প্রতিবেদন : ভোর ৩-৪৫ নাগাদ বাইপাসে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে মেট্রোর ৭ নম্বর পিলারে গাড়ির ধাক্কা। দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটি। পুলিশ ওই গাড়ি থেকে দুই মধ্যবয়সি ব্যক্তি এবং এক কিশোর-কে উদ্ধার করে। আর সেই দুর্ঘটনা থেকে বেরিয়ে এল আরও এক ভয়ঙ্কর কাণ্ডের কথা! বাইপাস থেকে ঘটনার মোড় নিল ট্যাংরায়!
আরও পড়ুন-বেআইনি অর্থ উদ্ধার কীভাবে রাজ্যের কাছে শিখুক কেন্দ্র
দুর্ঘটনায় আহতদের তড়িঘড়ি বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় পুলিশ। জানা যায় মধ্যবয়সি দুই ব্যক্তি সম্পর্কে দুই ভাই। প্রণয় দে ও প্রসূন দে। প্রণয় পুলিশকে বলেন ট্যাংরায় বাড়িতে যান। বলেই জ্ঞান হারান তিনি। পুলিশ দেরি না করে তড়িঘড়ি পৌঁছয় ট্যাংরার অটল শূর রোডের ওই বাড়িতে। চারতলা বাড়ির দোতলার তিনটি ঘর থেকে মেলে তিনজনের দেহ! দুই মহিলা ও এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদের মধ্যে প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণার কবজিতে দেখা গিয়েছে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন। কিশোরী প্রসূনের মেয়ে প্রিয়ঙ্গদার হাতের শিরাকাটা। মুখে গ্যাঁজল্যা ছিল। প্রসূন দে-র স্ত্রী রোমির নিথর দেহ পড়ে ছিল অপর একটি ঘরে। খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) রূপেশ কুমার, পুলিশের হোমিসাইড শাখার সদস্যরা, ডগ স্কোয়াড এবং ফরেনসিক টিম। সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ঘটনা রহস্যজনক। খুন নাকি আত্মহত্যা? নাকি ব্যবসায়িক লোকসানের কারণে পরিকল্পিত ঘটনা— সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে, তদন্তকারী দল ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে একটি পায়েসের বাটি। তাতে মেশানো ছিল ঘুমের ওষুধ। প্রথমে দুর্ঘটনা তার সূত্র ধরে পরিবারের তিন সদস্যের দেহ উদ্ধার। রহস্যজনক ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে একাধিক প্রশ্ন।
প্রশ্ন ১ : রাত পৌনে একটা নাগাদ গাড়ি বের করলেন প্রসূন দে। ভাই প্রণয় ও ভাইয়ের ছেলেকে নিয়ে বেরোন। গাডি-দুর্ঘটনা হয় ভোরে। মাঝের দু’ঘণ্টা তাঁরা কোথায় ছিলেন?
প্রশ্ন ২ : চারতলা বাড়ির তিনতলায় তিনটি আলাদা ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনজনের মৃতদেহ। কিন্তু বাড়ির দোতলাতেও মিলেছে রক্তের দাগ। দোতলায় রক্তের দাগ কেন?
প্রশ্ন ৩ : কিশোরীকন্যাকে বিষ দিল কে? মুখে গ্যাঁজলা বের হল কেন?
প্রশ্ন ৪ : একজন যখন শিরা কাটছিল, তখন একজন কি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন?
প্রশ্ন ৫ : দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির ভিতরে সিটে ছিল কাঠ ও ক্রিস্টালের একাধিক হ্যান্ডব্যান্ড। হ্যান্ডব্যান্ড তো হাতে থাকার কথা। তবে হ্যান্ডব্যান্ড কাদের?
প্রশ্ন ৬ : দুর্ঘটনায় আহত এক ভাই জানিয়েছিলেন, তাঁরাও আত্মহত্যাই করতে চেয়েছিলেন। তাহলে তাঁরা সিটবেল্ট লাগালেন কেন, কেনই বা বাড়ির বাইরে এলেন?
প্রশ্ন ৭ : স্থানীয় এক কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ১০-১২ জন দফায় দফায় দুপুরে বিকেলে ও রাতে ট্যাংরার বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু বেল বাজিয়েও বাড়িতে কারও সাড়া পাননি তাঁরা। কারা তাঁরা?
প্রশ্ন ৮ : হাসপাতালে ভর্তি কিশোরের হাতে অসংখ্য কাটা-চিহ্ন। সেগুলি কোনওটাই গাড়ি দুর্ঘটনার নয়, জানিয়েছে হাসপাতাল। তাহলে কারণ কী?
এমন একাধিক প্রশ্ন ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। উত্তর খুঁজছে পুলিশ। বাড়িতে ঢোকার মূল দরজার সামনে থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বসানো আছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশের স্ক্যানারে রয়েছে ওইসব সিসিটিভির ফুটেজ।