প্রতিবেদন : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই ফের হবে ওয়েবকুপার সম্মেলন, পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে জানিয়ে দিল ওয়েবকুপা। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে সংগঠনের তরফে স্পষ্ট বলা হয়, গত শনিবার যেভাবে পূর্বপরিকল্পনা মতো শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীদের হেনস্থা করা হয়েছে, মন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়েবকুপার প্রশ্ন, এরা পড়ুয়া? শিক্ষকদের প্রতি এই তাদের আচরণ? এই ধরনের ঘটনা গুন্ডা ও লুম্পেন ছাড়া অন্য কেউ করতে পারে না। এদিন অধ্যাপক সংগঠনের তরফে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, তাঁরা আরও বৃহৎ আন্দোলনের পথে নামছেন। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আজ মঙ্গলবার শিক্ষকদের প্রতিবাদ মিছিল। মিছিল শুরু হবে যাদবপুর ৮-বি থেকে দুপুর ২টোয়। সোমবার প্রেসক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা, বামেদের কোনও ভাবেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করতে দেওয়া যাবে না। এই উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। যার নজির সোমবার সন্ধ্যায় আরও একবার দেখা গেল। এদিন এবিভিপি এবং এসএফআইয়ের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। গোপাল সেনের মতো শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও যাদবপুরে খুন করতে চেয়েছিল বাম গুন্ডারা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে মন্ত্রীর উপর প্রাণঘাতী হামলা করা। কিন্তু সেই প্ররোচনায় পা না দিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে অভিভাবকসুলভ আচরণ করে গিয়েছেন ব্রাত্য বসু। এদিন ওয়েবকুপার তরফে উপস্থিত ছিলেন, সহ-সভাপতি সেলিম বক্স মন্ডল, সহ-সভাপতি সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজিৎ মন্ডল, অ্যাসোসিয়েট সেক্রেটারি অর্ণব সাহা, প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়, চন্দনা সাহা।
আরও পড়ুন-শান্তিতে উচ্চমাধ্যমিক, ক্যামেরা নিয়ে ফ্লপ নাটক শেষ হল পড়ুয়া প্রতিরোধে
শনিবার ঘটনার দিন এসএফআইয়ের গুণ্ডাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন অধ্যাপক প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়। এদিন তিনি সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ঘটনার দিন এসএফআই চিঠি দিয়ে ব্রাত্য বসুকে বৈঠকের জন্য আবেদন জানায়। এরপরে আরও একটি দল এসে দেখা করতে চায়, ব্রাত্য বসু তাতেও অনুমতি দেন। তারা বলে চারজনে হবে না আরও প্রতিনিধি দেখা করতে চায়। এরপর তারা কোলাহল শুরু করে। এরপর যখন মন্ত্রী বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন তারা আটকানোর চেষ্টা করে। গাড়ির সামনে পড়ে গিয়ে চাপা পড়ার নাটক করে। আমাদের সংগঠনের যে বিশালতা, তাকে ব্যবহার করে তারা খবর হতে চেয়েছে। সংগঠনের সহ-সভাপতি সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যাদবপুরে আমরা রাজত্ব দখল করতে যাইনি, যাদবপুরে সাম্রাজ্য বিস্তার করতেও যাইনি। ওদের এটা পূর্বপরিকল্পনা ছিল। তার শিকার হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে তাতে উনি যে কোনও সময় পড়ে যেতে পারতেন। অধ্যাপক প্রশ্ন তোলেন, কোনও সুস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুস্থ পড়ুয়ারা কি আদৌ এই ধরনের শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে পারে? বিজেপি-বামেদের বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই সেই লড়াইকে রুখে দেওয়াই কি তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল? যারা ঠেলাঠেলি করেছে তারা প্রকৃতস্থ অবস্থায় ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কার্যত অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক মনোজিত মন্ডল। তিনি বলেন, তৃণমূল পন্থী অধ্যাপকদের বয়কট করা হচ্ছে। আমাদের কী অপরাধ? আমরা একটা ক্যাম্পাসের সভা করতে চেয়েছিলাম সেটাই কি অপরাধ। লাগাতার আক্রমণের হুমকি আসছে আমাদের কাছে নিগৃহীতা অধ্যাপিকা চন্দনা সাহা বলেন, সেদিন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান বাড়তে থাকে। পরের দিকে স্লোগান বদলে যায়। ব্রাত্য বসুকে দেখে ওরা আরও মারমুখী হয়ে উঠে। উনি যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে বিক্ষোভকারীরা। আমরা বাধা দিলে আমাদেরও আক্রমণ করা হয়। শিক্ষাঙ্গনে যে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে শিক্ষকদের এভাবে আক্রমণ করতে পারে সেটা সত্যি আমাদের কাছে খারাপ অভিজ্ঞতা। আমরা চাই এদের বিচার করা হোক এবং তাদের সংশোধনের ব্যবস্থা করা হোক। ওই উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের দল কোনও বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে উপস্থিত অধ্যাপকদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করতে থাকে এবং শারীরিক নিগ্রহে লিপ্ত হয়। সবচেয়ে নিন্দনীয় বিষয় হল, মহিলা অধ্যাপকগণও তাদের এই বর্বর আক্রমণের শিকার হন। যারা গণতান্ত্রিক আলোচনার পথে না গিয়ে সন্ত্রাস ও হিংসার মাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে চায়, তারা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। ওয়েবকুপা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, এই ধরনের গুন্ডামি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।