বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ! গদ্দারের ক্ষোভ উগরে দিলেন তাপসী, বিস্ফোরক অভিযোগ শ্যামলের

Must read

বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল (TMC) যোগ দিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। সোমবার, বিকেলে তৃণমূল ভবনে দলীয় নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হাত থেকে পতাকা তুলে নেন। তাপসীর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর সঙ্গেই যোগ দেন পূর্ব মেদিনীপুরের আরেক বিজেপি নেতা শ্যামল মাইতি। ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে গদ্দারের জেলায় ধাক্কা।

বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল (TMC) যোগ দিয়েই শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন বিধায়ক-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের দুই প্রাক্তন বিজেপি নেতৃত্ব। প্রগতিশীল বাংলায় বিভাজনের রাজনীতির অপচেষ্টা চলছে। তার বিরোধিতা করেই বিজেপি ছেড়েছেন। সোমবার, তৃণমূল ভবনে শাসকদলে যোগ দিয়ে এই প্রতিক্রিয়া দিলেন হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। আর বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তাঁর সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিজেপি নেতা শ্যামল মাইতি। তাঁর কথায়, আগামী ৮ মাসের মধ্যে রাজ্যে সংঘর্ষ বাধাতে চান বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লোভে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের ষড়যন্ত্র করে পুলিশকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করাতে চাইছেন শুভেন্দু।

২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়জয়কারের মধ্যেও কংগ্রেস সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে হলদিয়া আসনে জেতেন তাপসী মণ্ডল। এর পরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান শুভেন্দু। তাপসীও তাঁর হাত ধরে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যান। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে হলদিয়া থেকে বিজেপির টিকিটে লড়েন তাপসী এবং জয়ী হন। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছিল। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেকথা স্বীকার করেন নেন তাপসী। বলেন, “প্রগতিশীল এই রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি চলছে। এই রাজনীতি মেনে নেওয়া কঠিন হচ্ছিল। বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। তাই তৃণমূলে জয়েন করছি।”

আরও পড়ুন- এপিক দুর্নীতি নিয়ে আলোচনায় অনিহা! রাজ্যসভায় ওয়াক আউট তৃণমূলের

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে তাপসী বলেন, “বাংলার মানুষের হৃদয়ে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে চলার প্রয়াস শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৪ বছরের বাম জমানায় বাংলা পিছিয়ে পড়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।“ তাপসী কথায়, মানুষের জন্য কাজ করতে হলে মমতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর কর্মযজ্ঞে সামিল হতে হবে। হলদিয়ার বিধায়ক বলেন, “প্রগতিশীল বাংলাকে রক্ষা করতে, মূলত হলদিয়ার মানুষের জন্য কাজ করতেই মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সঙ্গে যুক্ত হলাম। তাঁর নির্দেশেই আগামীতে মানুষের জন্য কাজ করব।” শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সুর ছড়িয়ে তাপসী বলেন, ”অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে প্রার্থী করেছিলেন শুভেন্দুবাবু। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ওনাকে বাইরে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে গিয়ে এলাকার কর্মীদের সঙ্গে, বিধায়কের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক পরিবেশ নয়। তাঁকে সামনে রেখে, তার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হচ্ছে। এটাই বাস্তব।” হলদিয়ার বিধায়ক সাফ জানান, ”বিধায়কের টিকিটের জন্য আমি লালায়িত নই। জিতব কি জিতব না সেটা তো যখন ভোট হবে তখনই বোঝা যাবে।”

বিজেপি নেতৃত্ব বিশেষ করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন শ্যামল মাইতিও। বলেন, “বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারত ও বাংলার ঐতিহ্য। বিরোধী দলনেতা হিংস্র রাজনীতি করছে। বাংলায় শান্তি বজায় রাখতে আমরা বিজেপি ছাড়ছি।” এর পরেই বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ”বিজেপিতে লক্ষ্য করছি বাংলায় হিংস্র রাজনীতি করা হচ্ছে। বিরোধী দলনেতা একটা হিংস্রতার চেষ্টা করছেন। তিনি চাইছেন একটা অশান্তি বেঁধে যাক। আমি বলেছি, বিধায়িকা বলেছি, কিন্তু শোনা হয়নি। বাংলায় শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে দিদির নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্ব, সবে মিলি করি কাজ- সেকারণে এখানে এসেছি।” শ্যামলের কথায়, আগামী ৮ মাসের মধ্যে রাজ্যে অশান্তি বাধাতে চান বিরোধী দলনেতা। বলেন দিল্লির সঙ্গে কথা হয়েছে। বাংলায় রাষ্ট্রপতিশাসন জারি করে, পুলিশকে বসিয়ে রেখে নির্বাচন করাতে চাইছেন। উনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। আর সেটা না হলে তিনি সন্ন্যাস নিয়ে নেবেন বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু-দাবি প্রাক্তন বিজেপি নেতার।

বিরোধী দলনেতাই হলদিয়ায় তোলাবাজির কালচার তৈরি করেছেন বলেও তীব্র আক্রমণ কেন শ্যামল। তাঁর অভিযোগ, কাঁথি থেকে ব্যাগ নিয়ে এসে হলদিয়া থেকে টাকা নিয়ে যায় শুভেন্দুর লোক। শ্যামল মাইতির অভিযোগ, হারবেন জেনেই পূর্ব মেদিনীপুর নয়, হেভিওয়েট কেন্দ্রে দাঁড়াতে চাইছেন বিরোধী দলনেতা, যাতে মুখরক্ষা হয়। শুভেন্দুর ঘর ভাঙায় উচ্ছ্বিসত তৃণমূল শিবির।

Latest article