‘কালিদাস’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কন্ট্রোল করুন, শাহকে তীব্র কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

পূর্ব-পরিকল্পিত অশান্তি, এজেন্সি দিয়ে লোক ঢোকাচ্ছে বিজেপি, অশান্তিতে মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ

Must read

প্রতিবেদন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কন্ট্রোল করুন। সব এজেন্সি ওঁর হাতে দিয়ে দিয়েছেন। আর যা খুশি তাই করছে। বুধবার নেতাজি ইনডোরের সভা থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, আগে কখনও নাম নিইনি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি কালিদাসের মতো আচরণ করেন, যে গাছে বসে আছেন, সেই গাছের ডাল যদি ভাঙেন, তাহলে তো বলতে হবেই! কিছু করার এত তাড়াহুড়ো কেন আপনার? আপনি তো এখুনি প্রধানমন্ত্রী হবেন না! মোদিজি চলে যাওয়ার পর কী করবেন? আপনাকে তো হামাগুড়ি দিতে হবে? সবচেয়ে দেশের ক্ষতি করেছেন আপনি। মোদিজিকে অনুরোধ করব, দয়া করে লোকটাকে কন্ট্রোল করুন। সমস্ত এজেন্সি ওঁর হাতে দিয়ে দিয়েছেন। আর উনি সব পরিকল্পনা করছেন। কিছু অশান্তি হয়েছে, প্ররোচনামূলক কথাও হয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদ নয় ওটা মালদা আসন। কংগ্রেসের জেতা আসন ওটা। এবার কংগ্রেসকেও তীব্র কটাক্ষে বলেন, জেতবার সময় জিতবে আর দাঙ্গা হলে রাস্তায় বেরোবে না, নিয়ন্ত্রণ করবে না। এটা আমি আশা করিনি। তৃণমূল করলে দলের বিধায়কদের বাড়িতে আক্রমণ হত না, দলের কার্যালয় ভাঙা হত না! আমি উসকানিমূলক বক্তৃতা করতে আসিনি। আমি শান্তি চাই। ইমাম-মোয়াজ্জিন ও বুদ্ধিজীবীদের সভায় দাঁড়িয়ে, মুর্শিদাবাদের ঘটনায় মৃত তিনজনের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মুখ্যসচিবকে বলেন, অশান্তিতে যাঁদের বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে সেই মানুষগুলির বাড়ি করে দেবে রাজ্য সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানও ঠিক করে দেবে রাজ্য সরকার।

মুখ্যমন্ত্রীর সার্বিক আবেদন, দয়া করে অশান্তি করবেন না। বিজেপি অশান্তি করলে প্ররোচনায় পা দেবেন না। আপনারাও কন্ট্রোল করুন। তাঁর প্রশ্ন, ওয়াকফ আইন পাশ করানোর ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়ো করার কী ছিল? সংবিধানে ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে যে কোনও ধর্ম পালনে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রে সম্পত্তি অর্জন ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারও দেওয়া হয়েছে। আপনি আমার অধিকার কাড়ছেন। রাম-রহিম সবার অধিকার কাড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপি সরকারকে তোপ দেগে তিনি বলেন, আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি তো জানতেন। বাংলাদেশ তো রাজ্যের সীমান্তে। আপনি ইউনুসের সঙ্গে গোপন মিটিং করুন। দেশের ভাল হলে খুশি হব। কিন্তু আপনাদের প্ল্যানিংটা কী। কোনও এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে দাঙ্গা করা! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র বলছে, বাংলাদেশের হাত আছে। বিএসএফ তো বর্ডার সামলায়। সেখানে কোনও অধিকার আমার নেই, রাজ্য সরকারের কাছে নেই। আপনি কেন ঢুকতে দিলেন। কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে। আপনারা চান ভেদাভেদ তৈরি করতে। মুসলিম ভাইবোনদের বলব, এই আইনি সংবিধানে যে সম্পত্তির অধিকারের কথা আছে, তা ভেঙেছে। সংবিধানে ১৮ ও ৩৫ অনুচ্ছেদে সম্পত্তির উপর রাজ্য সরকারের অধিকারের কথা বলা আছে। সেটা রাজ্য বিধানসভার এক্তিয়ারভুক্ত। সেই অধিকারও কেড়ে নিয়েছে এই আইনের মাধ্যমে। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী।

আরও পড়ুন-নাটকের মঞ্চে স্বপ্নের উড়ান পার্থদের 

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, কলকাতায় নয় আপনারা দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করুন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা আপনাদের পাশে থাকবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে তাঁদের সবটা জানান। প্রয়োজনে আপনারা সেখানে গিয়ে ময়দানে থাকবেন রাস্তায় থাকবেন কারণ ওয়াকফ আইনটা কেন্দ্রীয় সরকার করেছে আমরা করিনি। তৃণমূল কংগ্রেস এর বিরোধিতা করেছে। এর আগে এনআরসি করেছিল তার প্রতিবাদ করেছি। ইউনিফর্ম সিভিল কোড করতে চায়। আপনাদের বলব বিজেপির কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। আপনারা শান্ত থাকুন।

এদিন মঞ্চে সব ধরনের গুরুদের এক সঙ্গে নিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, বাংলায় কোনও অশান্তি হতে দেব না। আর যারা মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে ধুলিয়ানে অশান্তি করেছে, গন্ডগোল করেছে, চক্রান্ত করেছে তাদের কাউকে ছাড়ব না। একটি ট্যুইটের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুর্শিদাবাদ সীমান্ত পেরিয়ে এখানে লোক ঢুকে অশান্তি করেছে। সীমান্ত পাহারা আমাদের পুলিশ না বিএসএফ দেয়? কী করছিল ওরা? কী করছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক? কী করছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? এর দায় ওদের নিতে হবে। বাংলাদেশে যখন বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে তখন আরও বেশি করে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। অথচ প্রচণ্ড তাড়াহুড়ো করা হল এই ওয়াকফ বিল নিয়ে। একটা বছর অপেক্ষা করুন দিল্লিতে পরিবর্তন হবে, নতুন সরকার আসবে তখন এই সমস্ত বিল সব অ্যামেন্ডমেন্ট হবে। এদিন ইন্ডিয়া জোটের শরিকদেরও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহ্বান করেছেন একসঙ্গে এই ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।

Latest article