গাড়ি ভাঙচুর ব্রাত্যর, বেধড়ক মার নিরাপত্তারক্ষীদের, আগুন শিক্ষাবন্ধু অফিসে, বামগুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রী

আলোচনায় বসতে চাইলেও পরিকল্পনা করে হামলা চালাল অসভ্য লুম্পেনরা , যাদবপুর থানায় এফআইআর

Must read

প্রতিবেদন : এসএফআইয়ের লুম্পেনরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই হামলা চালাল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) ওপর। ভাঙচুর করা হল তাঁর গাড়ি। আহত হয়েছেন তাঁর সঙ্গে থাকা দেহরক্ষীরাও। শুধু মন্ত্রীই নন, হামলা চালানো হয়েছে অন্যান্য অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীদের ওপরেও। এখানেই থেমে থাকেনি তারা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর শিক্ষাবন্ধু অফিসেও ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় লুম্পেনরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার ওয়েবকুপার বার্ষিক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যেতেই চূড়ান্ত অভব্য আচরণ করে তারা। মন্ত্রীর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া থেকে তাঁর গাড়ির বনেটে উঠে পড়া— কিছুই বাদ যায় না। লুম্পেনদের শত প্ররোচনাতেও পুলিশ ডাকেননি শিক্ষামন্ত্রী। এদিন শিক্ষামন্ত্রী বারবার এসএফআইয়ের দাবি শুনে আলোচনায় বসতে চান। সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী হন তিনি। কিন্তু নিজেদের অতি বিপ্লবী মানসিকতার পরিচয় দিতে গিয়ে কোনও সমঝোতার রাস্তাতেই হাঁটতে চায়নি তারা। অধ্যাপক প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায় তাদের আলোচনার জন্য বলতে গেলে তাঁকেই মারধর করা হয়। এদিন ওপেন এয়ার থিয়েটারে ছিল ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা। এই সভায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা আগেই ছকে রেখেছিল এসএফআই। গোটা ঘটনার কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীও। এদিন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে শুরু করলেই ফের অভব্য আচরণ শুরু করে বাম ও অতিবাম ছাত্র সংগঠন। চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। আক্রমণ করা হয় অন্যান্য অধ্যাপকদের। ওমপ্রকাশ মিশ্রকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে। বহু অধ্যাপক আক্রান্ত হন ওই অসভ্য, উচ্ছৃঙ্খল পড়ুয়াদের হাতে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে থাকা দু’টি পাইলট কারের কাচও ভেঙে দেয় বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা।

এসএসকেএম ট্রমা কেয়ার সেন্টারে চিকিত্সাধীন তিনি এবং তাঁর দেহরক্ষী। ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) এই প্রসঙ্গে বলেন, এই গুন্ডামি চলতে পারে না। পড়ুয়াদের চারজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে পারি। কিন্তু সবাই মিলে গুন্ডামি করলে মুশকিল। তবে আমি কোনও প্ররোচনায় পা দেব না। যাঁরা এগুলি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উপাচার্য পদক্ষেপ করবেন। তার আগে স্টেজে উঠেই একহাত নেন বাম, অতিবামদের। কার্যত ক্ষোভের সুরে বামপন্থার পাঠও দিতে দেখা যায় মন্ত্রীকে। ব্রাত্যর কথায়, যে বামপন্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা চিহ্নিত করি তা একেবারেই সোভিয়েত রেজিমেন্টেড বামপন্থা নয়। ওটা আসলে ল্যাটিন আমেরিকান বামপন্থা। যার মাথায় একজন জনসম্মোহনকারী নেতা থাকে, মাঝে একটা ঢিলেঢালা পার্টি, নিচে জনগণ থাকে। এরপরই যাদবপুরের আন্দোলনকারীদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে ব্রাত্য বলেন, যাদবপুরে এর আগেও আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনের নেতাদের এখন দেখতে পাবেন না। তাঁরা এখন সব ভিন রাজ্যে বা বিদেশে। তাঁদের রাজ্য নিয়ে কিছু যায়-আসে না। এরা শুধুই অ্যাটেনশন সিকার। এরা ভুয়ো মতাদর্শে চলে। শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, আমরা আলোচনা করতেই পারি, কিন্তু সময় দিতে হবে। আমি বুঝতে পারছি না, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপা বা তৃণমূল ঢুকতে পারবে না কেন? এই বিশ্ববিদ্যালয় কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অনুদান পায় না? তাহলে তৃণমূলপন্থীরা ঢুকতে পারবে না কেন? এত অধৈর্য হওয়ার কী আছে? মন্ত্রী বলেন, যে অধ্যাপকরা আজ মার খেয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করব, আলোচনা করা উচিত কি না, তার পরেই সিদ্ধান্ত নেব। আমি আগেও বলেছি, পুলিশ ডাকতে পারতাম, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ডাকব না। পুলিশ নিরাপত্তা দিতে চেয়েছিল, আমি রাজি হইনি। গোটা ঘটনায় নিন্দা করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, অধ্যাপকদের ঘোষিত সভায় ডিস্টার্ব করতে যাবে কেন? যেখানে অধ্যাপক সংগঠন তাদের মতো করে সম্মেলন করছে সেখানে শিক্ষামন্ত্রীকে ঢুকতে দেবে না, বিক্ষোভ করে অন্য বক্তব্য রাখার ছুঁতোয় ভাঙচুর করবে, এই অরাজকতা তৈরি হবে কেন? কেন শিক্ষামন্ত্রীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না? গণতান্ত্রিক রাজ্যে এগুলো কী হচ্ছে?
বামপন্থী নেতারা বরাবরই কোনও সমস্যার সমাধানে আসতে চাননি আলোচনার মাধ্যমে। সেকথাও এদিন মনে করান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বলেন, কোনওদিন কোনও সিপিএম নেতা- মন্ত্রীকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে শুনেছেন? মেরে, পুলিশ দিয়ে, ক্যাডার দিয়ে বের করে দিত তারা। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী কথা বলতে চেয়েছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের হেনস্থা করা হল। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতো পুলিশ ডাকেননি। এটা তৃণমূলের সৌজন্যবোধ। কিন্তু তৃণমূলের সৌজন্যকে যেন কেউ দুর্বলতা না ভাবে। যারা গায়ে হাত দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে রাখা হোক। ৩৪ বছর ধরে সিপিএম লাল ঝান্ডা নিয়ে এই অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, গুন্ডামি করে এসেছে।

আরও পড়ুন- হাতে-কাঁধে চোট, মুখে ভাঙা কাচের টুকরো শিক্ষামন্ত্রীর

Latest article