শালবনির-গোয়ালতোড়, রাজ্যে শিল্প স্থাপনের জোয়ার: মুখ্যমন্ত্রী, সৌর বিদ্যুতের দাম কমার আশ্বাস

Must read

সোমবার শালবনির পরে মঙ্গলবার গোয়ালতোড়। রাজ্যে শিল্পের জোয়ার। আর তার হাত ধরে উন্নয়ন। পশ্চিম মেদিনীপুর সফরের দ্বিতীয় দিনে মেদিনীপুর কলেজ মাঠের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গতকাল শালবনি-আজ গোয়ালতোড়- রাজ্যের শিল্প স্থাপনের জোয়ার চলছে। এদিন মেদিনীপুর থেকে একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ জুন মালিয়া, মিতালী বাগ, মন্ত্রী শিউলি সাহা, প্রতিভা মাইতি, অজিত মাইতি, হুমায়ুন কবীর-সহ মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ”গোয়ালতোড়ে ৯৫০ একর জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে, পূর্ব ভারতে এত বড় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প আর দুটি নেই। ৮০ শতাংশ জার্মান বিনিয়োগ, ২০ শতাংশ রাজ্যের বিনিয়োগ। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলার মানুষ যত বেশি সৌর বিদ্যুৎ পাবে, তত বিদ্যুতের দাম কমবে। সোমবার শালবনিতে দুটো পাওয়ার প্লান্টের শিলান্যাস করেছি। সেখানেও ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।”

আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে অশান্তির পিছনে বহিরাগত-চক্রান্ত! ফাঁস করার হুঁশিয়ারি দিয়ে মে মাসেই সফরে মুখ্যমন্ত্রী

মমতা জানান, ”আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে ৮ লক্ষ মানুষকে পরিষেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি। ২১২টি প্রকল্পর উদ্বোধন হল, ১১০ টি প্রকল্পর শিলান্যাস হল। আগামিদিনে আরও অনেক পরিকল্পনা নিয়েছি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান-এর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি পড়ে এসে উদ্বোধন করব। আগামী ২ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৮ হাজার মেগাওয়াট হবে। দেউচা পাচামি হয়ে গেলে ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখনও ওই প্রকল্পর উদ্বোধন করিনি।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ”আমি মনে করি আগে কাজ, পড়ে উদ্বোধন। আমার থিওরি অনুযায়ী আমি চলি।”

এদিন, গোয়ালতোড়ে প্রায় এক হাজার একর জমিতে সোলার প্রজেক্টের সূচনা হল। ১১২ মেগাওয়াটের উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুনর্নবীকরণ শিল্পক্ষেত্র পূর্ব ভারতের প্রথম। আরও একশও মেগাওয়াট বাড়াবে। মমতা জানান, ৮০ শতাংশ টাকা জার্মানি দিচ্ছে, ২০শতাংশ টাকা রাজ্য দিচ্ছে। আপনারা যদি আর ও পাওয়ার প্লান্ট করতে চান সেই জন্য আমাদের জমির মজুদ রয়েছে। যত বেশি সোলার পাওয়ার হবে, দাম তত কমে যাবে। বলেন, যদিও এটা খুব ব্যয় সাপেক্ষ। তাও ধীরে ধীরে আমাদের এগোতে হবে। গতকাল শালবনিতে দুটো পাওয়ার প্রজেক্ট এর শিলান্যাস করেছি। গোয়ালতোড়ে অনেক লোকের কাজ হচ্ছে আরো কাজ হবে। ২০০০ একর জমি নিয়ে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক উদ্বোধন করেছি শালবনিতে। যারা ইচ্ছুক তারা ওইখানে জমি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে পারে।

এদিন অনুষ্ঠান থেকে প্রায় 8 লক্ষ বেশি মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গোয়ালতোড়ে ১৩২ কেবি সাব স্টেশনের উদ্বোধন হল। ডবল সার্কিট লাইন ৪৯ কোটি টাকা উদ্বোধন হয়। মেদিনীপুর পুরসভায় জল শোধনাগার। সিটার ডব্লু আর সাবস্টেশন ৩৩ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা খরচ। পথশ্রী প্রকল্পে গ্রামীণ রাস্তা ২৬৪ টা রাস্তা নির্মাণ হয়েছে।

২৬৯ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ। মেদিনীপুর থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার পথে ১৫৪ ১০০ সংযোগকারী সেতু দুলেন। ২৬৩ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা খরচ। ক্ষীরপাই রামজীবনপুর রাস্তা ৮৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। চন্দ্রঘাটা গোয়ালতোড় কুড়ি কোটি কোটি ৩২মিনিট।

২১২টা প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে। আগামী দিনে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। ঘাটাল পৌরসভায় ও খড়গপুর পুরসভায় পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ১০২ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হলো। সবং ব্লকের কালীঘাটের নদীর উপর ৩৩০ মিটার লম্বা কংক্রিট সেতু ৩৩ কোটি ৯৩ কোটি টাকা।। কলকাতা সবং সড়ক পথের জন্য ৪০ কিলোমিটার কমে যাবে পটাশপুর ওয়ার্ড ভগবানপুর ওয়ার্ল্ড ব্লকের সঙ্গে বালিচক রেল স্টেশনের যোগাযোগের জন্য ১৫ কিলোমিটার কমে যাবে।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, শিল্পের সম্ভাবনা এগিয়ে চলেছে। শালবনিতে, খড়্গপুরের নতুন স্টেডিয়াম হয়েছে। সোলার প্ল্যান্টের জন্য ৭৫৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যাতে আরও সোলার প্ল্যান যাতে হয় তাতে ৪০০ একর জমির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী দিনে কংসাবতী মুকুটমনিপুর বাঁধে ২০০ মেগাওয়াট, বক্রেশ্বর ২০০মেগাওয়াট, পুরুলিয়ার এক হাজার মেগাওয়াট সোলার প্লান্ট হবে।

বিরোধীদের কটাক্ষ করে মমতা বলেন, অনেকেই বলে কোথায় শিল্প কোথায় শিল্প এটা গল্প। আমি বলি গল্প থেকেই সব কিছু শুরু হয়।। অনেকের জীবনে অনেক কাহিনী থাকে সেগুলি থেকেই অনেককে শিক্ষিত করতে সাহায্য করে। শিল্পকে গল্পের পর্যায়ে ফেললে হবে না শিল্প তৈরি করা মানে আর্থিক উন্নয়ন। কর্মসংস্থান তৈরি করে। তিনি জানান, ”আমি একটা নতুন প্রজেক্ট তৈরি করেছিলাম সৃষ্টিশ্রী প্রকল্প। সেখানে বাঁধ তৈরি করা চারা গাছ পুতে দেওয়া এসব কাজ করেছি। এর ফলে অনুর্বর জমি উর্বর হচ্ছে মানুষ কাজ পাচ্ছে।”

দেউচাপাঁচামি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”দেউচাপাঁচামি হলে একশো বছরের লোডশেডিং আর হবে না। ৭৬ হাজার কোটি টাকা এর জন্য খরচ করেছি এরপর আরও ৪৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করব।। ওখানে আদিবাসী সংখ্যালঘু ভাইয়েরা যাঁরা জমে দিয়েছেন প্রত্যেকে হোম গার্ডের চাকরি পেয়েছেন, টাকার প্যাকেজ পেয়েছেন। ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আগে কাজ তারপর উদ্বোধন তাই এখনও উদ্বোধন করিনি কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে।। ছটা ইকনোমিক করিডর হচ্ছে। ডানকুনি থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত দুটো করিডোর হচ্ছে। খড়গপুর থেকে মোরগ্রাম পর্যন্ত যাবে করিডোর। ডানকুনি থেকে কল্যাণী পর্যন্ত, ডানকুনি থেকে কুচবিহার , পুরুলিয়া থেকে কলকাতার জোকা। সারা বাংলা কভার হবে এই করিটরের মাধ্যমে। জঙ্গলমহল কর্মসুন্দরী তৈরি করেছে। আটটা বড় প্লান্ট আসছে সেখানে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।”

মমতা জানান, ”যারা বলে বিজিবি এসে কি হল তাদের বলছি সাতটা বেঙ্গল বিজিনেস সাবমিট করেছিলাম। উনিশ লক্ষ কোটি টাকার ওপর ১৩ লক্ষ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে রাস্তার দু ধারে ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হচ্ছে বাদবাকিটা প্রসেসে আছে।”

Latest article