রাঙামাটির দেশ বীরভূম (Birbhum)। এই মাটি প্রাণাধিক প্রিয় ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তাঁকে দিয়েছিল পরম শান্তি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন ভুলিয়ে দেয়। বসন্তে সেজে উঠছে অন্যরকম সাজে। ফুটেছে নানা রঙের পলাশ। চোখ ফেরানো মুশকিল। জেলায় আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। শুধুমাত্র পলাশ দেখার টানে বহু পর্যটক দুই-তিন দিনের জন্য ভরা বসন্তে বীরভূম ঘোরার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি ঘুরে দেখেন দর্শনীয় স্থানগুলো। দোল উৎসবকে সামনে রেখে ঘুরে আসতে পারেন। কোথায় কোথায় যাবেন?
কয়েকটি আদিশক্তি পীঠ রয়েছে বীরভূমে (Birbhum), যা বাংলার এবং বাইরের বিপুল সংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করে। প্রতিদিন ভক্তদের ভিড় নামে এই পবিত্র স্থানগুলোয়। বীরভূমের শক্তিপীঠগুলি হল তারাপীঠ, অট্টহাস, বক্রেশ্বর, কঙ্কালীতলা, নন্দীকেশ্বরী, নলহাটি। চেষ্টা করবেন প্রতিটি জায়গা ঘুরে দেখার। মনের মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাব জন্ম নেবে। পলাশ-সৌন্দর্য মাতাল করে দেবে মন।
চাইলে ঘুরে আসতে পারেন হেতমপুর জমিদারবাড়ি। যদিও স্থানীয় লোকেরা একে রাজবাড়ি বলেই মনে করেন। বীরভূমের দুবরাজপুর শহরের একদম পাশেই অবস্থিত। দেখে নেওয়া যায় সুরুল জমিদারবাড়ি। শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভবনটি প্রাচীন। দেখার মতো।
ঘুরে নিতে পারেন মামা ভাগ্নে পাহাড়। দুবরাজপুর স্টেশন থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে, দুবরাজপুর-পাণ্ডবেশ্বর রাজ্য সড়কের একদম ধারেই অবস্থিত। পথে যেতে যেতে দুপাশে চোখে পড়বে পলাশের রং। পাহাড়ের সামনে একটি মন্দির আছে, পাহাড়েশ্বর। এই মন্দিরের ভিতর দিয়েই মামা ভাগ্নে পাহাড় যাওয়া যায়।
জয়দেব কেন্দুলি বীরভূমের ইলমবাজার ব্লকের অজয় নদের তীরে অবস্থিত। ছোট্ট একটি গ্রাম। ছোট হলেও গ্রামটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। পৌষ সংক্রান্তির সময় এখানে বসে বাউল মেলা। বসন্তে পলাশে পলাশে ছেয়ে রয়েছে চারদিক।
দোলের দিন ঘুরে আসুন বোলপুর শান্তিনিকেতন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাণের ভূমি। তাঁর জন্য এখানে ঘটেছে সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্যের অনবদ্য মিশ্রণ। বসন্তে প্রকৃতি এখানে রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে। চোখ মেললেই দেখা যায় রাঙা পলাশ। অদূরেই কোপাই। এই নদীর মোহনীয়তা সবসময়ই দেশ-বিদেশের মানুষকে আকৃষ্ট করে। তীরে বসে শুনতে পাবেন বাউল গান। দোলের দিন শান্তিনিকেতনে কাটালে সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি হবে। পলাশের সাজে সেজে ওঠেন বহু মানুষ। পরিবেশিত হয় নাচ, গান। চলে আবির খেলা। চাইলে অংশ নিতে পারেন রঙের খেলায়। দূর থেকে দেখলেও অর্জন করবেন বিরল অভিজ্ঞতা।
শান্তিনিকেতন গেলে অবশ্যই ঘুরে দেখবেন খোয়াই সোনাঝুরি বন। একটি অপূর্ব জায়গা। শান্ত গ্রামীণ পরিবেশ এবং সবুজের মাঝে লুকিয়ে থাকা ঘন জঙ্গল বহু মানুষকে আকৃষ্ট করে। এখানেই বসে সোনাঝুরি হাট। নানারকম পশরা সাজিয়ে বসেন গ্রামবাসীরা। পাওয়া যায় পোশাক, পোড়ামাটির গয়না, ঘর সাজানোর উপাদান ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে উত্তেজনা, পরিস্থিতি সামাল দিল তৃণমূল
নন্দন আর্ট মিউজিয়াম এবং গ্যালারি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের একটি অসাধারণ জায়গা। এই জাদুঘরটি কলা ভবনের অংশ, এতে সঙ্গীত ভবন এবং কালো বাড়িও রয়েছে। পর্যটকদের কাছে এটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। রবীন্দ্র মিউজিয়ামে দেখতে পাবেন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি, গাড়ি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এছাড়াও আছে আম্রকুঞ্জ, উপাসনা গৃহ ইত্যাদি।
যাবেন সৃজনী শিল্পগ্রামে। এটা শান্তিনিকেতনে অবস্থিত পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের একটি গ্রাম্য পর্যটন কেন্দ্র। কমপ্লেক্সটি ২৬ বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত। কুঁড়েঘরের মতো আকৃতির ন’টি জাদুঘর রয়েছে। শিল্পগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরে ১০০০টিরও বেশি নিদর্শন রাখা আছে।
বোলপুরের কাছেই রয়েছে বল্লভপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা। এই অভয়ারণ্যটি ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অনেক গাছ এবং প্রাণীর আশ্রয়স্থল। তাই প্রকৃতিপ্রেমী এবং বন্যপ্রাণী উৎসাহীদের কাছে একটি বড় আকর্ষণ। এখানেও দেখা মিলবে রাঙা পলাশের।
বীরভূমের (Birbhum) পরিবার-বান্ধব গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি অমর কুটির। মনোরম এবং শান্ত পরিবেশ-সহ একটি চমৎকার ইকো-পার্ক। কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত, পরিচ্ছন্ন ও সু-পরিচালিত পার্কটি সবুজ বনে ঘেরা। এখানে প্রচুর পার্কিং স্পেস রয়েছে। এই সময় বীরভূমের যেখানেই যান না কেন, রাঙা পলাশ থাকবে সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে। চিন্তা-ভাবনা দূরে সরিয়ে সপরিবার বেরিয়ে পড়ুন।