প্রতিবেদন: বালুচিস্তানের ট্রেন অপহরণ কাণ্ডে নয়া মোড়! পাক সেনা দাবি করেছিল, জাফর এক্সপ্রেসের পণবন্দি যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়েছে। সেই দাবি উড়িয়ে বালুচ বিদ্রোহীরা শনিবার জানিয়ে দিল, পাক সরকারের একগুঁয়েমি ও অনমনীয় মনোভাবের কারণে ২১৪ জন পণবন্দিকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিবৃতি দিয়ে এই দাবি করে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই সংগঠনের সদস্যরাই বালুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস অপহরণের দায় স্বীকার করেছিল। শনিবার বালুচ বিদ্রোহীদের নয়া বিবৃতির পর ট্রেন অপহরণ ও পণবন্দি কাণ্ডে প্রকৃতপক্ষে কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা আরও বাড়ল। পাকিস্তান সেনার তরফে এর আগে জানানো হয়েছিল, বুধবার রাতে জাফর এক্সপ্রেস অভিযান শেষ হয়েছে।
আরও পড়ুন-সিকিমে ঢুকতে পর্যটকদের দিতে হবে বাড়তি কর
সমস্ত পণবন্দিকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত হয়েছেন ৩৩ জন বালুচ বিদ্রোহী। কিন্তু শনিবার বিএলএ যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে পাক সেনার দাবি পুরোপুরি নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। উল্টে অপহরণকারী বিদ্রোহীদের বক্তব্য, তারা যে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল পাক সরকারকে, তা শুক্রবারই শেষ হয়েছে। পাক সরকার অনমনীয় অবস্থান বজায় রেখে তাদের দাবি মেনে নেয়নি। ফলে ২১৪ জন পণবন্দিকেই হত্যা করা হয়েছে। এই পণবন্দিরা মূলত পাকিস্তান সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে বালুচ বিদ্রোহীদের দাবি। গোটা পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তান সরকারকে দুষেছে বিএলএ। তাদের মূল দাবি ছিল, বালুচিস্তান থেকে তাদের যে নেতা ও সদস্যদের গ্রেফতার করে পাকিস্তানি সেনা বিভিন্ন পাক জেলে বন্দি করে রেখেছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। এই বন্দিমুক্তির পরিবর্তে পণবন্দিদেরও তারা মুক্তি দেবে। কিন্তু পাক সরকার এই বিষয়ে কোনওরকম আগ্রহ ও তৎপরতা দেখায়নি বলে অভিযোগ। বিএলএ-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চিরাচরিত একগুঁয়েমি এবং সেনার আগ্রাসন দেখিয়ে বালুচ বিদ্রোহীদের দমন করতে চেয়েছে পাকিস্তান সরকার। সমঝোতার সম্ভাবনা তারা এড়িয়ে গিয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকার করেছে। পাক সরকার ও সেনার এই অনমনীয় মনোভাবের কারণেই ২১৪ জন পণবন্দিকে হত্যা করা হল। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের পথে বালুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস অপহরণ করে বিদ্রোহীরা। ট্রেনটিতে মোট ৪৪০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বুধবার রাতে পাক সেনা জানায়, তাদের অভিযান শেষ। সব বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের হাতে ২৮ জন নিরাপত্তা আধিকারিকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছিল পাক সেনা। যারা ট্রেনে সাধারণ যাত্রী হিসাবে ছিলেন। বলা হয়, তাঁদেরই বেছে বেছে পণবন্দি করা হয়েছিল। কিন্তু পাক সেনার ওই দাবি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উড়িয়ে দেয় বিএলএ। তাদের বক্তব্য ছিল, জাফর এক্সপ্রেস অভিযানে পাক সেনা চূড়ান্ত ব্যর্থ। তাই তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। অন্যদিকে জাফর এক্সপ্রেস অপহরণের নেপথ্যে আফগানিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু সেখানকার শাসক তালিবান সরকার জানিয়ে দেয়, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের যোগ নেই। এসব পাক সরকারের পরিকল্পিত মিথ্যাচার।