দুবাই, ৪ মার্চ : বিরাট কোহলি যখন ফিরছেন, হার্দিক তাঁর গ্লাভসে গ্লাভস ঠেকিয়ে নামলেন। এটা ফিস্ট বাম্প। বার্তা এই, আমি আছি। পরের কয়েকটা ওভারে দুবাই যা দেখল, সেটাই হার্দিক পান্ডিয়া। সাত কোটির ঘড়ি পরে মাঠে নামেন, চাপের মুখ থেকে দলকে টেনেও তোলেন। তখনও ৪০ রান দরকার। হার্দিকের তিন ছক্কায় সেটা জলভাত হয়ে গেল। এমন নয় হার্দিকই ভারতকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে তুললেন। সেটা কিং কোহলির জন্য বরাদ্দ। সাবাসি থাকুক শ্রেয়স, রাহুল, শামির জন্যও। কিন্তু হার্দিক এসে অজিদের স্রেফ হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন।
একটু আগে ছিল অন্য ছবি। উদ্দাম পার্টির মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে যেমন হয়, দুবাই মাঠের সেই অবস্থা। কারও মাথায় হাত। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না যা হল। রাহুলও বলতে চাইছেন, বিরাট ভাই, এটা কী হল। ৯৮ বলে ৮৪ করে বিরাট তখন ফিরছেন। প্রবল বিরক্ত। ম্যাচ শেষ করে আসতে পারলেন না বলে। তবে রাহুল ৪২ নট আউট থেকে শুধু ৪ উইকেটে জয় নিয়ে এলেন না, ১৯ নভেম্বর ২০২৩-এর আমেদাবাদ হারের বদলাও তুলে আনলেন। বিশ্বকাপ ফাইনালের জবাব চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। আইসিসি ইভেন্টে এত রান তাড়া করে কেউ অজিদের হারাতে পারেনি।
আরও পড়ুন-গোয়াল থেকে ছাগল নিয়ে ঠাকুরঘরে চিতাবাঘ!
রোহিত গত ক’দিনে প্রচুর চর্চায় ছিলেন। এই চর্চার সঙ্গে ক্রিকেটের সম্পর্ক নেই। একটা রান করে চর্চা তিনি থামিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু পারলেন না। সবাই চায় রান করুন। বিরাট উঠে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু হিটম্যানের বেলায় হচ্ছে না। এমন নয় যে রোহিতকে আউট অফ টাচ মনে হচ্ছে। শুধু সেট হয়ে উইকেট দিয়ে আসছেন। এদিন কুপার কনোলিকে ওই সুইপ মারতে যাওয়ার দরকার ছিল না। ততক্ষণে নামের পাশে ২৮ রান। ২৯টি বল। সেখান থেকে আবার তিনি সমালোচনার চক্রব্যূহে ফেরত গেলেন।
শুভমনকে (১১) ডারশুইস ফিরিয়েছেন। ৩০ রানে শুভমন আর ৪৩-এ রোহিত আউট হওয়ার পর ঝুপ করে চাপ এসেছিল ভারতীয় ইনিংসে। এই অস্ট্রেলিয়ার কমজোরি বোলিং নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজলউড, মার্শ, স্টোইনিস না থাকলে অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু বিরাট আর শ্রেয়স চাপটা কাটিয়ে উঠেছিলেন। বিরাট পাকিস্তান ম্যাচে সেঞ্চুরি করে করে আবার বিরাট হয়ে উঠেছেন। শ্রেয়স জীবনের সেরা ফর্মে রয়েছেন। জাম্পাকে উইকেট দিয়ে যাওয়ার আগে ৪৫ করে ফেলেছিলেন। দুর্ভাগ্য হাফ সেঞ্চুরি হল না।
স্মিথরা দুবাইয়ে খেলতে হবে জেনেই চতুর্দিক থেকে স্পিনার সংগ্রহে নেমে পড়েন। জাম্পা তো ছিলেনই, শর্টের বদলে নেওয়া হল কনোলিকে। তিনি পার্টটাইম স্পিনার। এদিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তনভির সাঙ্গাকেও নামিয়ে দিলেন স্মিথরা। এরসঙ্গে ম্যক্সয়েল যেমন কয়েক ওভার হাত ঘুরিয়ে গেলেন, তেমনই ট্রাভিস হেডও। কিন্তু যেটা হল, ভারতের চার স্পিনার যে চাপ তৈরি করেছিলেন, তার কাছাকাছিও পারেননি অস্ট্রেলিয়ার ‘পাঁচ’ স্পিনার।
জাদেজা দুটো ভাল ব্রেক থ্রু দিয়েছেন। প্রথমে লাবুশেনকে (২৯) ফেরান। তারপর জস ইনগ্লিস ১১)। এই দুটো পার্টনারশিপ অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। স্মিথ আর লাবুশেন ৫৬ রান যোগ করেন। কিন্তু বেশি বিপজ্জনক দেখাচ্ছিল পরের জুটিকে। স্মিথ একটা দিক আগলে রেখেছিলেন। আর ইনগ্লিস ‘রান আ বল’ কায়দায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন। বিরাটের ক্যাচে তাঁকে থামতে হল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সর্বাধিক ক্যাচ। ৩৩৫টি ক্যাচ ধরে দ্রাবিড়কে (৩৩৪) পিছনে ফেললেন বিরাট। পরে এলিসের ক্যাচও নেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া শুরুতেই কুপার কনোলিকে (০) হারিয়েছিল। এই কনোলিকে ম্যাথু শর্টের জায়গায় নামিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তিন ওভারের মধ্যে ওপেনারকে হারিয়ে ওরা এত সতর্ক হয়ে গেল যে, প্রথম বাউন্ডারি আসতে লাগল ৫১ বল। হেড আর স্মিথ এত সাবধানে খেলায় রান রেট পাঁচের নিচে নেমে এসেছিল। হেডকে অবশ্য বরুণ বল করতে এসেই তুলে নেন। ৩৩ বলে ৩৯। পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে এটা ঠিক হেডের মতো আগ্রাসী ব্যাটিং নয়।
আরও পড়ুন-সূচনার অপেক্ষায় প্রায় ৮ কোটিতে নির্মিত গোল্ড হাব
রোহিত এতবার টস হারলেন যে এটা এখন অভ্যাস। অথচ টস জেতা জরুরি ছিল। দুবাইয়ের ম্যাচে থিওরি হল আগে ব্যাট করে বোর্ডে রান তোল। তারপর স্পিনারদের লড়িয়ে দাও। রোহিত টসে হেরে এই সুবিধা হারিয়েছেন। পরে অবশ্য রান তাড়া করে জিতলেন। জাদেজা পরপর দুটো উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে রেখেছিলেন। ভারত আগের ম্যাচের দল নিয়ে মঙ্গলবার নেমেছিল। তাতে রোহিত ছয় বোলার ব্যবহারের সুযোগ পেলেন।
অস্ট্রেলিয়া ১৪৪/৪ হয়ে যাওয়ার পর স্মিথ ভরাডুবি থেকে দলকে রক্ষা করেন। ৭৩ রান করতে খেলেছেন ৯৬ বল। বোঝা যাচ্ছে গোটা দলের চাপ ঘাড়ে নিয়ে খেলছিলেন স্মিথ। শেষপর্যন্ত শামির ফুলটসে বোল্ড হয়ে যান। তবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য যেটা খারাপ হল, সেটা এই যে পরের দিকে অ্যালেক্স ক্যারি (৬১) ছাড়া কেউ রান করতে পারেননি। ম্যাক্সয়েল ৭ রান করে বোল্ড হয়ে যান অক্ষরের বলে। বলের লাইন মিস করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া এরপরও ২৬৪ করতে পেরেছে ক্যারির জন্য। শ্রেয়সের ডাইরেক্ট থ্রোতে তিনি রান আউট হয়ে যান। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ৪৮ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন শামি। ২টি করে উইকেট নেন বরুণ ও জাদেজা। একটি উইকেট অক্ষর ও হার্দিকের। শুধু খালি হাতে ফিরতে হল কুলদীপকে।