প্রতিবেদন : ভুয়ো টিকাদানের অভিযোগ এবার সংসদেই স্বীকার করে নিল কেন্দ্র। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও লোকসভার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) প্রশ্নে ভুয়ো টিকার অভিযোগ মেনে নিতে বাধ্য হল মোদি সরকার। খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রকই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, টিকা পায়নি এমন এবং মৃত ব্যক্তিকেও ভ্যাকসিন দেওয়ার শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিনে গোটা দেশে রেকর্ডসংখ্যক আড়াই কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার নেমেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজনৈতিক প্রচারে ফায়দা তুলতে বিজেপিও বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়ে। কিন্তু কেন্দ্রের এই দাবি নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দিহান ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সন্দেহ যে অমূলক ছিল না সেটা কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই স্বীকার করল শুক্রবার।
টিকাকরণের রেকর্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে একাধিক প্রশ্ন পেশ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কেন্দ্রের কাছে জানতে চান, রেকর্ড টিকাকরণের দিন ভ্যাকসিন পাননি বা মৃত মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে এমন ভূরি-ভূরি অভিযোগ উঠেছে। এটা কি ঠিক? যদি এটা হয়ে থাকে তবে কেন্দ্র এ-বিষয়ে কী চিন্তা-ভাবনা করছে? অভিষেক (Abhishek Banerjee) আরও জানতে চান রেকর্ডসংখ্যক আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার মধ্যে মৃত এবং ভ্যাকসিন না পাওয়া মানুষের নামগুলিও কি যুক্ত আছে? ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভুল না হয় তার জন্য কেন্দ্র কি কোনও পরিকল্পনা করেছে?
আরও পড়ুন-অভিষেকের এমপি কাপের বিশ্বমানের উদ্বোধন
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভারতী প্রবীণ পাওয়ার এদিন জানিয়েছেন, এ ধরনের কিছু ভুলের কথা তাঁদের নজরে এসেছে। এটা নিতান্তই বিচ্ছিন্ন ব্যাপার। মন্ত্রীর সাফাই ছিল, এসব নাকি ছোটখাটো ভুল এবং ভূরি ভূরি এমন অভিযোগ উঠেছে এটাও নাকি ঠিক নয়। একইসঙ্গে মন্ত্রী জানান, কয়েকটি ক্ষেত্রে মৃত মানুষের নাম বা ভ্যাকসিন পাননি এমন মানুষের নামও ভ্যাকসিন প্রাপকের তালিকা উঠে গিয়েছে। এমনকী, তাঁদের নামে ভ্যাকসিন নেওয়ার শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ভ্যাকসিন সংক্রান্ত ডেটা এন্ট্রির দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের ভুলের জন্যই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই উত্তরে স্পষ্ট হয়ে যায়, তৃণমূল কংগ্রেস এতদিন ধরে যে অভিযোগ করে আসছিল তা পুরোপুরি সত্য। রেকর্ডের কথা বলার জন্য ভ্যাকসিন নেয়নি এমন মানুষের নামও টিকা প্রাপকদের তালিকায় তুলে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, মৃতদের নামেও শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ভ্যাকসিন প্রাপকের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাতেই এটা করা হয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, মোদি সরকার জেনে-বুঝেই জল মেশানোর কাজ করেছে। এখন নিরীহ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজেদের দোষ ঝেড়ে ফেলছে। তবে অভিষেকের দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কেন্দ্রের এদিনের স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে ফাঁস হয়ে গেল, মোদির জন্মদিনে আড়াই কোটি মানুষকে টিকাদানের রেকর্ড গড়ার যে দাবি করা হয় তা ছিল জল মেশানো।