বলিউডের ভাইজানকে বড়পর্দায় দেখার জন্য সবসময়ই ভক্তেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। আর ইদের সময় সেই অপেক্ষা যেন আরও বেড়ে যায়। কারণ ইদে সলমন খানের ছবি রিলিজ হবার ট্রেন্ড বহুদিনের। যা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে৷ তারপর থেকে বক্স অফিসে সেই ট্রেন্ডই সেট হয়ে গেছে। ইদ মানেই ভাইজানের ছবি৷ সেই ২০০৯ সালে ‘ওয়ান্টেড’ থেকে ২০২৩-এ ‘কিসি কা ভাই কিসি কা জান’, দীর্ঘ সময় ধরে ইদ বক্স অফিসে একচ্ছত্র ছড়ি ঘুরিয়েছেন সলমন। ১৬ বছরে ইদ উপলক্ষে মোট ১১টা ছবি মুক্তি পেয়েছে তাঁর। মাঝেমধ্যে ছেদ পড়লেও এ বছর ব্যতিক্রম হল না। আগামী ৩০ মার্চ পর্দায় আসছে তাঁর অ্যাকশন প্যাক ছবি ‘সিকন্দর’ (Sikandar)। ছবির পরিচালক আমির খানের ‘ঘজনী’খ্যাত এ আর মুরুগাদোস। নির্মাতা সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা।
ছবিটির ঘোষণার দিন থেকেই প্রচণ্ড হাইপড। ‘সিকন্দর’কে (Sikandar) এ-বছরের সবচেয়ে বড় ছবি হিসেবেই দেখছেন দর্শক, সমালোচক সকলে। যার বাজেট প্রায় ২০০ কোটি। ট্রেলারেই খেল দেখিয়েছেন ভাইজান। তাঁর চিরাচরিত ভঙ্গিতে, নাচে গানে, মারামারিতে, সংলাপে, প্রেমে, আবেগে এবং প্রতিশোধে আবার এক নয়া অবতারে সলমন। তবে এটা কোনও তামিল ছবির রিমেক নয়। ছবির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সঞ্জয় রাজকোট নামের এক ব্যক্তি। ঠাকুমা সঞ্জয়কে শৈশবে ডাকতেন সিকন্দর বলে। মানুষ তাকে অসম্ভব ভালবেসে নাম দেয় রাজা সাহেব। দাদুর দেওয়া নামটি ছিল সঞ্জয়। এহেন সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে পাঁচ বছরে প্রায় ৪৯টা মামলা দায়ের হয়েছে। অথচ সে দরিদ্র, দুর্বলের মসীহা। মানুষ তাকে ভালবাসে। কে এই সঞ্জয় ওরফে সিকন্দর? কেন সে এত বড় অপরাধী হয়ে উঠল। কী কারণে এতগুলো কেস তার ঘাড়ে। মৃতা স্ত্রী-ই সঞ্জয়ের জীবনের চলার পথের অনুপ্রেরণা। কী হয়েছিল তাঁর স্ত্রীর? কেনই বা এই প্রতিশোধের খেলা? যদিও ছবি যত এগতে থাকবে ততই স্পষ্ট হবে যে সঞ্জয় কোনও সাধারণ অপরাধী নয় তার দ্বারা সংঘটিত প্রতিটা অপরাধের পিছনে বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। গোটা ছবিটাকে একটা ইমোশনাল জার্নি বলা যেতে পারে। দুর্দান্ত মারকাটারি অ্যাকশন, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন, ন্যায়বিচার— সবমিলিয়ে ভরপুর এন্টারটেনমেন্ট রয়েছে ‘সিকন্দর’-এ। ছবির ট্রেলার দেখেই দর্শক অনেকটা ধরে ফেলতে পারবে স্টোরি লাইন। ছবিতে রশ্মিকার চরিত্রটির ট্র্যাজিক পরিণতি দেখানো হয়েছে। রশ্মিকা এখানে সলমন খানের স্ত্রীর ভূমিকায় রয়েছেন। পাশাপাশি কাজল আগরওয়ালের চরিত্রটিতে একটা চমক রয়েছে। ছবির পরতে পরতে দর্শকদের জন্য সারপ্রাইজ রেখেছেন পরিচালক।
আরও পড়ুন-এবার নাম বদল ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর
অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘হলিডে’ ছবির শুটিং করছিলেন এ আর মুরুগাদোস। তখনই সলমনের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। প্রথম সাক্ষাতেই ভাইজানের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ইতিবাচক উত্তর দিয়েছিলেন সলমন খান। এর কয়েক মাস পরেই ‘সিকন্দর’-এর চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছিলেন পরিচালক। চিত্রনাট্য পছন্দ হয় তাঁর। ‘সিকন্দর’ ছবির মাধ্যমে সলমন বহুদিন বাদে বড়পর্দায় ফিরছেন। তাঁর সর্বশেষ ছবি ২০২৩-এর ‘টাইগার ৩’। সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা এবং সলমন খানের এটি দ্বিতীয় কোলাবরেশন। এর আগে সাজিদের পরিচালনায় সলমন করেছিলেন ‘কিক’ ছবিটি। যা মুক্তি পেয়েছিল ২০১৪ সালে। যেটা ছিল সাজিদের ডায়রেক্টরিয়াল ডেবিউ ছবি। সলমন খান এবং রশ্মিকা মন্দানা ছাড়াও এই ‘সিকন্দর’-এ রয়েছেন শরমন যোশী, প্রতীক বব্বর, সত্যরাজ এবং কাজল আগরওয়াল। চিত্রনাট্যকার পরিচালক স্বয়ং, সংলাপ লিখেছেন রজত, অরোরা, হুসেন দালাল, আব্বাস দালাল। ‘সিকন্দর’ ছবির সংলাপ বলিষ্ঠ। সলমনের মুখে বেশ কিছু সংলাপ যেমন ‘ইনসাফ নেহি হিসাব করনে আয়া হুঁ’, বা ‘কায়েদে মে রহো ফায়েদে মে রহোগে’ ইতিমধ্যেই সুপারহিট হয়েছে। দুর্দান্ত সিনেমাট্রোগ্রাফি করেছেন তিরু। সম্পাদনায় বিবেক হর্শন। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রীতম। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছেন সন্তোষ নারায়ণ। ছবির একটি গান ‘জোহরা জাবিন’-এ ফারহা খানের কোরিওগ্রাফিতে করা সলমন, রশ্মিকার ডান্স আইটেম সঙটি সুপারহিট হয়েছে ইতিমধ্যেই। এর আগে সলমনের ‘সুলতান’ ছবির সুপার হিট ডান্স আইটেম সং ‘বেবি কো বেস পসন্দ হয়’-এর কোরিওগ্রাফিও করেছিলেন ফারহা খান। এতদিন পরে সলমনের জন্য আবার কোরিওগ্রাফি করে উচ্ছ্বসিত ফারহা খান। গানের সুরকার প্রীতম এবং গানটি গেয়েছেন নাকাশ আজিজ ও দেভ নেগি। ডান্স আইটেম সং-এ সলমন আর রশ্মিকার রসায়ন দর্শকের দারুণ পছন্দ হয়েছে।
গত ২৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছিল সিকন্দরের অগ্রিম বুকিং। শুরুটা খুব ধীরগতিতে হলেও প্রথমদিন হিসেবে খারাপ নয়। ওইদিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ৪০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে গেছিল। হিন্দি টু-ডির ভার্সনের মোট টিকিট বিক্রি হয়েছিল ১.১৩ কোটি টাকার। ব্লক সিটের ক্ষেত্রে অগ্রীম টিকিট বুকিং হয়েছে মোট ৫.০১ কোটি টাকা। রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে প্রথমদিন ‘সিকন্দর’-এর (Sikandar) সবচেয়ে বেশি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে রাজধানী দিল্লীতে। ২১.৮৪ লাখ টাকা। এরপরেই রয়েছে রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্র। বুকিং ওপেনিং-এর সময়েই সারা ভারতে ৫০ কোটি আয় করে ফেলেছে এই ছবি। গোটা ভারতে মোট ৭৯৫২টি স্ক্রিনে দেখানো হবে ‘সিকন্দর’। অভিনেতাকে আরও একবার লার্জার দ্যান লাইফ অবতারে দেখে দারুণ খুশি ভক্তরা।