এই সময়ের উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ‘উদার আকাশ’। ২৪ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে ফারুক আহমেদের সম্পাদনায়। বইমেলা সংখ্যাটি গদ্যে-পদ্যে ঠাসা। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। লেখক তালিকায় নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন। শুরুতেই সুবোধ সরকারের কবিতা ‘বর্গী, যাও’। মনে দাগ কেটে গেছে। তিনি লিখেছেন, ‘ভয়কে আমি ত্যাজ্য করি, বাংলা আছে সারা শরীরে/ বর্গী যারা ঢুকে পড়েছে, যেতেই হবে তাদের ফিরে।’এই বর্গীদের সহজেই চিনে নেওয়া যায়। ভাল লাগল উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, শমিত মণ্ডল, অজিত ত্রিবেদী, শান্তা চক্রবর্তী, হাননান আহসান, আমিনুর ইসলাম প্রমুখের কবিতা। এম আলাউদ্দিন খানের গুচ্ছ কবিতা বারবার পড়ার মতো। গভীর অর্থবহ। প্রবন্ধ আছে বেশ কয়েকটি। সুমন ভট্টাচার্য-র লেখার শিরোনাম ‘বাঙালির অস্মিতার প্রতীক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’।
আরও পড়ুন-ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইব না : জেলেনস্কি
বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখিয়েছেন, কীভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, শান দিয়েছেন বাঙালির অস্মিতায়। ড. মইনুল হাসানের ‘ওয়াকফ প্রসঙ্গে’, মোঃ হাসানুজ্জামানের ‘গোলাম আহমেদ মোর্তজা এক অন্য ধারার বক্তা’, খৈয়াম কাদেরের ‘কবির সম্বোধি’, জয়ন্ত ঘোষালের ‘হিন্দু-মুসলমান আইডেনটিটির ঐক্যর আজ প্রয়োজন খুব বেশি’, ড. শেখ রেজওয়ানুর ইসলামের ‘পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও বাংলা সাহিত্য’, আমিনুল ইসলামের ‘অনিঃশেষ মুগ্ধতার শিল্প কবি রেহমান হেনরীর কবিতা’, বীরেন মুখার্জির ‘কবিতার ভাষারূপ ও নন্দনতত্ত্ব প্রসঙ্গ নব্বইয়ের কবিতা’ প্রভৃতি রচনাগুলো উৎকৃষ্ট মানের। কাজী আবু জুম্মান ‘ভারতীয় থার্ড থিয়েটার নাট্যতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ’ শিরোনামে লিখেছেন একটি রচনা। ড. অর্ণব সাহা লিখেছেন ‘কবিতার চেনা ব্যাকরণ ভেঙেছেন ব্রাত্য’। লেখাটি অভিভূত করে। অশোক মজুমদারের ‘চোখের বালি শ্যুটিংয়ে ঐশ্বর্য রাইয়ের ছবি তোলা নিয়ে যত কাহিনি’, ড. মোহাম্মদ শামসুল আলমের ‘কবি নজরুলের চিত্তবোধে ধর্মভাবনা’ পড়তে ভাল লাগে। মনে রাখার মতো গল্প উপহার দিয়েছেন সামিমা মল্লিক, মুজতবা আল মামুন, তানবির কাজি, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। আকমাম খানের উপন্যাস ‘ভুবনবাবু বাড়ি আছেন’-এর কাহিনি বেশ টানটান। একদমে পড়ে ফেলা যায়। এছাড়াও আছে সাক্ষাৎকার, পুস্তক আলোচনা-সহ আরও কয়েকটি বিভাগ। সবমিলিয়ে মূল্যবান একটি সংখ্যা। প্রচ্ছদশিল্পী সাইফুদ্দিন আহমেদ। দাম ১৫০ টাকা।
আরও পড়ুন-গুন্ডাদের অবরোধে ক্ষুব্ধ মানুষ
বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘রোহিণী’র শ্রদ্ধার্ঘ্য সংখ্যা। ড. পার্থপ্রতিম পাঁজা-র সম্পাদনায়। কোনও একজন ব্যক্তির উপর সংখ্যা প্রকাশ করতেই হিমশিম খেতে হয়, এই সংখ্যায় আলোকপাত করা হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কয়েকজন বরণীয় ব্যক্তিত্বের উপর। এ এক বিপুল আয়োজন। খুবই কঠিন কাজ। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটি করেছেন সম্পাদক। শুরুতেই স্মরণ করা হয়েছে নাট্য-ব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রকে। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন তিনি। অগ্রজকে নিয়ে কলম ধরেছেন অমর মিত্র। শিরোনাম ‘সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ বছর’। লিখেছেন, ‘মনোজ মিত্রর নাটকে বৃদ্ধ হলেন বহুদর্শী। জীবনকে দেখেছেন তিনি বহুবছর ধরে। সেই দেখাই যেন তাঁর নাটকের দর্শন।’ জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে ঋত্বিককুমার ঘটকের। ড. রতনকুমার নন্দী লিখেছেন ‘শতবর্ষে চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক’। লেখাটি আকর্ষণীয়। এক সুদর্শন ঋত্বিকের ছবি ফুটে উঠেছে। ড. সুমনপাল ভিক্ষু, ড. সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায়, ইমানুল হক, অম্লান রায়চৌধুরী, তৃষ্ণা বসাকের লেখাগুলিও উল্লেখ করার মতো। শতবর্ষে সলিল চৌধুরীকে স্মরণ করেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সুমন গুণ, স্বপন সোম, ড. তরুণ মুখোপাধ্যায়, রাজীব শ্রাবণ, তাপস বৈদ্য প্রমুখ। বহু অজানা কথা উঠে এসেছে শঙ্করলাল ভট্টাচার্যর ‘ঝড়ের কাছে রেখে গেলেন তাঁর ঠিকানা’ প্রবন্ধে। তিনি লিখেছেন, ‘সলিল চৌধুরী গান নিয়েই জন্মেছিলেন ঠিক কথা। কিন্তু ওঁর মুম্বই যাওয়ার পাসপোর্ট এসেছিল গল্প লিখে।’ আছে সুস্মেলী দত্ত, সুদীপ্ত মাজি, শুভঙ্কর দাস প্রমুখের কবিতা। বাদল সরকারের শতবর্ষ চলছে। তাঁর স্মরণে কলম ধরেছেন চন্দন সেন, প্রবীর গুহ, রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, সরিৎ দত্ত প্রমুখ। স্বপন বসুর সাক্ষাৎকারটি চমৎকার। তিনি কথা বলেছেন সলিল চৌধুরী এবং বাদল সরকারকে নিয়ে। উজাড় করেছেন ব্যক্তিগত স্মৃতি। মুনীর চৌধুরীকে স্মরণ করেছেন রামেন্দু মজুমদার, নীতিশ চৌধুরী, সুমন ভট্টাচার্য প্রমুখ এবং পিটার ব্রুককে নিয়ে লিখেছেন প্রবীর গুহ, সৌম্যেন্দু ঘোষ, সুধা বসু প্রমুখ। সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি সংখ্যা। সংগ্রহে রাখার মতো। প্রচ্ছদশিল্পী শুভঙ্কর রায়। দাম ৪৯৯ টাকা।