বিরল রোগ সচেতনতা দিবস

বিরল রোগ নিয়ে গোটা বিশ্বেই সচেতনতার অভাব রয়েছে। ভারতে বিরল রোগীর সংখ্যা ৭০ মিলিয়নের বেশি। তাই প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটি ‘বিরল রোগ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি পালনের উদ্দেশ্য বিরল রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ক্লিনিক্যাল রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ৭০ মিলিয়নের বেশি মানুষ এবং বিশ্ব জুড়ে ৪০০ মিলিয়ন মানুষ বিরল রোগে ভুগছেন। আসলে যে কোনও বিরল রোগ সম্পর্কেই মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কারণ এই ধরনের রোগের বিষয়ে অনেকেই জানেন না বা কোনও ধারণা নেই। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটি ‘বিরল রোগ দিবস’ বা ‘রেয়ার ডিজিজ ডে’ হিসেবে পালিত হয়। বিরল রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতার বৃদ্ধি, রোগ নির্ণয়, সেগুলো সম্পর্কে আলাপ আলোচনার জন্য একটা মঞ্চ তৈরি করার লক্ষ্যে দিনটি পালিত হয়।
রেয়ার ডিজিজ অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া (ওআরডিআই) ভারতে বিরল রোগ নিয়ে কাজ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে একটি বিরল রোগকে সেই রোগ যা প্রতি এক লক্ষের মধ্যে ৬৫ জনেরও কম আক্রান্ত হয়। যেহেতু ভারতের জনসংখ্যা অনেক বেশি তাই এখানে পাঁচ হাজার বা তার বেশি মানুষের মধ্যে যে রোগটি হয় তাকে বিরল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

আরও পড়ুন-বিজেপিকে বাংলাছাড়া করতে মাঠে নামুন মহিলারা : অর্পিতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে বিরল রোগের তালিকায় ৭০০০-এরও বেশি রোগ রয়েছে যার মধ্যে মাত্র ৫% নিরাময়যোগ্য। এর মধ্যে ৮০%-এর জন্য দায়ী জিনগত কারণ। কিছু কিছু ক্যানসারও বিরল রোগের মধ্যে পড়ে। জেনেটিক কারণ ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, সংক্রমণ বা অ্যালার্জিও দায়ী। বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত সময়মতো চিকিৎসা পান না কারণ লক্ষণগুলো অনেকগুলি দেরিতে ধরা পড়ে।

কিছু সাধারণ বিরল রোগ হল—ইডিএস, সিকল সেল, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ডিএমডি, হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া, বিরল ক্যানসার ইত্যাদি।

শিশুদের মধ্যে বিরল রোগ হল— জন্মগত অস্বাভাবিকতা, মেটাবলিক সিনড্রোম এবং জেনেটিক রোগ। শিশুদের এইসব বিরল রোগের চিকিৎসা না করলে খারাপ পরিণতি হতে পারে৷ এই ধরনের রোগ শিশুর একাধিক অঙ্গকে প্রভাবিত করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়৷

ভারতে যেসব বিরল রোগ বেশি দেখা যায় সেগুলো হল—অ্যাকান্থোসাইটোসিস কোরিয়া, অ্যাক্রোমেসোমেলিক ডিসপ্লাসিয়া, তীব্র প্রদাহজনক ডিমাইলিনেটিং পলিনিউরোপ্যাথি, তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া, রক্তের ক্যানসার, (বিশেষ করে শ্বেত রক্তকণিকার) পুরুষের স্তন ক্যান্সার, এডিসন’স রোগ, রক্তাল্পতা, শিশুদের প্রাথমিক ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি, অটোইমিউন রোগ, লাইসোসোমাল স্টোরেজ ডিজ-অর্ডার, যেমন পম্পে ডিজিজ, গাউচার ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, হেম্যানজিওমা, নির্দিষ্ট ধরনের মাসকুলার ডিস্ট্রফি, স্ত্রী-রোগ সংক্রান্ত ক্যানসার ইত্যাদি।

আরও পড়ুন-৩২১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

কিছু বিরল রোগ
হিমোফিলিয়া
এটা একধরনের বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। এই রোগে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হয় ফলে একবার কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ হয় না। যাদের হিমোফিলিয়া তীব্র, তাদের প্রায়শই অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় যা ব্যথার কারণ হয়। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখি যায়। হিমোফিলিয়ার আক্রান্তের সবচেয়ে ঝুঁকি হল জয়েন্টে রক্তক্ষরণ। হিমোফিলিয়ার কোনও নিরাময় নেই, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে বেশি রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
থ্যালাসেমিয়া
থ্যালসেমিয়া হল জন্মগত রক্তরোগ। ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে এই রোগ হয়। লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন বহন করে। থ্যালাসেমিয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণে আরবিসি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে রোগী রক্তশূন্য হয়ে পড়ে, তাঁকে রক্ত দিতে হয়। সমীক্ষা অনুযায়ী বাবা এবং মা দুজনের মধ্যেই থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকলে ভূমিষ্ঠ শিশুর ২৫% থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।
সিকল সেল অ্যানিমিয়া
সিকল সেল অ্যানিমিয়া হল লোহিত রক্তকণিকার বিরল একটি রোগ। যে কারণে রোগী রক্তাল্পতার শিকার হন। পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে যে ধরনের হিমোগ্লোবিন থাকে, এই রোগে আক্রান্ত হলে তা আর থাকে না। সুস্থ সেলগুলো আকারে গোল হয় কিন্তু সিকল সেল-এ লোহিত কণিকার আকার ‘সিকল’ অর্থাৎ, কাস্তের মতো হয়। বাবা-মা-র থেকে সেই রোগ যেতে পারে সন্তানের দেহে। এই অ্যানিমিয়া যেহেতু জিনবাহিত, তাই কে এই রোগে আক্রান্ত হবেন, কে হবেন না, তা বলা সম্ভব নয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে জ্বর, গা-হাত-পা ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ নিয়ে জটিলতা বাড়ে। নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়ায়। সদ্যোজাতের শরীরে যদি এই রোগের দেখা মেলে তবে ধরে নিতে হবে মা বা বাবা কোনও একজন এই জিনের ধারক এবং বাহক। এই রোগ ঠেকানোর উপায় একমাত্র রক্ত পরীক্ষা।

আরও পড়ুন-২৫ মার্চ ফের ‘দিল্লি চলো’র ডাক কৃষকদের

সিস্টিক ফাইব্রোসিস
সিস্টিক ফাইব্রোসিস একটি জিনগত বিরল রোগ। এই রোগে বেশির ভাগ শিশুই আক্রান্ত হয়। শ্লেষ্মা, ঘাম এবং পাচক রস তৈরিতে বাধা পায়। শ্লেষ্মা ঘন এবং আঠালো হয়ে যায়। ঘামে অতিরিক্ত নুন তৈরি হয়, হজমশক্তি কমে যায়, বাড় বৃদ্ধি হয় না। এই রোগে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন পর্যন্ত করতে হতে পারে। সিস্টিক ফাইব্রোসিস শুধু ফুসফুসকে অকেজো করে এমন নয় এই রোগে ঘন থকথকে মিউকাস তৈরি হয় যাতে নানারকম সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। এই সব ব্যাকটেরিয়া কোনও ওষুধে ধংস হয় না। এরা সংখ্যায় বেড়ে চলে এবং মিউকাসের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।
হিস্টিয়োসাইটোসিস
এটি শিশুদের একটি বিরল প্রজাতির রক্তের ক্যানসার। এতে শরীরের টিস্যুতে সাদা রক্তকণিকা বেড়ে ওঠে। হঠাৎ মাথার কোনও একটা জায়গা ফুলে ওঠা এর প্রধান লক্ষণ। শরীরের বিভিন্ন অংশে টিউমার দেখা দেয়। পেট ও হাড়ের ব্যথা, বিরক্তি, অস্বাভাবিক গ্রোথ, চোখ ফুলে যাওয়া, ত্বকে ঘা ইত্যাদি হল এই রোগের লক্ষণ। অনেক রোগী চিকিৎসায় ভাল হয়ে যান তবে চিকিৎসা বন্ধ করলে আবার নতুন করে রোগ বাড়তে পারে।

Latest article