চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: ৪৩ দিন আগে ৯৩ মিনিটে গোল করে যুবভারতীতে হাজার ওয়াটের আলো জ্বালিয়েছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতস। সেদিন দিমির গোলেই প্রথম দল হিসেবে টানা দু’বার লিগ-শিল্ড জয় নিশ্চিত করেছিল মোহনবাগান। সোমবার আবারও যুবভারতীতে অকাল দীপাবলি। ম্যাচের সংযুক্ত সময়ের ৯৪ মিনিটে বুলডোজার শটে গোল করে মোহনবাগানকে আইএসএল কাপের ফাইনালে তুললেন অপুইয়া। টানা দু’বার ফাইনালে দল। ঘরের মাঠে সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে ২-০ গোলে জয়। দুই পর্ব মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে জিতে ফাইনালে গেল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। প্রথম দল হিসেবে আইএসএলে দ্বিমুকুট জয়ের হাতছানি মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সামনে। তাও আবার গোটা আইএসএলে অপরাজিত থেকে। ফাইনালে উঠে আলবার্তো, কামিন্সরা বলে গেলেন, এবার আইএসএলে ডাবল করতে চাই।
আরও পড়ুন-স্কুলে যাবই, আস্থা মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই
গতবার শিল্ড জিতেও এই যুবভারতীতেই কাপ ফাইনালে মুম্বইয়ের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল শুভাশিসদের। শনিবার বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ার শপথ এদিনের যুবভারতী থেকেই নিল জোসে মোলিনার দল। যুবভারতীর শব্দব্রহ্মই ছিল প্রতিশোধের ম্যাচে মোহনবাগানের প্রেরণা। জামশেদপুরে হারের থেকেও সমর্থকদের আক্রান্তের ঘটনা আরও তাতিয়ে দিয়েছিল কামিন্স, ম্যাকলারেনদের। জামশেদপুরে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ১-২ হেরে পিছিয়ে থাকায় ফাইনালের ছাড়পত্র পেতে দু’গোলের ব্যবধানে জিততেই হত মোলিনার দলকে। নির্ধারিত সময়ে এক করলে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে চলে যেত। তারপর টাইব্রেকার। জামশেদপুরের কোচ খালিদ জামিল ভারতীয় কোচেদের প্রতিনিধি হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দলকে আইএসএল কাপের সেমিফাইনালে তুলে। কিন্তু এদিন খালিদের বিরক্তিকর রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি মোহনবাগানের অপেক্ষা বাড়াল। স্টিফেন এজে, আশুতোষ মেহতা না থাকায় খালিদের হাতে বিকল্পও ছিল না। কার্যত দশজন মিলে ডিফেন্স করে এই মোহনবাগানকে আটকানো সম্ভব ছিল না। তা হয়ওনি।
ঝড়ের গতিতে আগ্রাসী ফুটবলকেই অস্ত্র করেছিলেন মোলিনা। পুরো ফিট না থাকা মনবীর সিংকে বেঞ্চে রেখে লিস্টন কোলাসোকে ডানদিকে এনে এবং আশিক কুরুনিয়নকে লেফট উইংয়ে রেখে জামশেদপুরের রক্ষণব্যূহ ভাঙতে চেয়েছিলেন মোলিনা। আপফ্রন্টে কামিন্সের পাশে শুরু করেন ম্যাকলারেন। পিছন থেকে প্রেসিং করেন অপুইয়া, অনিরুদ্ধ থাপা। বিপক্ষের জমাট রক্ষণ ভেঙেই বেশ কয়েকবার গোলের লকগেট খুলে ফেলেছিল মোহনবাগান। কামিন্স গোটা দুয়েক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। একবার কামিন্সের শট গোললাইন থেকে বাঁচান সৌরভ দাস। থাপার শট বাঁচান জামশেদপুর গোলকিপার আলবিনো গোমস। প্রথমার্ধে বারদুয়েক মোহনবাগান রক্ষণকে সমস্যায় ফেলেছিলেন জর্ডন মারে। কামিন্সের কর্নার বক্সের মধ্যে হাতে লাগে প্রণয় হালদারের। পেনাল্টি নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জাভিরা আক্রমণ শানানোর চেষ্টা করলেও দ্রুত ডেডলক ভাঙে মোহনবাগান। ৫১ মিনিটে কামিন্সের কর্নার হাতে লাগে প্রণয় হালদারের। পেনাল্টি থেকে গোল করতে কোনও ভুল করেননি কামিন্স। ফুল হাউস যুবভারতীতে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া মোহন ফুটবলারদের আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ে জামশেদপুর রক্ষণে। কামিন্সের জায়গায় দিমিত্রি, আশিককে তুলে মনবীরকে নামিয়ে দেন মোলিনা। ম্যাচ যখন অতিরিক্ত সময়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে, তখন শেষবেলায় হিরো অপুইয়া। এবার সেই প্রণয়ের মিস পাস। বল ধরে থাপার পাস অপুইয়াকে। বক্সের বাইরে থেকে মিজো মিডফিল্ডারের গোলার মতো শট আছড়ে পড়ল জামশেদপুরের জালে। আবির, রংমশাল, চিৎকার, স্লোগানে তখন যেন মায়াবী ‘মোহনভারতী’। অধরা আইএসএল ডাবল করার সুযোগ শনিবার সুনীল ছেত্রীদের বিরুদ্ধে এই যুবভারতীতেই।