প্রতিবেদন : শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর হল বাংলা। প্রবল ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজ্যের বিশিষ্ট অধ্যাপক থেকে শুরু করে পড়ুয়ারা। জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিল তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে। এদিকে যাদবপুর-কাণ্ডে একজনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। ধৃতের নাম মহম্মদ সাহিল আলি৷ তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র৷ বর্তমানে তিনি একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী৷ তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে ১২ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এছাড়া সাতজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। বাম-অতিবাম ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তনীরা বহিরাগতদের নিয়ে পরিকল্পনা করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও ওয়েবকুপার সদস্যদের উপর হামলা চালায়। শিক্ষামন্ত্রীর উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। তাদের অভিযোগ, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিন ছাত্র ধর্মঘট ডেকে নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করছে এসএফআই। তবে পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি ব্লক, অঞ্চল এবং শহরের বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে মোতায়েন থাকবে ছাত্র পরিষদের সদস্যরা।
আরও পড়ুন-এদের মতোই কারও হাতে খুন স্বপ্নদীপ, বললেন বাবা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শ্রেণির ছাত্র ও কিছু ছাত্র সংগঠন হিংসাকে উসকানি দিয়ে রাজ্যের বদনাম করার চেষ্টা করেছে বলে গর্জে উঠেছে গোটা বাংলা। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই সিপিএমের গুন্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল হয়। শনিবার রবিবার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে যাদবপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন এডুকেশনিস্ট ফোরামের সদস্যরা। অধ্যাপকদের পাশাপাশি হামলায় আক্রান্ত পড়ুয়ারাও চার ঘণ্টা ধরে চলা অরাজকতার বর্ণনা দেন। অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র জানান, পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে বড় শিক্ষক সংগঠন নির্দিষ্টভাবে একটা ছুটির দিনে বার্ষিক সভা সংঘটিত করতে চেয়েছিল। তার জন্য অনুমতিও নিয়েছিল। কিন্তু চার ঘণ্টা ধরে যে অবিরাম ভয়ঙ্কর অব্যবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা কিছু ছাত্র ও তাদের সংগঠন করে গিয়েছে, তার সবটাই আপনারা জানেন। একজন অধ্যাপক, গুণী শিল্পী, ওয়েবকুপার প্রেসিডেন্ট তথা রাজ্যের মন্ত্রীকে কীভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। কীভাবে তাঁর উপর আক্রমণ শাণিত করা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সার্বিক একটা অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করে কার্যত হিংসাকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। ওমপ্রকাশ মিশ্র ছাড়াও সাংবাদিক বৈঠকে পরিস্থিতি বর্ণনা করেন অধ্যাপক প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায় ও অন্যরাও। যাদবপুরের আক্রান্ত পড়ুয়া অরিন্দম বিশ্বাস, সঞ্জীব প্রামাণিক, কিশলয় রায় নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এদিকে ব্রাত্য বসুকে হেনস্থার প্রতিবাদে বীরভূমের সিউড়িতে বিরাট মিছিল হয়। বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল সিউড়ি শহর প্রদিক্ষণ করে। শিক্ষামন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় বাম-অতিবাম সংগঠন যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, তার নিন্দা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা। জলপাইগুড়িতে বিভিন্ন ছবি হাতে প্রতিবাদে নামেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আলিপুরদুয়ারে প্রতিবাদে শামিল হন প্রকাশচিক বড়াইক, সুমন কাঞ্জিলাল, ভাস্কর মজুমদার, সমীর ঘোষ প্রমুখ। কোচবিহারের সিতাইয়ে প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের সামনে থেকে শুরু হয় মিছিল। নেতৃত্ব দেয় জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব। প্রতিবাদ মিছিলটি শেষ হয় দুর্গাপুরের চতুরঙ্গ মাঠে।
সোমবারও রাজ্যজুড়ে বুকে কালো পতাকা লাগিয়ে প্রতিবাদ মিছিল হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসে আগুন লাগিয়ে ধ্বংসলীলা চালানোর ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানানো হয়।