প্রতিবেদন: ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। বিশ্বের হিমবাহগুলি কয়েক দশক ধরে দ্রুতগতিতে গলছে। এভাবে হিমবাহ গলার নজির আগে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক গবেষক দলের নতুন এক গবেষণা থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, আগামী বছরগুলিতে পূর্বানুমানের চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে হিমবাহ গলতে পারে এবং এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্ববিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যায় এই সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্রায় দেড়শো বছর পুরনো ‘নেচার’ একটি ব্রিটিশ সাপ্তাহিক বৈজ্ঞানিক জার্নাল। এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দশকে হিমবাহ গলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০০০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে যে হারে হিমবাহ গলেছে, সেই তুলনায় ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি গলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোট ছোট হিমবাহের অঞ্চলগুলিতে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। এমনটা চললে এই শতাব্দীতে হয়তো এসব হিমবাহের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন-প্রণমামি শিবং শিব কল্পতরু
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিবেদনটির সহরচয়িতা মিশায়েল জেম্প বলেছেন, আমরা চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ পূর্বধারণার চেয়ে বেশি মাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হব। বহু এলাকা তার ফলে জলের নিচে হারিয়ে যেতে পারে। হিমবাহের ক্ষয়ের কারণে মধ্য এশিয়া ও মধ্য আন্দিজ অঞ্চলে মিষ্টি জলের সরবরাহের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন এই অধ্যাপক। গবেষকেরা বলছেন, সব মিলে চলতি শতাব্দীতে হিমবাহগুলির ৫ শতাংশ গলেছে। তবে অঞ্চলভেদে গলার হার কমবেশি। যেমন আন্টার্কটিকায় ২ শতাংশ হিমবাহ গলেছে। আর ইউরোপীয় আল্পসে গলেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিবছর গড়ে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি টন বরফ গলছে, যা বিশ্ববাসীর ৩০ বছরে ব্যবহৃত জলের পরিমাণের সমান। পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড গ্লেসিয়ার মনিটরিং সার্ভিস (ডব্লিউজিএমএস), এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আর্থওয়েভ সমন্বিতভাবে গবেষণাটি করেছে। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্টিন সিগার্ট গবেষণার ফলাফলকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, এটি হিমবাহের আরও ক্ষয় হওয়ার আভাস দিচ্ছে। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে আন্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বরফের চাদরগুলি (আইস শিট) কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, সেই আভাসও সর্বশেষ গবেষণা থেকে জানা যাবে। মার্টিন সিগার্ট বলেন, আইস শিটগুলো ক্রমবর্ধমান হারে ক্ষয় হচ্ছে, যা ৩০ বছর আগের তুলনায় ৬ গুণ। জেম্প মনে করেন, বিশ্বের হিমবাহগুলি বাঁচাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে হবে। না হলে পৃথিবী ও সভ্যতার অস্তিত্বের সামনে সমূহ বিপদ।