প্রতিবেদন : এবার শহর দেখবে নাটকের মঞ্চে স্বপ্নের উড়ান। স্বপ্নই বটে। একসঙ্গে একগুচ্ছ ভাল নাটক দেখার সুযোগ সচরাচর চট করে আসে না। এবার আসছে। নৈহাটি ব্রাত্যজন তার ব্যবস্থা করছে। গত এক দশকে এই নাটকের দল নানা ঝলক দেখিয়েছে। দশ বছর আগে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘একুশ গ্রাম’, ‘দাদার কীর্তি’ একটা পর একটা মঞ্চ-সফল নাটক করে গিয়েছে নৈহাটি ব্রাত্যজন। যার প্রাণপুরুষ সাংসদ পার্থ ভৌমিক। রাজনীতি করেও যে সিরিয়াসভাবে নাটক করা যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। অ্যামেচার থিয়েটার থেকে আর-এক নাট্যকার রাজনীতিবিদ এবং মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রেরণায় তৈরি হয় নতুন নাটকের দল। যার দশ বছর পূর্তিতে একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে হবে নাট্য উৎসব। ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১১টি নাটক মঞ্চস্থ করা হবে। দেবশঙ্কর হালদার, দেবািশস রায় ও পার্থ ভৌমিকের নাটক। উদ্বোধন করবেন নাট্যকার-অভিনেতা-মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। থাকবেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনও। রাজ্য সঙ্গীত দিয়ে এই নাট্য উৎসবের সূচনা হবে। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে গিয়েছে নৈহাটি ব্রাত্যজন। বুধবার কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিল নৈহাটি ব্রাত্যজন। পার্থ ভৌমিক ছাড়াও ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার, পরিচালক দেবািশস রায়, বিধায়ক-পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। তবে আলাদা করে বলতে হয় নৈহাটি ব্রাত্যজনের যুগ্ম সম্পাদক অভিনেতা অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী দেবযানী সিংহর কথা। নতুন প্রজন্মের এই দুই নাট্যব্যক্তিত্ব, নিজেদের গুণেই মঞ্চে নজর কেড়ে নেন। এই যে নাট্য উৎসব হতে চলেছে তার তার সবদিক এই দুজনে মিলে কার্যত নিজেদের ঘাড়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। রাজ চক্রবর্তী বললেন, আগামী প্রলয় ( দ্বিতীয় সিরিজ) প্রজেক্টে অভিনয় করবেন দেবযানী এবং ভাস্কর। তার কারণ নৈহাটি ব্রাত্যজনের উদ্দেশ্যই হল নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের তৈরি করা। এগিয়ে দেওয়া। দেবশঙ্কর হালদার তাঁর নাটক জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে বললেন, নাটকের প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা থাকা উচিত। কারণ তিনি মনে করেন বেশিরভাগ বড় মিডিয়া নাটকের দিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। অথচ এই গুরুত্ব যদি দেওয়া হয় তবে অনেক নতুন নতুন প্রযোজনা প্রচার পায় এবং ছেলেমেয়েরাও আরও উৎসাহিত হবে এবং এগিয়ে আসতে পারবে। এমনিতেই নাটক বিষয়টি একটু পিছিয়ে থেকে শুরু করে। নাটক মঞ্চস্থ করতে গেলে যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং যে পরিমাণ সময় দিতে হয় তাতে প্রাণ এবং ভালবাসা না থাকলে সেটা সম্ভব নয়। আসলে সব আকর্ষণই হচ্ছে ওই মঞ্চের সামনে যে দর্শক বসে আছেন তাঁদের দেখে। এই কথার আগেই রাজ চক্রবর্তী বলেছেন যে দেবশঙ্কর হালদারকে ছবি কিংবা ওয়েব সিরিজের জন্য অফার করা হলে তিনি বলেন ভেবে দেখছি অথচ নাটকের জন্য কেউ একবার বললেই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান— এতটাই ভালবাসা তাঁর নাটকের প্রতি। পার্থ ভৌমিক কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দিলেন মন্ত্রী-নাট্যকার ব্রাত্য বসুকে। তাঁর কথায়, ব্রাত্য না বললে তিনি এই জায়গায় অভিনেতা হিসেবে আসতে পারতেন না এবং নৈহাটি ব্রাত্যজনও হত না। সেই সঙ্গে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বললেন, আমি অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারের সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করেছি ফেরারি ফৌজ নাটকে। আমার সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। এরপর আমি আর একটি নাটকেও অভিনয় না করলেও আমার আর আক্ষেপ থাকবে না। আমার স্বপ্ন ছিল দেবশঙ্কর হালদারের সঙ্গে একমঞ্চে অভিনয় করা।
আরও পড়ুন- জগন্নাথধাম ঘিরে জাগছে দিঘা, নবান্নে প্রস্তুতি-সভায় মুখ্যমন্ত্রী
অরিত্র জানালেন, আগামী ২৫ তারিখ উদ্বোধনের দিন সাড়ে ছটায় ‘দাদার কীর্তি’ নাটক মঞ্চস্থ হবে। এই প্রযোজনা এবার ১০০তম অভিনয় হতে চলেছে। যা নিশ্চিতভাবে কৃতিত্বের দাবি রাখে। এই নাট্য উৎসবে ঐদিন উপস্থিত থাকবেন ১১ জন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব। যাদের ব্রাত্যজন সম্মান প্রদান করা হবে। এছাড়া থাকবেন মন্ত্রী সুজিত বসু, রথীন ঘোষ। এরই ফাঁকে ২৮ তারিখ হবে নাটকের গান। দেবযানী বললেন, দলের ছেলে-মেয়েরাই পারফর্ম করবে। রাজনীতির বাইরে ও নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বিধায়ক সনৎ দে, সুবোধ অধিকারী, সোমনাথ শ্যামরা। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন পার্থ ভৌমিক এবং রাজ চক্রবর্তী দুজনেই বললেন যে, লোকে ব্যারাকপুর বলতে বোঝে খুন-জখম সন্ত্রাস। আসলে ব্যারাকপুরের মানুষ তা চান না। তাঁরা চান কৃষ্টি-সংস্কৃতি-নাটক-গান। আমরা সকলে মিলে এটাই উপহার দেব ব্যারাকপুরবাসীকে। কারণ মানুষের কাজ করতে গেলে তার মধ্যে কৃষ্টি-সংস্কৃতি থাকাটা দরকার ওটা ছাড়া মানুষের কাজ করা যায় না।