ফের হার, কঠিন অঙ্কের সামনে নাইটরা

গুজরাট টাইটান্স ১৯৮/৩ (২০ ওভার) কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৫৯/৮ (২০ ওভার)

Must read

অলোক সরকার: শেষদিকে বল কমছে। নাইটরা (kkr) ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আস্কিং রেট ১৮.২১। তবু মিরাকলের আশায় বসে আছে গ্যালারি। ঘড়ি বলছে রাত এগারোটা। তাও। অপেক্ষা রাসেল পাওয়ারের। কিন্তু সেই দিন আছে কোথায়! কারা বলছিল রশিদ ফর্মে নেই। আসলে ভুল। বলটা ছাড়ার আগে হাওয়ায় একটু বেশি মোচড় দিলেন। এটাই ওস্তাদি। রাসেল বলের মোশনে এগিয়ে এসেছেন। বাটলারের জন্য এর থেকে সহজ স্ট্যাম্প আর কিছু হয় না।
পরে ব্যাট করা দলের কাছে ১৯৯ বড় টার্গেট। তার উপর কেকেআর (kkr) নেমেছিল চাপ নিয়ে। সাত ম্যাচে তিন জয়। বাকি সাত ম্যাচে চাই পাঁচ জয়। কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতি তারাই ডেকে এনেছে। মুল্লানপুরে পাঞ্জাব ম্যাচে ১১১ রান তাড়া করতে পারেনি এই দল। টিভি ক্যামেরায় বারবার ধরা পড়ল নাইট কোচ পণ্ডিতের মুখ। দেখে মনে হল কোয়ালিফায়ার এক বা দুই অবধি ভাবতে পারছেন না আর। বুদ্ধিমান লোক। ঘরের মাঠে গুজরাটের কাছে ৩৯ রানে হার চোখ খুলে দিয়েছে!
নাইটরা ১৫৯/৮ করেছে। এটাও মুল্লানপুরের হারের মতো। বিনা লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ। অঙ্ক বলছে, এখনও চারে যাওয়ার সুযোগ আছে কেকেআরের। কিন্তু বাকি ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জিততে হবে। তবে মুল্লানপুরের ছায়া যেভাবে জাঁকিয়ে বসছে পণ্ডিতের সংসারে তাতে এখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। আরও যেটা বলার, ২৬’শে আবার পাঞ্জাব ম্যাচ। শ্রেয়স সেদিনই পুরনো মাঠে পুরনো দলকে টুর্নামেন্টের বাইরে করে দিয়ে যাবেন না তো? নাইটদের বড্ড ভঙ্গুর দল মনে হচ্ছে।
রহমানুল্লাহ গুরবাজকে নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। কিন্তু সুযোগ পেয়ে সাকুল্যে ১ করলেন। সেই সিরাজ ব্রেক থ্রু দিলেন দলকে। নাইটরা ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছিল নারিন আর রাহানের ব্যাটে। কিন্তু রশিদ এসে নারিনকে(১৭) তুলে নেন। আইপিএল ১৮-তে রশিদ উইকেট পাচ্ছেন না। কিন্তু ফর্মে ফেরার লড়াই ছিল। আগেরদিন ফাঁকা ইডেনে এক ঘণ্টা বল করে এদিন প্রথম ওভারে তুলে নিলেন নারিনকে। গুজরাটের বড় প্লাস পয়েন্ট বোলিং। শুভমনের হাতে প্রচুর অপশন। ইশান্ত শর্মা এই বয়সে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে চাপ তৈরি করছেন।
শুভমনকে বলা হচ্ছে আইপিএলের রাইজিং ক্যাপ্টেন। গুজরাটের টিডি সোলাঙ্কি বলছিলেন, খুব তাড়াতাড়ি শিখছে। ভুল বলেননি। শুভমন জানেন নাইটদের প্রথমে ধাক্কা দিতে পারলে উঠে দাঁড়াতে পারবে না। তাই সিরাজকে প্রথম স্পেলে তিন ওভার বল করিয়ে নিলেন। শুভমনের হাতে প্ল্যান বি আছে। রাহানের নেই। নারিন এককালে পিঞ্চ হিটার হিসাবে কিছু রান করে ফেলার পর ওপেনার। জায়গাটা ক্যারিবিয়ান দলে কখনও পাননি। কেকেআর অতঃপর জেনুইন ওপেনার ছেড়ে তাঁকেই বীরেন্দ্র শেহবাগ ভেবে খেলিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১০ ওভারে ৬৮/২ ছিল কেকেআরের। একটু পরে ৮১/৩। ভেঙ্কটেশ আইয়ার (১৪) আউট সাই কিশোরের বলে। ২৩.৭৫ কোটির প্লেয়ার কবে রান করে জেতাবেন কেউ জানে না। রাহানে অবশ্য ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বল আর রানের ব্যবধান বেড়েই চলল। এই চাপ থেকে রাহানে ওয়াশিংটনের স্ট্যাম্পের বহু বাইরের বলে অদ্ভুত শট মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হয়ে গেলেন বাটলারের হাতে। রাসেল ২১ রান করেছেন। রিঙ্কু ১৭। কিন্তু কেউ জয়ের বিন্দুমাত্র আশা দেখাতে পারেননি।
গুরবাজের দলে আসা মোটামুটি প্রত্যাশিতই ছিল। কেকেআর অবশ্য ডি’ককের সঙ্গে নরখিয়াকেও বাইরে পাঠাল। ডি’কক প্রথম ম্যাচে রান করার পর থেকে আর কিছু করতে পারেননি। নরখিয়া আনফিট ছিলেন। ফিট হওয়ার পর দুটো ম্যাচ খেলেছেন। অবদান শূন্য। গুরবাজকে যে খেলানো হবে তার আন্দাজ মিলেছিল নাইটদের প্র্যাকটিসে। তাঁকে অনেকক্ষণ ব্যাট করানো হয়। তবে নরখিয়াকে বসিয়ে মইনকে খেলানোয় চমক ছিল। বিশেষ করে ঘাস নিয়ে এত কথার পর।
পাওয়ার প্লে-তে ৪৫/০ ছিল গুজরাট। আইপিএলের হিসাবে রানটা কম। শুভমন আর সাই সুদর্শন বোধহয় সেটা বুঝেছিলেন। পরের ওভারে মইনকে ছয় দিয়ে শুরু করলেন শুভমন। এই ওভারে এল ১৭ রান। রাহানে এদিন দ্বিতীয় ওভারেই মইনকে আনেন। পরের ওভারে বরুণ। একটু পরে নারিন। কিছুতেই বোঝা গেল না, তাহলে ঘাসটা কোথায় গেল! হিসেব বলছে প্রথম ১০ ওভারে বৈভব আর হর্ষিত মোটে দুই ওভার বল করেছেন।
রাহানে শুভমনদের ব্যাট করতে দিলেন। অঙ্ক খুব পরিষ্কার। শিশির পড়বে। স্পিনাররা বল গ্রিপ করতে সমস্যায় পড়বেন। তাছাড়া টার্গেট সামনে রেখে ব্যাট করার অনেক সুবিধা। কিন্তু গুজরাটের দুই ওপেনার লম্বা সময় অবিচ্ছেদ্য থেকে যাওয়ায় চাপ বাড়ছিল রাহানেদের উপর। এরমধ্যে শুভমন ৩৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেললেন। সুদর্শনও পঞ্চাশে পৌঁছে যান ৩৩ বলে। গুজরাট ততক্ষণে একশো পার করে ফেলেছে। নাইট অধিনায়কের ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত এবার বুমেরাং হয়ে গেল। ২০ ওভারে গুজরাট ১৯৮/৩।
সুদর্শন (৫২) আউট হওয়ার পর নাইটদের ম্যাচে ফেরার সুযোগ ছিল। কিন্তু বৈভব আর মণীশ বাটলারের দুটো ক্যাচ ফেলে এই চান্স নষ্ট করেছেন। মণীশের ক্যাচটা কঠিন ছিল। কিন্তু বৈভব যেটা ফেলেন সেটা সহজ ক্যাচ। যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও বলের নিচে যেতে পারেননি। শেষমেশ শুভমনকে (৯০) ফেরান বৈভবই। স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারিতে নিচু ক্যাচ নেন রিঙ্কু। ততক্ষণে বাটলারের সঙ্গে ৫৬ রানের পার্টনারশিপ অবশ্য হয়ে গিয়েছিল।
রাহুল তেওটিয়া যখন এলেন তখন সব বল মারার পরিস্থিতি। তিনি রান করার আগেই ফিরে যান হর্ষিতের বলে। কিন্তু গুজরাট তাও ২০ ওভারে ১৯৮/৩ তুলতে পেরেছে বাটলারের জন্য। তিনি ২৩ বলে ৪১ নট আউট থেকে যান। শাহরুখ নট আউট ছিলেন ১১ রানে। পরে দেখা গেল নাইটদের হারাতে এটাই ছিল যথেষ্ট রান।

আরও পড়ুন-আইনি পরামর্শ মেনেই তালিকা প্রকাশিত হবে

Latest article