মুম্বই, ৬ ডিসেম্বর : ওয়াংখেড়েতে শেষ কবে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে, ইতিহাস খুঁজে দেখতে হবে। সকালে দু’দিক থেকে শুরু করলেন দুই অফস্পিনার জয়ন্ত যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। প্রায় মুঠোয় এসে যাওয়া ম্যাচে বিরাট যা খুশি এক্সপেরিমেন্ট করতে পারতেন। কিন্তু তিনি শুধু স্পিনারদের হাতে বল তুলে দেন।
তবে বিরাট যে ভুল করেননি, সেটা বুঝতে ঠিক ৪৩ মিনিট সময় লাগল। অশ্বিনের স্পিন করে আসা বলে ঋদ্ধিমান সাহা যখন হেনরি নিকলসকে (৪৪) দুর্দান্ত স্ট্যাম্প করলেন, ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা ৪৩। ১৬৭ রানে ইনিংস শেষ হয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের। আরও জরুরি তথ্য, ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা দল এখানে হেরে গেল ৩৭২ রানে। ভারতের জন্য এটা রেকর্ড। এত বড় ব্যবধানে আগে কখনও টেস্ট জেতেনি ভারত।
জয়ন্তকে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে সকাল শুরু করেছিলেন রচিন রবীন্দ্র। এই রচিনই কানপুরে ভারতের মুখ থেকে টেস্ট বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামকে গ্রিন পার্ক হতে দেননি বছর একত্রিশের জয়ন্ত। টানা দুটি বাউন্ডারির পরের বলেই রচিন (১৮) ফিরলেন দ্বিতীয় স্লিপে পুজারার হাতে ক্যাচ দিয়ে। আগের দিনের ১৪০-৫ নিয়ে সকালে খেলা শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। এদিন আর ৩৭ রান যোগ করতেই তাদের বাকি পাঁচ উইকেট চলে গেল। যার মধ্যে চারটি উইকেট জয়ন্তর। রচিনকে ফেরানোর সামান্য পরেই জয়ন্ত জেমিসন (০) ও সাউদিকে (০) ফিরিয়ে দেন পরপর দু’বলে। জেমিসন লেগ বিফোর।
আরও পড়ুন : বিডিওর উদ্যোগ রুখা মাটিতে আম্রপালি, হিমসাগর
আর সাউদি সরাসরি বোল্ড। ২০১৭-তে শেষবার টেস্ট ক্রিকেট খেলা হরিয়ানভি জয়ন্ত এদিন তাঁর চতুর্থ উইকেট নিলেন সমারভিলকে (১) আউট করে। শর্ট লেগে তাঁর নিচু ক্যাচ দ্বিতীয় প্রয়াসে নেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। নিকলস ১১১ বল খেলে একটি দিক আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর আটটি বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংস শেষ হয়ে যায় অশ্বিনের বলে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে আউট হয়েছেন নিকলস। মুম্বইতে এই হারের ম্যাচে কিউয়িদের একমাত্র প্রাপ্তি দুই ইনিংস মিলিয়ে আজাজ প্যাটেলের ১৪ উইকেট। দুই ইনিংসে যিনি বল করেছেন ৭৩.৫ ওভার। আর নিউজিল্যান্ড দুই ইনিংসে সাকুল্যে খেলেছে ৮৪.৪ ওভার।
টেস্ট জিতে খুশি রাহুল দ্রাবিড়। টানা দু’টি সিরিজ জয় দিয়েই ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হল রাহুল দ্রাবিড় যুগ। কানপুরে হাতের মুঠো থেকে জয় ফসকে গিয়েছিল। তবে মুম্বইয়ে নিউজিল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে ৩৭২ রানের বিশাল বড় ব্যবধানে টেস্ট জিতেছেন বিরাট কোহলিরা। তৃপ্ত দ্রাবিড় বলছেন, ‘‘সিরিজ জিততে পেরে ভাল লাগছে। তবে ফল দেখে কেউ যদি ভাবেন যে সিরিজে একপেশে লড়াই হয়েছে, তাহলে ভুল করবেন। বরং জেতার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিছু কিছু সেশনে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু ছেলেরা দারুণ লড়াই করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পুরোটাই দলের কৃতিত্ব।’’ এবার সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। বিশ্বের এই প্রান্তে কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি ভারত। তাই এখন থেকেই ওই সিরিজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন দ্রাবিড়। পাশাপাশি তিনি জানাচ্ছেন, সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে যেভাবে তরুণরা উঠে এসেছেন, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল নির্বাচন করতে গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে জাতীয় নির্বাচক কমিটিকে।
দ্রাবিড়ের বক্তব্য, ‘‘এই সিরিজে শ্রেয়স আইয়ার, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, জয়ন্ত যাদব, অক্ষর প্যাটেল, মহম্মদ সিরাজরা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করল। এরপর দলে সিনিয়ররা ঢুকবে। তখন প্রথম দলে সুযোগ পাওয়ার প্রতিযোগিতা আরও বেডে় যাবে। তাই নির্বাচকদের কাজটা খুব কঠিন হয়ে গেল।’’ দ্রাবিড় জানাচ্ছেন, এধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতা যে কোনও দলের কাছেই ইতিবাচক দিক। দ্রাবিড় বলেন, ‘‘সুস্থ প্রতিযোগিতা দলের জন্য ভাল। এর ফলে আমাদের হাতে অনেক বেশি বিকল্প থাকবে। দলের কোচ হিসেবে এমন সমস্যা আমি তো উপভোগই করব।’’