই জেলায় তিনবার ট্রান্সফারও করিয়েছেন। পরবর্তীকালে কলকাতার স্কুলে (উল্টোডাঙা অঞ্চলে) ট্রান্সফার করে এনেছেন। বিজেপির একাধিক গ্রুপ-সহ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এসব তথ্য দেখে প্রশ্ন উঠছে, কোন মন্ত্রবলে জগন্নাথের স্ত্রীকে এতবার সহানুভূতি দেখানো হল? শুধু তাই নয়, টাকার বিনিময়ে দলে পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। আচমকাই সাংবাদিকতা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই সিউড়ি থেকে প্রার্থী হয়ে যান জগন্নাথ। হেরে যান। এখন দলের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে। এতসব কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায়?