পাক মদতপুষ্ট ‘ক্যু’ থেকে ওয়াকারকে বাঁচাল ভারত!

গোয়েন্দা রিপোর্ট, ভারতের তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ‘ক্যু’ বা সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেল।

Must read

প্রতিবেদন: গোয়েন্দা রিপোর্ট, ভারতের তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ‘ক্যু’ বা সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেল। পাক মদতপুষ্ট বাংলাদেশি কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির মদতে এই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি হয়েছিল হাসিনা জমানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার উজজামানের বিরুদ্ধে। মূলত বাংলাদেশের জামাত ও পাকিস্তানি সেনার ঘনিষ্ঠ এক লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মাধ্যমে ওয়াকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দি করার চক্রান্ত হয়। গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেই খবর আসে ভারতের কাছে। ভারতের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য ক্যু সম্পর্কে সতর্ক করা হয় বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে। পাশাপাশি আমেরিকা ও আরও কয়েকটি দেশের মাধ্যমে চাপ তৈরি করা হয় ইউনুস সরকারের উপরেও। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান নিজেও বাহিনীতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সদস্যদের সতর্ক করে তৈরি থাকতে বলেন। গোটা পরিকল্পনা আগেভাগে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর অভ্যুত্থানের কুশীলবদের পিছিয়ে আসা ছাড়া পথ ছিল না। তবে এর পরেও বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করে একাধিক সূত্র। কট্টরপন্থীদের এই পরিকল্পনা নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে ইউনুস সরকার। সাম্প্রতিককালে ইউনুস সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের সেনা। গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন করার সওয়াল শোনা গিয়েছিল ওয়াকার উজজামানের মুখে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ও জামাতের চক্রান্তে বাংলাদেশি সেনার কট্টরপন্থী অংশ বর্তমান সেনাপ্রধানকে সরাতে তৎপর বলে খবর।

আরও পড়ুন-ট্রাম্পের নীতি বাস্তবমুখী, মনে করেন বিদেশমন্ত্রী

ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের চাপের কাছে মাথা নত করেননি জেনারেল ওয়াকার উজজামান। তিনি একাধিকবার মৌলবাদীদের সতর্ক করেছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেনাকে যেন আইনিভাবে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করা না হয়। একইসঙ্গে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সমঝোতার ফাইলেও দ্রুত সই করতে চাননি। উল্টে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রক্ষার বার্তা দিয়েছেন বারবার। এতেই পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ওয়াকারের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে সরানোর চক্রান্তে লিপ্ত হয়। সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্যু-এর দায়িত্ব দেওয়া হয় জামাত ঘনিষ্ঠ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ ফইজুর রহমানকে। কিন্তু সেই খবর আগেই পেয়ে যান ভারতীয় গোয়েন্দারা। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে সতর্ক করেন। সেইসঙ্গে এ নিয়ে অবহিত করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশকেও। আন্তর্জাতিক মহল ইউনুসের উপর সম্ভাব্য ক্যু প্রতিরোধ করার জন্য বার্তা পাঠানো হয়। ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় মার্কিন সেনার সঙ্গে ওয়াকারের কথা হয়। সূত্রের খবর, ভারতের পরামর্শেই ১৩ মার্চ জেনারেল ওয়াকার উজজামান শান্তিসেনা বিষয়ক একটি কর্মসূচি নিয়ে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি মার্কিন শীর্ষ অফিসারদের কথা হয়। মায়ানমারের পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে বেরিয়ে না যায়, সে সমস্ত তিনি দেখবেন বলে মার্কিন সেনাকে আশ্বাস দেন ওয়াকার।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রের ব্যাখ্যা চাইল সুপ্রিম কোর্ট

অন্যদিকে এরমধ্যে বাংলাদেশের পাকপন্থী সেনা অফিসাররাও বুঝে যান ক্যু সফল হবে না। তখন ঠিক হয়, ৬ মার্চ ঢাকায় ফিরলেই ওয়াকার উজজামানকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনার কথাও ভারতীয় গোয়েন্দারা আগাম জেনে যান। তাঁদের পরামর্শে ঢাকার বদলে তেজগাঁও এয়ারবেসে নামেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। সেখানে তাঁকে ঘিরে রাখেন তাঁর অনুগত সেনা অফিসাররা। ওই অফিসারদের নির্দেশে যে কোনও পদক্ষেপের জন্য সেইসময় সেনাকর্মীদের তৈরি রাখা হয়। এরপর বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন ওয়াকার। সব মিলিয়ে ভারতের তৎপরতায় এ-যাত্রা সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের চক্রান্ত ভেস্তে যায়। তবে এই ঘটনা আবার দেখিয়ে দিচ্ছে হাসিনা-পরবর্তী ইউনুস জমানায় বাংলাদেশের সার্বিক
অস্থিরতার ছবি।

Latest article