তারকনাথ মন্দির
দেশে যে কয়েকটা জাগ্রত মন্দির রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম দেবাদিদেব মহাদেবের তারকেশ্বরের তারকনাথ মন্দির। সারাবছর এই শিবমন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। বিশেষ করে শিবরাত্রির দিন, শ্রাবণ মাসের প্রতিটি দিন, চৈত্র সংক্রান্তির দিন। সেইসঙ্গে প্রত্যেক সোমবার লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম দেখা যায়। মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে হুগলি জেলার রামনগর অঞ্চলে বিষ্ণুদাস নামে এক স্থানীয় ক্ষত্রিয় রাজা রাজত্ব করতেন। রাজার ভাই ভারমল্ল ছিলেন সংসারবিবাগী যোগী। বর্তমানে যেখানে তারকেশ্বরের মন্দির, তখন সেই অঞ্চলের নাম ছিল তাড়পুর। বিষ্ণুদাসের ভাই ভারমল্ল রোজ বনে যেতেন ফলমূল ও মধু সংগ্রহ করতে। প্রায়ই তিনি লক্ষ্য করতেন একটি বড় কালো রঙের শিলাখণ্ডের উপর গাভীরা এসে দুধ দিয়ে যায়। এই অদ্ভুত ঘটনা তিনি তাঁর দাদাকে বলেন। শিবভক্ত বিষ্ণুদাস বনে এসে এই দৃশ্য দেখে শিহরিত হন। রাজা ভারামল্ল তখন ওই শিলাস্তম্ভকে শিব লিঙ্গরূপে রামনগরে এনে প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু অনেক মাটি খুঁড়ে ও পাথরের মূল খুঁজে পাওয়া গেল না। এরপরের জনশ্রুতি, সেইসময় কোনও এক রাতে রাজার ভাই ভারামল্ল স্বপ্ন দেখেন, স্বয়ং শিব তাঁকে জানাচ্ছেন যে, তিনি তারকেশ্বর শিব। তিনি ওই বন থেকে গয়া ও কাশী পর্যন্ত ছড়িয়ে আছেন। সুতরাং তাঁকে তাড়পুরের জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ না করে ওখানেই প্রতিষ্ঠা করা হোক। এরপর স্বপ্নাদিষ্ট ভারামল্ল ও মুকুন্দরাম রাজার সহযোগিতায় বন কেটে পরিষ্কার করে তাড়পুরেই পাথরের স্তম্ভের উপর একটি মন্দির নির্মাণ করেন। মুকুন্দকে শিবের সেবা— পুজো করবার ভার দেওয়া হয়। তিনিই হলেন তারকনাথের প্রথম সেবক। ধীরে ধীরে এই মন্দিরের কথা ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে। এখন সারা বছর ভক্ত সমাগম হয়। মনে করা হয়, এই মন্দিরে যদি কোনও ভক্ত মানত করে বাবা ভোলানাথের পুজো করে থাকেন তাহলে তাঁর মনস্কামনা নিশ্চিতরূপে পূরণ হয়।
আরও পড়ুন-প্রতুল-প্রয়াণের পর চেনা পরিপার্শ্বের বীক্ষণ
শ্যামলেশ্বর মন্দির
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন। এখানে আছে বহু পুরাকীর্তি। ইতিহাসের নানা নিদর্শন রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ওড়িশা সীমান্তে অবস্থিত এই এলাকায় আছে হাজার বছরের প্রাচীন শিবমন্দির। নাম শ্যামলেশ্বর মন্দির। পাথরের তৈরি এই মন্দিরে রয়েছে ইতিহাসের নানা নিদর্শন। অতীতের সাক্ষ্য বয়ে চলেছে দাঁতনের মন্দিরবাজার এলাকার এই মন্দিরটি। প্রতিদিন বহু মানুষের ভিড় জমে। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর মন্দিরটি অবস্থিত। আনুমানিক হাজার বছরের আগে নির্মিত বলেই গবেষকদের দাবি। মন্দিরের স্থাপত্যটি বেশ আকর্ষণীয়। রয়েছে প্যাগোডার আদল। দেখা যায় প্রাচীনত্বের নানা ছাপ। প্রবেশপথের সামনে কষ্টিপাথরে নির্মিত বৃষভ মূর্তিটি ভাস্কর্যের দিক থেকে মূল্যবান। প্রাচীন মন্দিরের গঠনশৈলী মুগ্ধ করবে। বিশাল আকার জায়গা জুড়ে থাকা সহস্ত্র বছর পুরনো এই মন্দিরে এলে মিলবে আলাদা প্রশান্তি। প্রতিষ্ঠালিপি না থাকায়, মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা কে করেছিলেন, তা সঠিক জানা যায় না। জানা যায় না প্রতিষ্ঠার সময়কালও। গবেষকদের দাবি, সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। অন্যদের অভিমত, ওড়িশার সূর্যবংশীয় নৃপতি গজপতি মুকুন্দদেব ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অগাধ কিংবদন্তি। মন্দিরের চারপাশ মাকড়া পাথরের প্রায় দশ ফুটের উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ভেতরের অঙ্গনটির আয়তন ১৩,৮৮৩ বর্গফুট। তার ভিতর ফুট চারেক উঁচু ভিত্তির উপর মন্দিরটি স্থাপিত। ওড়িশি পীঢ়-রীতির আদলে তৈরি এই মন্দিরের অলঙ্করণ হিসাবে দেখা যায় মূল প্রবেশপথের সামনে একটি নন্দীমূর্তি। ইতিহাসবিদদের মতে, কালাপাহাড়ের আঘাতে ভগ্ন এই নন্দীমূর্তি। মন্দিরের উত্তরদিকে পাথরে খোদিত একটি মকরমূর্তি আছে। সামনের দ্বারপথের মাথায় ভগবান বিষ্ণুর অনন্তশয্যা ফলক আছে। এই মন্দিরে প্রতিদিন বহু ভক্ত ভিড় জমান। তবে বছরে বেশ কিছু পালনীয় দিনে বেশি ভিড় হয়। যেমন শিবরাত্রির দিন।
আরও পড়ুন-নির্বাচনী বোর্ড গঠন হল মোহনবাগানে
জল্পেশ মন্দির
জলপাইগুড়ির শিবতীর্থ জল্পেশ মন্দির। ময়নাগুড়ি থেকে আরও ৭-৮ কিলোমিটার দূরে জর্দা নদীর ধারে অবস্থিত। ভ্রামরী শক্তিপীঠের ভৈরব হলেন জল্পেশ। মন্দিরটি মনোরম স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। এখানকার শিবলিঙ্গ হল জললিঙ্গ। অর্থাৎ শিবলিঙ্গ এখানে গর্তের মধ্যে থাকেন। যাঁকে অনাদিও বলা হয়। গর্তে জল ঢেলেই পুণ্য অর্জন করতে হয়। মন্দির চত্বরে রয়েছে ‘সুবর্ণ কুণ্ড’ নামে এক জলাশয়। জানা যায়, কোচবিহারের রাজা বিশ্বসিংহ ১৫২৪ সালে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা করেন। বিশ্বসিংহ কোচবিহারের মহারাজা নর-নারায়ণের পিতা ছিলেন। পরবর্তীকাল তিনি ১৫৬৩ সালে নর-নারায়ণ মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। আবার ১০০ বছর পর রাজা প্রাণনারায়ণ ১৬৬৩ সালে এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। কোচবিহারের রাজা লক্ষ্মীনারায়ণের রাজত্বকালে কোচ রাজবংশের বশ্যতা অস্বীকার করার পর ১৬২১ সালে মহীদেব রায়কত স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং কোচরাজাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে অস্বীকার করেন। এরপর থেকে মন্দিরটি বৈকুণ্ঠপুরের রায়কতদের তত্ত্বাবধানে ছিল। ১৮৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজা জগেন্দ্রদেব রায়কতের স্ত্রী রানি জগদেশ্বরী দেবী এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহাশিবরাত্রিতে এই মন্দিরে উদযাপিত হয় প্রধান উৎসব। সপ্তদশ শতকে মন্দির তৈরির পর থেকেই এখানে শিবরাত্রিতে বিখ্যাত মেলার সূচনা হয়। সেই দিক থেকে মেলাটি গোটা রাজ্যেরই প্রাচীন মেলাগুলির অন্যতম। মেলাতে কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম হয়। ডুয়ার্স যখন ভুটানের অংশ ছিল, তখন ময়নাগুড়িকে কেন্দ্র করেই পাহাড় ও সমতলের ব্যবসা হত। ফলে এই মেলার বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল অসীম। ভারতবর্ষের স্বাধীন হওয়ার আগে এখানে হাতি বিক্রি হত। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য নিকটবর্তী রাজ্যের লোকেরা এই মেলায় আসে।
জটিলেশ্বর মন্দির
উত্তরবঙ্গের এক প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র হল ময়নাগুড়ির জটিলেশ্বর মন্দির। এটা শিবের মন্দির। কে এই মন্দির গড়ে তুলেছিলেন, কবে তৈরি হয়েছিল, সেটা এক রহস্যের অন্ধকারে ঢাকা আছে। ময়নাগুড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে জলঢাকা নদীর কাছে এই জটিলেশ্বর মন্দিরটি রয়েছে। একদল গবেষক দীর্ঘ গবেষণার পর জানিয়েছেন, মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল পাল যুগে। আবার, অনেকের মতে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল পাল যুগের বহু আগে, গুপ্ত যুগে। যাঁরা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে চলেছেন, সেই প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, এই মন্দিরটি নবম শতকের। অর্থাৎ, বর্তমান সময়ের বিচারে এই মন্দিরের বয়স কমপক্ষে হাজার বছরেরও অনেক বেশি। যদিও কিংবদন্তি দাবি করে, মন্দিরটি তার চেয়েও নাকি বেশি পুরনো। যাঁরা কিংবদন্তি মানেন, তাঁদের দাবি যে এই মন্দির ৩২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। প্রতিবছর শ্রাবণ ও ফাল্গুন মাসে জটিলেশ্বরে বিপুল ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে। এই মন্দিরের দেওয়াল সময়ের কারণেই বারবার সংস্কার হয়েছে। আর, তাতে পুরনো ঐতিহ্য খানিকটা হলেও মুছে গিয়েছে।
তবে, আজও এই মন্দির সেই পুরনো দিনের মতোই জটাজুটধারী শিবের উপাসনাস্থল হিসেবেই ভক্তদের কাছে অতি পরিচিত। শিবরাত্রি উপলক্ষে এখানে আয়োজিত হয় বিশেষ পুজো।
আরও পড়ুন-কুম্ভে যাওয়ার পথে ধানবাদে মৃত বাংলার ৬
মহাকাল মন্দির
দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত মহাকাল মন্দির। ১৭৮২ সালে দুর্জয় লিং জিং নামে একজন লামার উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ভগবান শিব। তবে এখানে মহাদেবের সঙ্গে মা কালী, হনুমান, গণেশ ও ভগবান বুদ্ধেরও পুজো করা হয়। এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের মানুষই প্রার্থনা করতে আসেন। মহাকাল ধামের স্থানে প্রাচীনকালে দুর্জয় লিং নামে একটি গুম্ফা ছিল। যেটা ১৭৬৫ সালে দুর্জয় লিং জিং দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে এই গুম্ফা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। ১৭৮২ সালে মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। মহাকাল মন্দির দার্জিলিং শহরের মূল কেন্দ্র ম্যাল রোড দ্বারা পরিবেষ্টিত। চৌরাস্তার পিছনে ‘মহাকাল মার্কেটে’র পাশ দিয়ে গিয়ে কিছুটা চড়াই রাস্তায় উঠলেই এই মহাকাল মন্দিরে পৌঁছানো যায়। ধর্মপ্রাণ পর্যটকেরা দার্জিলিংয়ে এলে একবার হলেও এই মন্দির দর্শন করে যান। এই শুভ্র মন্দিরটি জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ছোট স্তূপ, নানা রঙের প্রার্থনা পতাকা, বৌদ্ধ চক্র এবং ঘণ্টা। এছাড়া চারিদিকের পাইনের ছায়া ও মেঘেদের খেলার আসমান ছুঁয়ে এই মন্দিরটি যেন শান্তি ও ঐক্যের মিলনস্থল হিসেবে পর্যটকদের মাঝে বিরাজমান রয়েছে।
ভবতারণ শিবমন্দির
নদিয়ার নবদ্বীপ শহরের দুশো বছরের প্রাচীন একটি শিবমন্দির ভবতারণ শিবমন্দির। এই মন্দিরটি বাংলার মন্দির স্থাপত্যের বিরলরীতির অষ্টকোণাকৃতি শিখর মন্দির। নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় এই মন্দিরের পাশেই পোড়ামা কালীমন্দির ও মা ভবতারিণী মন্দির অবস্থিত। জানা যায়, রাজা রাঘব ১৬৬৯ সালে নবদ্বীপে অপরূপ একটি গণেশ মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। সেইসঙ্গে একটি শিবলিঙ্গ স্থাপনের অভিপ্রায়ে একটি মন্দির নির্মাণ করলেও, মন্দিরের কাজ শেষ হবার আগেই তিনি মারা যান। বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন তাঁর ছেলে রাজা রুদ্র রায়। ১৬৮৩ থেকে ১৬৯৪ সালের মধ্যে তিনি নবদ্বীপে গৌরীপট্ট সংবলিত ব্রাহ্মণ্য-সংস্কৃতির প্রথম শিবমূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন। তখন সেটা রাঘবেশ্বর শিব নামে পরিচিত ছিল। ১৭৬০ সালে গঙ্গার ভাঙনে এই মন্দির-সহ মূর্তিটি গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গেলে তার প্রায় ৬৫ বছর পর রাজা গিরিশচন্দ্র ১৮২৫ সালে পোড়ামাতলায় শিবমূর্তিটি ভবতারণ নামে পুনঃস্থাপিত করেন, যা বর্তমানে ভবতারণ শিব নামে পরিচিত। অষ্টকোণাকৃতি শিখর স্থাপত্যের এই মন্দির সমগ্র বাংলায় খুবই কম দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০১৯ সালে মন্দিরটিকে নবদ্বীপের হেরিটেজ মন্দির হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। সারা বছর, বিশেষত শিবরাত্রির দিন বহু ভক্তের সমাগম হয়।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
কল্যাণেশ্বর শিবমন্দির
হাওড়া জেলার বালির গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের ধারে অবস্থিত কল্যাণেশ্বর শিবমন্দির। মন্দিরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হুগলি নদী। এটা বেলুড় মঠের কাছাকাছি। প্রচলিত লৌকিক কাহিনি অনুসারে, কল্যাণেশ্বর শিবমন্দিরটি পাণ্ডবদের প্রতিষ্ঠিত। পরে কাটোচ রাজবংশ দ্বারা পরিচালিত। অর্থাৎ মন্দিরটি বেশ প্রাচীন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, প্রায় ছয়শো বছর আগে মন্দিরটি তৈরি। একটা সময় অঞ্চলটি ছিল ঘন বনে ঢাকা। স্থানীয় রাজা বা জমিদার স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মন্দির স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দান করেন। এটা স্বয়ম্ভূ শিব, অর্থাৎ মাটি ফুঁড়ে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। দয়ারাম বসু এখানে একটি ছোট মন্দির স্থাপন করেন এবং স্থানীয় চার ব্রাহ্মণ পরিবারকে সেবাইত হিসাবে নিযুক্ত করেন। জানা যায়, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বিভিন্ন সময়ে এই মন্দিরে এসে শিবের পুজো করেছেন। একবার তিনি এখানে সমাধিস্থও হন। স্বামী বিবেকানন্দ এবং স্বামী ব্রাহ্মানন্দও এই মন্দিরে এসেছেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসীরা প্রতিদিন এই মন্দিরে শিবের পুজো করেন। মন্দিরটি ঘিরে রয়েছে আরও কয়েকটি মন্দির। যেমন— সিদ্ধেশ্বরী কালী, নারায়ণ, গণেশ ও হনুমান। সব মিলে একটি সুন্দর মন্দির চত্বর। শিবমন্দিরের সামনে রয়েছে একটি ঘাট-বাঁধানো বিশাল পুকুর। শিবমন্দিরটির দুটি অংশ— সামনে একটি বড় বড় থামযুক্ত নাটমন্দির এবং পিছনে আটচালা ও মূল মন্দির। নাটমন্দিরটি বেশ বড়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মূল মন্দিরের মধ্যে রয়েছে কল্যাণেশ্বর শিবলিঙ্গ। গর্ভগৃহের মেঝেতে শ্বেতপাথরের একটি বেদির মাঝখানে একটি আটকোণা গর্ত, তার কেন্দ্রস্থলে কালো পাথরের অমসৃণ শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের খাড়াই উচ্চতা বেশি নয়। শিবলিঙ্গটি স্পর্শ করা যায়। এখানকার প্রধান উৎসব শিবরাত্রি। আড়ম্বরপূর্ণ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। অন্যান্য উৎসবগুলো হল নীল ষষ্ঠী এবং চড়ক। চড়ক উৎসব চলাকালীন মেলা বসে। ঝাঁপ হয়। দূর-দূরান্তের বহু মানুষ এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন।