সুদেষ্ণা ঘোষাল, দিল্লি: সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দুর্নীতি নিয়ে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে তৃণমূল। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টার মধ্যে কমিশন তাদের যাবতীয় ত্রুটি স্বীকার করে বিবৃতি না দিলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ভোটার কার্ডের দুর্নীতির নতুন প্রমাণ পেশ করা হবে। তৃণমূলের দাবি, অবিলম্বে এই ফৌজদারি অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। বিজেপির মদতপুষ্ট এই চক্রান্তের মাথা কে, তাকে খুঁজে বের করতে হবে। এই মর্মে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূলের রাজ্যসভায় ডেপুটি লিডার সাগরিকা ঘোষ এবং লোকসভার তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ।
আরও পড়ুন-বাবার অজান্তেই ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়ের ফাঁসি হয়ে গেল বিদেশে
লক্ষণীয়, ভোটার কার্ডের দুর্নীতির পর্দাফাঁস করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোরে আয়োজিত দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়েই তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাংলার ভোটারদের মধ্যে ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে দিচ্ছে বিজেপি৷ রাজ্যের ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র বা এপিক কার্ডের নম্বরের সঙ্গে কীভাবে অন্য রাজ্যের ভোটারদের এপিক নম্বর এক হয়ে যায়, প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, বাংলার সর্বত্র ভুয়ো ভোটার ধরার জন্য অভিযান চালানো হবে৷ এত বড় ঘটনার পরে সামান্য বিবৃতি দিয়ে চুপ করে গিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ দেশের ভোট নিয়ামক সংস্থার এই নীরবতাকে হাতিয়ার করেই সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে এবার বড় রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে হাঁটা শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস৷
এই প্রসঙ্গেই ডেরেক ও’ব্রায়েনের দাবি, বাংলার বৈধ ভোটাররাই শুধু বাংলাতে ভোটদান করবেন, এটা নিশ্চিত করতে হবে৷ অন্য রাজ্য থেকে ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত কোনওভাবেই মানা হবে না। মার্চ, এপ্রিল ও মে— এই তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকার যাবতীয় ত্রুটি সংশোধন করতে হবে, দাবি জানান ডেরেক ও’ব্রায়েন৷
আরও পড়ুন-সিপিএমের মিথ্যাচার, ৩ পয়েন্ট ও ছবি দিয়ে পর্দাফাঁস দেবাংশুর
একই সুরে এদিন জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার ডেপুটি লিডার সাগরিকা ঘোষ৷ তাঁর কথায়, এটা একটা প্রতারণা৷ বাংলার ভোটারদের আসল এপিক কার্ড ব্যবহার করছে অন্য রাজ্যের ব্যক্তি৷ আমরা কি ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, পাসপোর্টের ডুপ্লিকেট দেখতে পাই? তাহলে এপিক কার্ড ডুপ্লিকেট কেন হবে? জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কোনও আধিকারিক এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে খুঁজে বার করা হোক৷ এর তদন্ত হোক৷ প্রধানমন্ত্রী যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চাইছেন, তা হতে দেব না৷ আমরা লড়াই করব, গণতন্ত্রকে রক্ষা করব৷ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং সাগরিকা ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ কীর্তি আজাদও৷ তাঁর কটাক্ষ, সুপ্রিম কোর্ট একবার সিবিআইকে খাঁচায় বন্ধ তোতাপাখি বলেছিল? আমার প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশন কি খাঁচায় বন্ধ ময়না?
তাত্পর্যপূর্ণ হল, ভুয়ো ভোটার এবং এপিক স্ক্যাম নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সুর চড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ইন্ডিয়া জোটের সদস্য ৫টি রাজনৈতিক দল তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে, দাবি দলীয় সূত্রের৷ কয়েক মাসের মধ্যেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন৷ তার আগে তৃণমূলের তোলা এপিক স্ক্যাম ইস্যু সর্বভারতীয় স্তরে বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে আন্দাজ করেই এই দলগুলি এবার এপিক ইস্যুতে তৃণমূলের পাশে থাকতে চায়৷ এপিক ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল৷ এই ইস্যুটিকে হাতিয়ার করে আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে চলা সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সোচ্চার হবেন তৃণমূল সাংসদরা।