প্রতিবেদন : বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভায় কার্যত ঝোড়ো ব্যাটিং করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। গদ্দার-সহ বিরোধী দলের কুৎসার কড়া জবাবও দিলেন। এদিন ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিটের বক্তব্যে রাজ্যের উন্নয়ন থেকে যোগী সরকারের চূড়ান্ত অবহেলা— কুম্ভের ভয়াবহ বিপর্যয়, রেলের গাফিলতি থেকে ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি ও একশ্রেণির ধর্মকে অকারণে আঘাত করে রাজ্যকে অশান্ত করে তোলার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দলনেতার কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন।
তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দে-লাইনে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও কিছুকে পরোয়া করেন না। একটার পর একটা তথ্য তুলে ধরে বিরোধীদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) বলেন, জনগণ যখন সঙ্গে আছে তখন মমতা ব্যানার্জি একটা ডাক দেবে তখন দেখিস। এখন ডাক দিচ্ছি না তাই।
আরও পড়ুন-মহাকুম্ভ এখন মৃত্যুকুম্ভ, কেন্দ্র-যোগী সরকারকে তির ছুড়লেন মুখ্যমন্ত্রী
হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমাকে জ্ঞান দেবেন না। বলেছেন, এখানে নাকি সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয়নি। সব জায়গায় হয়েছে। একটা জায়গায় কী হয়েছে তা নিয়ে বাংলাটাকে বদনাম করলেন, হিন্দুধর্মকে বদনাম করলেন! আপনারা একটা ধর্মকে বিক্রি করে খাচ্ছেন। আমরা ধর্মকে বিক্রি করে খাই না। আশাকরি ধর্ম নিয়ে বকধার্মিকদের উত্তর আমি দিতে পেরেছি। আমাকে মুসলিম লিগ বলছেন। বেলুন ফাঁস করব? অন্য দলকে হারানোর জন্য আপনারা তাদের সাহায্য নেন। যাদের বিরুদ্ধে এত বাজে কথা বলছে তারা যদি একটা আন্দোলনের ডাক দেয়, সামলাতে পারবেন তো? পঞ্চানন বর্মার ছুটি নিয়ে যদি এইধরনের রাজনীতি করেন তাহলে ভোটের সময় পারবেন তো রাজবংশী দের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে।
ফ্রিডম অফ স্পিচ মানে এটা নয় যে কাউকে আঘাত করা, হাউসকে ভাগ করা, ফ্রিডম অফ স্পিচ মানে হেট স্পিচ নয়। তাঁর সংযোজন, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের ছাত্রী ছিলাম না। আমি যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল’কলেজের যোগমায়া কলেজের ছাত্রী ছিলাম।
আরও পড়ুন- কলকাতা পুলিশের মুকুটে আরও একটি সাফল্যের পালক, ৪১ দিনেই বড়তলা ধর্ষণ-কাণ্ডে ফাঁসির সাজা ঘোষণা আদালতের
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজস্ব মেজাজে বলেন, আমি নাকি হিন্দু ধর্মকে তাচ্ছিল্য করি? আমাকে শুনতে হবে যে জম্মু কাশ্মীরের জঙ্গিদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক? বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে থাকি? যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি এক মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে দেব। আমি প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি লিখে জানাব যে যদি জঙ্গিদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে চলে যাব।
ওঁরা বলছেন আমিও নাকি কাগজ ছিঁড়েছি। আপনারা তো এখানে এতজন আছেন আর আমি যখন কাগজ ছিঁড়ে ছিলাম আমি তখন একা ছিলাম। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস— সবাই মিলে আমাকে একটা কথা পর্যন্ত বলতে দিত না। একটা মোশন আনতে দিত না, একটা প্রস্তাব পর্যন্ত আনতে দিত না। বাম জমানার তুঘলকি কার্যকলাপের নিদারুণ উদাহরণ তুলে ধরে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বলেন, (বিধানসভায় চেয়ার-টেবিল ভাঙার প্রসঙ্গে), আমি নাকি চেয়ার-টেবিল ভেঙেছি! আমি এর প্রমাণ দেওয়ার কথা অধ্যক্ষকে বলেছি। আমি সেদিন সিঙ্গুর থেকে এখানে এসেছিলাম। আমাকে সিঙ্গুরে থাকতে দেয়নি। আমি এখানে তখন বিরোধী দলনেতা পার্থ দার (পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের) সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।
রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কতদিন বলেছি একটা গঙ্গাসাগর সেতু করে দাও। কই হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক বিরোধী দলনেতা, একবার তো দিল্লিকে বলতে পারতেন যে টাকা দিতে! বলেননি। আমরা নিজেরাই টাকা দিয়ে করছি। গদ্দারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দিঘায় জগন্নাথধাম নিয়ে বলেছেন, যেদিন হবে সেদিন নাকি বসে থাকবেন। সাহস থাকলে বুকের পাটা থাকলে আটকে দেখান।
তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ঋণ নিয়ে কথা বলছো। তোমার কেন্দ্রের ঋণ কত? আমাদের এবছরও ৭৫ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে ঋণ শোধ করার জন্য। তুমি তো এখন গেরুয়া কমরেড। বাংলার ঋণ নিয়ে বল। তো, কেন্দ্রের ঋণ কত?
যারা মাঝে মাঝে নাটক করে সরকারি (রাজ্য) কর্মচারীদের মাথা খারাপ করেন তাদের জন্য বলছি। সিপিএমের আমলে ডিএ দেওয়া হয়েছে ৩৫ শতাংশ। ২০১১ সাল থেকে ডিএ বাবদ ২০২৫-’২৬ সাল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ কোটি টাকা।