প্রতিবেদন : বিএসএফ (BSF) যেন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলায় নাক না গলায়। কোনওভাবেই যেন তারা বাড়াবাড়ি করতে না পারে। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে স্পষ্ট নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
নদিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে পড়ছে বিএসএফের (BSF) এক্তিয়ার। এর আগেও বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দিল্লি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতেও তাঁকে জানিয়ে এসেছেন বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা। এবার জেলা সফরে গিয়ে সীমান্তবর্তী সবক’টি জেলার পুলিশ ও প্রশাসনকেও বিএসএফ নিয়ে রাজ্য সরকারের মনোভাব জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নদিয়ার করিমপুর। কৃষ্ণনগর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে। মুর্শিদাবাদের কাছে। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল রয়েছে বিএসএফের অধীনে। কিন্তু কোনওমতেই যেন তারা নিজেদের এক্তিয়ারের বাইরে যেতে না পারে সে জন্য পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র আর আবু তাহেরকে এই বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বিএসএফ তাদের কাজ করবে, আর পুলিশ তাদের কাজ করবে।
শিল্পায়নই যে এই মুহূর্তে তাঁর পাখির চোখ কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক সভা থেকে আরও একবার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সকলকে। একই সঙ্গে নদিয়া জেলার পর্যটনশিল্পকে দ্রুত আরও উন্নত করার নির্দেশ এবং গাইডলাইন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি দ্রুত নবদ্বীপ-মায়াপুর সংযুক্তিকরণেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রশাসনিক বৈঠকে মায়াপুর ইসকন মন্দিরকে দেওয়া ৭০০ একর জমিতে মন্দিরের কাজের আগ্রগতি নিয়ে খোঁজ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নদিয়ার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টি জানান, ওই জমিতে ইতিমধ্যে একটি মিউজিয়াম তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত এই কাজ শেষের নির্দেশ দেন। নবদ্বীপ-মায়াপুরকে সংযুক্তিকরণ করে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যে নবদ্বীপকে হেরিটেজ শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই শহরকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্যে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত কাজ করতে হবে। এদিন নদিয়ার বিধানসভা কেন্দ্রগুলির প্রত্যেকটিতে একটি করে শিল্প পার্ক তৈরি করার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, এক্ষেত্রে আগের বিধি বদলে ৫ একর জমিতে শিল্প পার্ক তৈরি করার ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন-আজ শেষ বিদায়, মিলল ব্ল্যাকবক্স, রহস্য কাটছে না
প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয়গুলির ওপর জোর দিয়েছেন :
১। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ভাতা ২ হাজার থেকে বেড়ে ৪ হাজার।
২। ১ জানুয়ারি স্টুডেন্ট ডে ঘোষণা। ১-৭ জানুয়ারি পালন করা হবে ছাত্র সপ্তাহ। গাইডলাইন দেবে শিক্ষা বিভাগ।
৩। ১০ জানুয়ারি থেকে ফের দুয়ারে সরকার। গঙ্গাসাগরের জন্য মাঝে বন্ধ রেখে দ্বিতীয় ধাপে হবে ২০-৩০ জানুয়ারি।
৪। মৎস্যজীবী, শিল্পীদের কার্ড দুয়ারে সরকারে যোগ।
৫। করিমপুর বর্ডারে বিশেষ নজর। নাকা চেকিং বাড়ানোর নির্দেশ।
৬। নবদ্বীপে নবনির্মিত সংস্কৃত চর্চা এবং গবেষণা কেন্দ্র ১ জানুয়ারি থেকে চালু হচ্ছে। নাম দেন মহাপ্রভু চৈতন্যদেব।
৭। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস রানাঘাটে হবে।
৮। শান্তিপুর হাসপাতাল, গঙ্গাভাঙন নির্দিষ্ট বিভাগকে দেখার নির্দেশ।
৯। তাঁত, মাটি, কাঁসা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করে তৈরি হবে হাব।
১০। পাট থেকে কোষা সিল্কের ভাবনা।
১১। ৫ একর জমি জোগাড় করে কী শিল্প করা যায় তা নিয়ে সিনার্জিতে আলোচনার নির্দেশ নদিয়া চেম্বার অফ কমার্সকে।
১২। স্কুল ড্রেসের কাপড় তৈরি করবেন নদিয়ার তাঁতিরা। কিনবে রাজ্য।
১৩। সাংবাদিকদের প্রশাসনের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য প্রত্যেক জেলায় একজন করে মুখপাত্র নিয়োগের নির্দেশ।
১৪। নীল, লালবাতির অপব্যবহার রুখতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ।
১৫। শান্তিপুর থেকে নবদ্বীপ পর্যন্ত সার্কিট ট্যুরিজম।
১৬। জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।