“তোরা করলি কেবল অহরহ নীচ কলহের গরল পান”

‘আঁখো দেখা হাল’। তার ভিত্তিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন। রাখলেন আন্তরিক আবেদনও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত এক কন্যার পিতা শান্তনু সরস্বতী

Must read

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাম-অতিবামেরা যে মিথ্যাচার করছে, আজ সে-কারণেই কলম ধরতে বাধ্য হলাম।
শিক্ষাবিদ ত্রিগুণা সেন-এর হাতে তৈরি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur university) সঙ্গে আমাদের পারিবারিক যোগ বহুদিনের। আমার দুই কাকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ইঞ্জিনিয়ার। একজন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত করেছেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। আমার এক ভাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বন্ধুবান্ধবদের কথা ছেড়েই দিলাম। আমার অগণিত বন্ধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্তনী। এই বৃত্তে সর্বশেষ সংযোজন আমার কনিষ্ঠ কন্যা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ঘটনার দিন সন্ধেবেলায় আমার ছোট মেয়ে ও তার এক বন্ধু উপস্থিত ছিল। ঘটনার ‘আঁখোদেখা হাল’ আমি ওর মুখেই শুনেছি।
ওইদিন শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণ নিয়ে একটি সেমিনার ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই আলোচনা চক্রে অংশ নেওয়ার জন্যই সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনও রকম উসকানি ছিল না। কোনও প্ররোচনা ছাড়াই অতর্কিত হামলা চালায় বাম ও অতিবাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা, সোজা কথায় ভারতীয় ছাত্র ফেডারেশন ও নকশালপন্থী সংগঠনের সদস্যরা। এদের মধ্যে আশি শতাংশ ছিল বহিরাগত। তারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া নয়। আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে আগে থেকেই তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিড় করেছিল। পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বোঝানোর অনেক চেষ্টা হয়। তার পরেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ঘাটতি পড়েনি। এবং পুরো ঘটনাই চলতে থাকে এসএফআই-এর প্ররোচনায় নকশাল ছাত্র সংগঠনের ছাত্র-ছাত্রী নামধারী দুষ্কৃতীদের দ্বারা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) নকশাল ছাত্র সংগঠনের চারণভূমি আজ থেকে নয়। সেই গত শতাব্দীতে ছয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকে। এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও, নিষিদ্ধ এই সংগঠন চিরকাল চেনা বামপন্থীদের সাহায্য পেয়ে এসেছে। বামফ্রন্টের ৩৪ বছর, এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ১৪ বছর শাসনকালেও তা এতটুকু কমে তো নি-ই, উল্টে বিভিন্ন ছদ্মনামের আড়ালে ছাত্র-ছাত্রীদের মগজ ধোলাইয়ের কাজ চলছে তথাকথিত সংশোধনবাদী বামপন্থীদের মদতে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত ভদ্র ও গুণিজন। সেজন্যই গত শনিবারের এই ঘটনা নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে ছাত্রস্বার্থবিরোধী কোনও বিবৃতি এখনও দেননি। বামফ্রন্টের শাসনকালে এমত কোনও ঘটনা ঘটলে ওই রাতেই গায়েব হয়ে যেত বিক্ষোভকারীরা। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারে আছে বলে এখনও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই নপুংশক নকশাল-মাওবাদীর দল।
কেউ কেউ বলে থাকেন এবং তাঁরা খুব একটা ভুল কিছু বলেন না, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur university) ৬০ একর নিয়ে একটি ‘গ্রহ’। যে গ্রহের পাশ দিয়ে লোকাল ট্রেন যায়, বাস যায়, হলুদ ট্যাক্সি যায়, হেঁটে চলে যান মানুষ, চলে যায় কতশত মিছিল। কিন্তু ইথার তরঙ্গ ভেদ করে সেই গ্রহে ঢুকতে পারে না বাইরের কোনও কিছু। কিছু মিছিল নভোযান হয়ে সে-গ্রহে পৌঁছোনোর চেষ্টা করে। পারে না। পাঁচিলে ধাক্কা খেয়ে ফিরতে হয়। গ্রহের রং লাল। সেই লালের মধ্যে অবশ্য বিভাজন আছে। কোনও অংশ গাঢ় লাল। কোনও অংশ ফিকে। গাঢ়-ফিকের দ্বন্দ্ব সেই গ্রহের রোজনামচা। কিন্তু বাইরের কোনও রং ঢুকতে গেলে সব লাল মিশে যায়। তখন সব লাল এক এবং অভিন্ন। গত শনিবার সেসব পর্যবেক্ষণের যথার্থতা পুনঃ প্রমাণিত।

আরও পড়ুন- এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ, ঘরের মাঠে হার ইস্টবেঙ্গলের

স্মর্তব্য, এমন ঘটনা যে এই প্রথম ঘটাল বাম এবং অতিবামেরা— তা মোটেই নয়। এর আগেও তৎকালীন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গেও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছিল বামপন্থী এবং তার সহকারী নকশাল ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। এবং চারিদিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়ে যাদের ইতিহাস সারা বিশ্ব জানে। কিন্তু অনেকেই যেটা জানেন না, সেটা হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে হেনস্থাকারী ছাত্রকে সেদিন রাতেই নিগৃহীত হতে হয়েছিল তাঁর এলাকার গেরুয়াবাদীদের হাতে। কিন্তু এবার তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তেমন কিছু করা হয়নি।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur university) পাঠরত এক ছাত্রীর অভিভাবক হিসেবে আমার বিনীত অনুরোধ, শক্ত হাতে দমন করুন এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকসেবন থেকে শুরু করে সমস্ত রকম অসামাজিক কাজের কান্ডারি এবং মদতকারী এই বাম এবং অতিবামেরা। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফেডারেশন এবং নকশালরা দাবি করে আসছে, ইন্দ্রানুজ নামক ছাত্র উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু গাড়ির তলায় চাপা পড়ে আহত হয়। অথচ, প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য : সরকারি গাড়ি নয়, বরং স্কুটির ধাক্কায় আহত হয়েছিল ছেলেটি। তাই আঘাত লাগে তার চোখে, মাথায় নয়।
একজন প্রাক্তন সাংবাদিক হিসেবে বুঝলাম সেটাও ভয়ঙ্কর। সোমবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ডাকা বনধটা ছিল একটা ফাঁদ। আসল উদ্দেশ্য ছিল, নকশালদের তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্রদের হাতে মার খাওয়ানো। সব জায়গায় নকশালদের বাঘের মুখে লেলিয়ে দিয়ে নিজেরা পিঠটান দিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

২০১১ সালে এসইউসিআই যে বামপন্থীদের হাত ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরেছিল, সেই ব্যথা এখনও বাম এবং অতিবামেদের হৃদয়ে প্রকট। কী আশ্চর্য বিষয় দেখুন, এই ইন্দ্রানুজ নামক ছাত্রটি কিছুকাল আগে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ‘কুকুর’ বলেছিল বলে খবরে ও সমাজমধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে প্রকাশ! তাই কি বদলার জন্য ইন্দ্রানুজকে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর গাড়ির ওপর উঠতে বলা? ইন্দ্রানুজ মারা গেলে ওর লাশ নিয়ে রাজনীতি করা যেত! কিন্তু বিধি বাম! সাপের গালে চুমু খাওয়া এবং ব্যাঙের গালেও চুমু খাওয়া মহম্মদ সেলিমের দলের সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল! তাই তো বলি, সাধু সাবধান! এই বামপন্থীরা ঘাসের ভেতর আত্মগোপন করে থাকা সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর। যে বিশ্বাস করবে, তাকে সারাজীবন ঠকতেই হবে।
এই ঘটনার প্রসঙ্গে ক্রমাগত মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা কবিতার কয়েকটা লাইন। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
“ মারতে জানা যত সহজ
মরতে জানা তত সহজ নয়,
তুই কি ভাবিস? তাই কি দেখাস ভয়?” যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বাম-অতিবাম আঁতাত ভাঙা হোক যত শীঘ্র সম্ভব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানদুটি আবার ছন্দে ফিরুক, দেশের সেরা হয়ে উঠুক, এটুকুই প্রার্থনা।

Latest article