প্রতিবেদন : রাতের অন্ধকারে দুই গাড়ির রেষারেষিতে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাকে ইভিটিজিংয়ের মোড়কে পরিবেশন করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বদনাম করতে চেয়েছিল একটা শ্রেণি। অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার পথে নৃত্যশিল্পী তথা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের (Sutandra Chattopadhyay) বেদনাদায়ক মৃত্যুর ঘটনায় যেসব রটনা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু খটকা। কীভাবে মৃত্যু! সেই অভিশপ্ত রাতে? বেশ কিছু মিসিং লিঙ্ক রয়ে গিয়েছে। উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।
১. গাড়িতে সুতন্দ্রা (Sutandra Chattopadhyay) একা ছিলেন না। গাড়িতে তাঁর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার আরও ৪ পুরুষ সহকর্মী ছিলেন। সুতরাং একা তরুণীকে পেয়ে হেনস্থার চেষ্টার তত্ত্ব সামনে আনা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।
২. একজন পেশাদার চালক গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তারপরও ইভটিজিংয়ের ভয়ে পালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা, এই যুক্তি মানা যাচ্ছে না।
৩. সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট, অভিযুক্ত গাড়িটি সুতন্দ্রার গাড়িকে ধাওয়া করছে না। উল্টে তরুণীর গাড়িই অপর গাড়িটিকে ধাওয়া করছে। দুটি জায়গার সিসি ক্যামেরার ফুটেজেই একই ছবি পাওয়া গিয়েছে। দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও বলছে তরুণীর গাড়িই অন্য গাড়ির পিছনে ছুটছিল।
৪. সিসিটিভি ফুটেজে আরও দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্তদের গাড়িটি স্বাভাবিক গতিতেই যাচ্ছে। সুতন্দ্রার গাড়িই বরং যথেষ্ট গতিতে ছুটছিল এবং ধাওয়া করছিল সামনের গাড়িটিকে।
৫. অনুষ্ঠান করতে গয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সুতন্দ্রা। দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু গাড়ি-দুর্ঘটনা হয়েছে জিটি রোডে। কেন সুতন্দ্রার গাড়ি দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ছেড়ে জিটি রোডে ঢুকেছিল? তরুণীর গাড়িকে তাড়া করে জিটি রোডে ঢুকতে বাধ্য করার মতো কোনও প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজে নেই।
৬. ঘাতক গাড়ির মালিকের বাড়ি দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই। অর্থাৎ অভিযুক্তরা নিজেদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তরুণীর গাড়ির গন্তব্য গয়া যাওয়ার রাস্তা না ধরে কেন জিটি রোডে চলে এল, সেই প্রশ্নও কিন্তু থেকে যাচ্ছে।
৭. কতটা দুঃসাহস হলে হ্যাচব্যাক নিয়ে এসইউভি-কে তাড়া করা যায়? গাড়িতে একজন মহিলা রয়েছেন, আবার চারজন পুরুষ সঙ্গীও রয়েছেন। অন্য গাড়ি থেকে কী এমন উসকানি বা হুমকি এসেছিল, যার জন্য এই সিদ্ধান্ত, সে প্রশ্নেরও উত্তর নেই।
৮. সুতন্দ্রাই ওই গাড়ির মালিক। চালক তাঁর কর্মচারী। সুতরাং সুতন্দ্রার উপস্থিতিতে তাঁর নির্দেশ ছাড়া বা তাঁর নিষেধ উপেক্ষা করে চালক ভিন্ন রাস্তায় যেতে পারেন না বা গাড়িটিকে ধাওয়া করতে পারেন না।
৯. সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, গাড়ি উল্টে গেলেও বাকি যাত্রীদের কারও তেমন কোনও চোট লাগল না। ৫ জনের মধ্যে শুধু সুতন্দ্রা মারাত্মক জখম হয়ে মারা গেলেন। এখানেও রয়ে যাচ্ছে মিসিং লিঙ্ক।
১০. আবার চালক জানিয়েছেন সুতন্দ্রার গাড়ির বামদিকে তিনবার ধাক্কা মারে ক্রেটা! এটিও হাস্যকর যুক্তি। কারণ কোনও গাড়ি আরেকটা গাড়িকে চাপতে চাইলে তার ডান দিক দিয়ে যাবে। কোনওভাবেই বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে অন্য গাড়িতে চাপা সম্ভব নয়। ক্রেটা ডান দিকে গিয়ে চাপলে মৃতার গাড়ির ডানদিকে আঘাত লাগবে, বাঁ দিকে লাগবে না। কিন্তু বামদিকে আঘাতের চিহ্ন প্রমাণ করে মৃতার গাড়িই ক্রেটাকে চাপতে চেষ্টা করেছিল বা ওভারটেক করার চেষ্টা করেছিল। ডানদিকেও আঘাতের দাগ আছে, সেটা ডিভাইডারের সঙ্গে আঘাত লাগার দাগ বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। আর তা বুঝতে ফরেনসিকের দরকার হয় না। সাধারণেই তা বুঝতে পারে।
১১. মৃতার গাড়ি ফুঁড়ে কোনও লোহার যন্ত্রাংশ মৃতাকে আঘাত করেছে, এমনটা নয়। ধাক্কার অভিঘাতেই মৃতার গাড়ির দরজা খুলে যায় এবং সেখান থেকে ছিটকে লোহার স্তূপের উপর পড়ে মাথায় আঘাত পায়। তার মানে মৃতা সিটবেল্ট পরে ছিলেন না। তাহলে দরজা দিয়ে বাইরে ছিটকে বেরোতেন না।
১২. মৃতার গাড়ির ড্রাইভারের কথা ডাহা মিথ্যে প্রমাণ হচ্ছে। নিজেদের মদ্যপ ও অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা এবং তার দরুন গাফিলতি আড়াল করার জন্যই কি ইভটিজিংয়ের গল্প ফাঁদা হল? সে প্রশ্নও রয়ে যাচ্ছে। নিজেদের বাঁচানোর জন্য এই ইভটিজিংয়ের গল্প ফাঁদা হচ্ছে না তো?
আরও পড়ুন- সাতাশের অধিবেশনে কী বার্তা নেত্রীর, জানতে আগ্রহ তুঙ্গে