লজ্জাও করে না !

সিপিএম বিজেপিকে ফ্যাসিস্ট বলতে রাজি নয়। বহতা পিরিত। ওদিকে বিজেপি বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের টাকার হিসাব দিতে অপারগ। প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকাই নাকি খরচ হয়েছে বিজ্ঞাপনে! এর মধ্যে রাজ্যের টাকাও মেরে দিতে চাইছে মোদি সরকার। কেন এই সরকার নির্লজ্জ, ব্যাখ্যা করলেন অনির্বাণ ধর

Must read

সিপিএম হঠাৎ ভোলবদল করতে চাইছে? কিন্তু কেন?
একদা যে বাংলাকে দেখিয়ে ভারতবর্ষে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাত, সেই সিপিএম এই মুহূর্তে কেরল ছাড়া কোনও রাজ্যে ক্ষমতায় নেই। বাংলায় তারা শূন্য। দেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে শরিক বদলাচ্ছে, পাল্টাচ্ছে কৌশলও। সিপিএমের একটা অংশ সংঘ পরিবার ও বিজেপির অধীনে কাজ করতে চাইছে। তাই সিপিএম এখন আর বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি’ মনে করে না। এমনকী, তাঁদের নব্য ফ্যাসিবাদী বলতেও ঘোর আপত্তি। কোথাও একটু মাটি পাওয়ার লোভে, কোথাও ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় সিপিএম গোটা দেশের প্রায় সব দলের সঙ্গেই সমঝোতা করে ফেলেছে। বাকি আছে কেবল বিজেপি।
সে থাকুক, ক্ষতি নেই। কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস খারাপ, এটা জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে তো মহাত্মা গান্ধীর রক্ত লেগে থাকা দলকে ভাল বলতেই হবে।
দু’কান কাটা হলে এরকমটাই হয়। এটাই স্বাভাবিক।
সিপিএম এমন সময় বিজেপির গা থেকে ‘ফ্যাসিবাদী’ তকমা খুলতে চাইছে যখন গেরুয়া শিবির উগ্র হিন্দুত্বের লাইনকে মজবুত করতে মরিয়া। তাতে সংখ্যালঘুরা বিপন্ন বোধ করছেন। তবুও বিজেপি ফ্যাসিস্ট নয়! তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বামেদের কাছে আবেদনও করেছেন বিজেপি নেতারা। কারণ তাঁরা জানেন, বামেদের ভোট রামে গেছে বলেই বিজেপি বাংলায় প্রধান বিরোধী দল। বামেরা নিঃস্ব হলেই পূর্ণ হয় রামের ঘর। সিপিএম লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দু’টি আসনেই গোহারা হেরেছে, জিতেছে বিজেপি। বামেরা রামে ভোট দিয়েছে বলেই এটা হয়েছিল। আর এজন্যই ওই জেলার সিপিএম নেতৃত্বে কোনও বদল হয়নি। চতুর্থবারের জন্য। একেবারে নজিরবিহীন ভাবে একই ব্যক্তিকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আসলে এটা গোপন গেমপ্ল্যান বাস্তবায়নের ‘পুরস্কার’। সিপিএমের লজ্জাও করে না!

আরও পড়ুন-সেই মুম্বইয়ে আটকাল মোহনবাগান

কোন বিজেপি সিপিএম দ্বারা সমর্থিত? কোন বিজেপিকে মদত দিচ্ছে ওরা, গোপনে, নানা অছিলায়?
যে বিজেপি ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ কর্মসূচি চালু করেছিল আর এখন সেই প্রকল্প নিয়ে বিজেপির নোংরামি চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত। গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে এই প্রকল্পের বিষয়ে। তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) পাওয়া সরকারি জবাব বলছে, গত ১০ বছরে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ খাতে খরচ হয়েছে ৯৫২ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকা কোথায় খরচ হল, তার কোনও হিসেব মিলছে না। সরকারি তরফে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে প্রদেয় বরাদ্দের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। তাতেই ধরা পড়েছে এই গরমিল। কোথায় ‘উধাও’ হয়ে গেল বিপুল পরিমাণ অর্থ? নিরুত্তর নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক।
হিসাবটা এরকম: ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষ থেকে গত ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও খাতে মোট ব্যয় ৯৫২ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৯৬ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। বাকি ৪৫৫ কোটি টাকা কোথায় খরচ হল? হিসেব নেই মোদি সরকারের কাছে।
এহ বাহ্য! ৩৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শেষ পর্যন্ত খরচ করতে পেরেছে ৩৭০ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা। বাকি সাড়ে ১২৬ কোটি টাকা এখনও পড়ে রয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কোষাগারে। কেন?
২০২২ সালে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছিল, ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৫৫৫ কোটি ২৭ লক্ষ বরাদ্দ হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৫১ কোটি ৫৫ লক্ষই খরচ হয়েছে বিজ্ঞাপন ও প্রচারে। অর্থাৎ এই খাতে ৬৩.৩ শতাংশ অর্থ ব্যয়। শিশুকন্যাদের কল্যাণের কাজে খরচ হয়েছে নামমাত্র টাকা।

আরও পড়ুন-একা সুনীলকে নিয়ে ভাবছে না ইস্টবেঙ্গল

লজ্জাও করে না ওদের?
আর্থিক ঘাটতির ধাক্কায় ভাঁড়ে মা ভবানী দশা! কোষাগারের হাল ফেরাতে মোদি সরকার ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির পথে হাঁটতে পারে। বেহাল রাজকোষ সামলাতে কর বাবদ রাজ্যগুলির প্রাপ্য ভাগের টাকা কমাতে চাইছে কেন্দ্র। কর বাবদ রাজ্যগুলির ভাগের টাকা বর্তমান ৪১ শতাংশ। তা কমিয়ে ৪০ শতাংশ করতে চাইছে নির্মলা সীতারামনের মন্ত্রক। চলতি বছরে প্রত্যাশিত কর সংগ্রহের সাপেক্ষে এই ১ শতাংশের পরিমাণ ৪০০ কোটি ডলার বা ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
খবরে প্রকাশ, ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যগুলির ভাগের টাকা কমানোর পথে হাঁটতে চলেছে মোদি সরকার। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রের কাছ থেকে মোট সংগৃহীত করের ২০ শতাংশ টাকা ভাগ হিসেবে পেত রাজ্যগুলি। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪১ শতাংশ। বিভিন্ন রাজ্যের তরফে সেই ভাগের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার দাবি তোলা হচ্ছে। কিন্তু সেই দাবির উল্টো পথে হেঁটে কেন্দ্র ভাগের টাকা আরও কমাতে চাইছে।
এদের লজ্জাও করে না!

Latest article