সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দুটি বই। একটি উপন্যাস, অন্যটি ছোটগল্পের। আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী
থ্রিলারের তুমুল চাহিদা। শুধু আজ নয়, বরাবরই। রহস্যের প্রতি রয়েছে পাঠক-পাঠিকার তীব্র আকর্ষণ। চাহিদা পূরণে তৎপর প্রকাশক, সম্পাদকরা। থ্রিলার লিখে খ্যাতি পেয়েছেন এই সময়ের কয়েকজন লেখক। অন্য জঁনারের লেখকরাও এখন থ্রিলার ট্রাই করছেন। সাফল্য পাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে কয়েকটি থ্রিলার উপন্যাস রীতিমতো সাড়া জাগিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘দুঃসাহসের ইজারা’। প্রকাশিত হয়েছে বছরের শুরুতে। দীপ প্রকাশন থেকে। লিখেছেন গৌতম ভট্টাচার্য এবং দেবারতি মুখোপাধ্যায়। প্রথমজনের মূল পরিচিতি সাংবাদিক হিসেবে। যদিও লেখক হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় সত্তা লালিত হচ্ছে তিরিশ বছরের বেশি। এটা তাঁর তৃতীয় উপন্যাস এবং প্রথম থ্রিলার। দ্বিতীয়জন মূলত ঔপন্যাসিক। পাশাপাশি লেখেন ছোটগল্প। এর আগে সম্ভবত বাংলায় যৌথ উপন্যাস লেখা হয়নি। দু’জনের মিলিত প্রয়াস হার্ডকোর থ্রিলারটি। দীর্ঘ উপন্যাস। ভাগ করা হয়েছে কয়েকটি পর্বে। প্রতিটি পর্বে রয়েছে আলাদা আলাদা শিরোনাম। শিরোনামগুলো বেশ আকর্ষণীয়। কৌতূহল জাগায়। প্রথম পর্ব ‘জলে ফেলে দিল কারা’র শুরুতে আঁকা হয়েছে ঢাকুরিয়া লেকের ভোরবেলার দৃশ্য। লেকের জলে উদ্ধার হয় এক ব্যক্তির মৃতদেহ। নজরে আসে প্রাতঃভ্রমণকারীদের। ছুটে আসে পুলিশ। প্রশ্ন জাগে, খুন না আত্মহত্যা? উত্তর খুঁজতে ধীরে ধীরে এগোতে হয়। পেরোতে হয় পাতার পর পাতা। পর্বের পর পর্ব। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছে এই থ্রিলার উপন্যাসটি। রুদ্ধশ্বাস এবং তদন্তভিত্তিক। রয়েছে টানটান উত্তেজনা। রোমাঞ্চ। আর্থসামাজিক অসহায়তা মিশ্রিত ভয়। উন্মোচিত হয়েছে বিস্ময়, প্রতারণা। আলো আছে, অন্ধকার আছে। শহর কলকাতার পাশাপাশি উপন্যাস জুড়ে রয়েছে বোলপুর শান্তিনিকেতন। চেনা রাঙামাটির দেশকে এখানে যেন কিছুটা অচেনা লাগে। অচেনা লাগে নিপাট ভদ্রলোক মনে হওয়া কোনও কোনও মানুষকেও। যারা নিরুদ্দেশের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত, নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সৎ ব্যাঙ্ক ম্যানেজারদের লোপাট করে দেয়। যাদের জন্য চিরতরে হারিয়ে যেতে হয় ঋষভ-সম্রাটদের মতো মানুষদের। যদিও উপন্যাসের পরঞ্জয়, অপালা, কাশীনাথ, জয়িতা চরিত্রগুলো চেনা মনে হয়। যেন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া কেউ। ছাপোষা, মধ্যবিত্ত। তবে লড়াকু। পড়ে থাকেন মাটি কামড়ে। এইটুকুই বলার। বাকিটা তোলা থাক আগ্রহী পাঠকদের জন্য। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়—উপন্যাসটি টানটান। অসাধারণ! পড়ে ফেলা যায় এক দমে। প্রচ্ছদশিল্পী স্বর্ণাভ বেরা। ২৭২ পাতার বই। দাম ৩২৫ টাকা।
কলকাতা বইমেলায় আনন্দ প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে ‘ব্রহ্মপুত্র হতে… দিগন্তে’। লিখেছেন শ্যামশ্রী দাশগুপ্ত। পেশায় শিক্ষিকা। সাহিত্যচর্চার শুরু আটের দশকে। বিভিন্ন সময়ে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু পত্র-পত্রিকায়। দুই রাজ্যের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। জন্ম এবং কর্মসূত্রে। আলোচ্য বইটি একটি ছোটগল্পের সংকলন। মনে হয় গল্পগুলো যেন একটি সুতোয় বাঁধা। লেখা হয়েছে ব্যক্তিগত জীবনের আলোকালো কথা। প্রকাশ ঘটেছে গভীর অনুভবের, আধ্যাত্মিক চেতনার, টুকরো টুকরো ঘটনার, আটপৌরে দিনলিপির। কখনও কখনও যেন স্বগতোক্তি মনে হয়। অক্ষরে অক্ষরে মিশে রয়েছে অদ্ভুত আন্তরিকতা। প্রশ্ন রেখেছেন সমাজ এবং সংসারের কাছে। আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ঈশ্বরকে। একটি লেখায় গলা উঁচিয়ে বলেছেন, ‘‘যদি আপনি সত্যি ঈশ্বর হন, যেখানেই আছেন, যে ভাবেই আছেন, দাঁড়ান এখানে।’’ কৃষ্ণ সম্পর্কে তাঁর অভিমত, ‘‘শুধু আমাদের নয়, গোটা বিশ্বের সবটাই দেখছেন, শুনছেন, নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রয়োজনে আমাদের নিত্য কান ধরে মুরগা বানাচ্ছেন, অনন্ত প্রেমে।’’ গল্পের ছলে বুনে দিয়েছেন নিজের শৈশবের কথা, পরিবারের কথা। সহজ সরল ভাষায় লেখা। কোথাও রাখেননি কুয়াশার আস্তরণ। কবিতার প্রতি রয়েছে প্রেম। এসেছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকুমার থেকে জয় গোস্বামী, শ্রীজাত প্রসঙ্গ। নানা রঙের গল্পগুলো মন ছুঁয়ে যায়, ভাবায়। চরিত্রগুলো জীবন্ত। প্রচ্ছদশিল্পী সমীর মজুমদার। ৩৩৬ পাতার বই। দাম ৫০০ টাকা।
দুটি নতুন বই
থ্রিলারের তুমুল চাহিদা। শুধু আজ নয়, বরাবরই। রহস্যের প্রতি রয়েছে পাঠক-পাঠিকার তীব্র আকর্ষণ। চাহিদা পূরণে তৎপর প্রকাশক, সম্পাদকরা।
