নাটকের মঞ্চে স্বপ্নের উড়ানের এক দশক। দশ বছরে ‘নৈহাটি ব্রাত্যজন’। সেই উপলক্ষে আয়োজিত হচ্ছে ‘নাট্যোৎসব’। ২৫-৩০ এপ্রিল, কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু, রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন। রাজ্য সঙ্গীত দিয়ে উৎসবের সূচনা হবে।
সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত হয় সাংবাদিক সম্মেলন। উপস্থিত ছিলেন নৈহাটি ব্রাত্যজনের প্রাণপুরুষ বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব তথা ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক, চলচ্চিত্র পরিচালক তথা ব্যারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে, বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী, জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার, নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবাশিস রায় প্রমুখ।
আরও পড়ুন-ওএমআর শিটের কার্বন কপি পাবেন পরীক্ষার্থীরা, কার্যকরী হবে পুরনো সিদ্ধান্ত
সাংসদ পার্থ ভৌমিক জানান, ‘‘ব্রাত্য বসু না বললে আমি এই জায়গায় অভিনেতা হিসেবে আসতে পারতাম না। নৈহাটি ব্রাত্যজনও হত না। আমি অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারের সঙ্গেও মঞ্চ শেয়ার করেছি। আমার সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। এরপর আমি আর একটি নাটকেও অভিনয় না করলেও আমার আর আক্ষেপ থাকবে না।’’
বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্যারাকপুরের মানুষ চান কৃষ্টি-সংস্কৃতি-নাটক-গান। আমরা সকলে মিলে এটাই উপহার দেব ব্যারাকপুরবাসীকে। কারণ মানুষের কাজ করতে গেলে তার মধ্যে কৃষ্টি-সংস্কৃতি থাকাটা জরুরি। ওটা ছাড়া মানুষের কাজ করা যায় না।’’
নিজের নাটক জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার। বলেন, ‘‘নাটক মঞ্চস্থ করতে গেলে যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং যে পরিমাণ সময় দিতে হয়, তাতে প্রাণ এবং ভালবাসা না থাকলে সেটা সম্ভব নয়। সব আকর্ষণই হচ্ছে ওই মঞ্চের সামনে যে দর্শক বসে আছেন, তাঁদের দেখে।’’
নাট্যোৎসবের ৬ দিনে মঞ্চস্থ হবে ১১টি নাটক। উদ্বোধনের দিন সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে মঞ্চস্থ হবে ‘দাদার কীর্তি’। ওই দিন নাটকের ১০০ তম অভিনয়। পরের দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রোজ দুটি করে নাটক দেখতে পাবেন দর্শকরা। ২৬ এপ্রিল দুপুর ৩টেয় মঞ্চস্থ হবে দেবাশিস নির্দেশিত ‘কল্পনার অতীত’। বিকেল ৫-১৫ মিনিটে অঙ্গন কথোপকথনে থাকবেন ভাস্কর চট্টোপাধ্যায় ও দেবাশিস রায়। সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে মঞ্চস্থ হবে অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘আনন্দ’-এর ২৫তম অভিনয়। ২৬ এপ্রিল দুপুর ৩টেয় মঞ্চস্থ হবে সোহিনী সেনগুপ্ত নির্দেশিত ‘রানি কাদম্বিনী’। বিকেল ৫-১৫ মিনিটে অঙ্গন কথোপকথনে থাকবেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং বিভাস চক্রবর্তী। দু’জনেই মুখিয়ে আছেন এই অনুষ্ঠানটির জন্য। বিভাস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর সঙ্গে কিছুক্ষণ নাটক নিয়ে কথা হবে। ভেবে ভালই লাগছে। আমাদের দলের একটি নাটক মঞ্চস্থ হবে এই উৎসবে। আন্তরিক আয়োজন। আমি সাফল্য কামনা করছি।’’ ওইদিন সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে মঞ্চস্থ হবে দেবাশিস নির্দেশিত ‘ফেরারি ফৌজ’ নাটকের ৫০তম অভিনয়।
২৮ এপ্রিল দুপুর ৩টেয় মঞ্চস্থ হবে অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘দায়বদ্ধ’। বিকাল ৫-১৫ মিনিটে নৈহাটি ব্রাত্যজন পরিবেশন করবে নাটকের গান। সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে মঞ্চস্থ হবে সুমন মুখোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘টিনের তলোয়ার’।
আরও পড়ুন-বিজেপির বুলডোজারে গড়াগড়ি বজরংবলীও
২৯ এপ্রিল দুপুর ৩টেয় মঞ্চস্থ হবে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘আন্তিগোনে’। বিকাল ৫-১৫ মিনিটে অঙ্গন কথোপকথনে থাকবেন দেবশঙ্কর হালদার ও সৌমিত্র মিত্র। সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে মঞ্চস্থ হবে দেবাশিস নির্দেশিত ‘বেসরকারি’। প্রথমবার মঞ্চস্থ হবে নাটকটি।
৩০ এপ্রিল দুপুর ৩টেয় মঞ্চস্থ হবে সৌমিত্র মিত্র নির্দেশিত ‘এক মঞ্চ এক জীবন’। বিকাল ৫-১৫ মিনিটে অঙ্গন কথোপকথনে থাকবেন বিভাস চক্রবর্তী ও দেবাশিস রায়। সন্ধে ৬-৩০ মিনিটে মঞ্চস্থ হবে দেবাশিস নির্দেশিত ‘বসন্ত বিলাপ’। উৎসবে ব্রাত্যজন সম্মাননা প্রদান করা হবে বিভাস চক্রবর্তী, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, সৌমিত্র মিত্র, দেবশঙ্কর হালদার, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে।
প্রসঙ্গত, দশ বছর আগে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল নৈহাটি ব্রাত্যজনের। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা মঞ্চ-সফল নাটক উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। রাজনীতি করেও যে সিরিয়াসভাবে নাটক করা যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন সাংসদ পার্থ ভৌমিক।
নৈহাটি ব্রাত্যজনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নাট্যোৎসব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি নাট্যমুখী করে তোলা। অনেকটাই সফল, জোর দিয়ে বলাই যায়। কারণ, নৈহাটি ব্রাত্যজনের বেশিরভাগ নাটকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় নতুন শিল্পীদের। নবীন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বড় মঞ্চে নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। মঞ্চের পাশাপাশি আগামী দিনে তাঁদের দেখা যেতে পারে অন্য মাধ্যমেও।