প্রতিবেদন : সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরের ভেতরে (পহেলগাঁও) ঢুকে পর্যটকদের নির্বিচারে গুলি করে খুন করে পালিয়ে গেল জঙ্গিরা। আমাদের ৩২ জন সহ-নাগরিককে আমরা অকালে হারালাম। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত একজন জঙ্গিও ধরা পড়েনি। দেশ জুড়ে হাহাকার চলছে। গোয়েন্দা ব্যর্থতা— স্বরাষ্ট্র দফতরের চরম ব্যর্থতা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বেআব্রু হয়ে গিয়েছে নিরাপত্তার ভিতরকার দিকটা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কফিনে শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে দেশের সীমানায় ঢুকে এভাবে নির্বিচারে হত্যার ছবি বলে দিচ্ছে, এর পর আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ওই চেয়ারে বসার কোনও অধিকার নেই। এরপরও কেন পদত্যাগ করবেন না তিনি? এই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। তার পরেও কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল? চরম ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থতা। তার কী উত্তর দেবে দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? অবিজেপিশাসিত রাজ্যে যেখানে পান থেকে চুন খসলেই বিজেপি সে-রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে, এবার কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না এত বড় ঘটনা ঘটে গেলেও! এই ভয়াবহ জঙ্গি হানায় বাংলার তিনজন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। সমব্যথী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিহতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে আজই কলকাতায় ফিরছে তাঁদের দেহ। দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনার-সহ সব জায়গায় কথা বলে ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকার্ত পরিবার-পরিজনদের পাশে আছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় গভীর শোক জ্ঞাপন করেছেন। কিন্তু গোটা ঘটনায় ব্যথিত তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মনে করেন, সন্ত্রাসবাদীদের কোনও জাত-ধর্ম হয় না। তারা শুধু মানুষ হত্যা করতেই জানে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে জানে। কিন্তু এই ঘটনার ফাঁকে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে। রাজ্যে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। যার জন্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ফেক খবর, ফেক ভিডিও। তিনি আরও বলেছেন যে আতঙ্কবাদীদের কোনও জাত হয় না ধর্ম হয় না— তারা শুধু জানে মানুষকে হত্যা করতে ও সমাজে আতঙ্ক তৈরি করতে। নেত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, এই সময়ে আমাদের সাবধান থাকতে হবে কারণ আমাদের রাজ্যে বেশ কিছু সুযোগসন্ধানী বিরোধী দল অশান্তি-সংঘর্ষের আগুনে গা সেঁকার চেষ্টা করছেন। আমরা দানবিকতা নয়, মানবিকতায় বিশ্বাস করি— মানুষের মধ্যে একতা এবং সৌহার্দ্যের বাতাবরণ তৈরিতে বিশ্বাস করি। এই প্রথম নয়। কাশ্মীর উপত্যকায় এর আগেও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে বহু। কেন্দ্রের উদাসীনতায় প্রাণ গিয়েছে শয়ে শয়ে সৈনিকের। পুলওয়ামার মৃত্যুমিছিলের সময়ও একই রকম ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর দেখা গিয়েছিল।
পহেলগাঁওতে জঙ্গিরা ঢুকল, অবাধ গতিবিধিতে থাকল, আশ্রয় নিল, হামলা করল। অথচ সে-সময় জঙ্গিদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ করতে দেখা যায়নি জওয়ানদের কাউকে। এর দায় কি স্বরাষ্ট্র দফতরের নয়? একতরফা হামলায় এতগুলো প্রাণ গেল। পাল্টা প্রতিরোধ ছিল না সরকারি বাহিনীর। কেন সেখানে পাহারা ছিল না যথাযথ? এটা কি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দফতরের চূড়ান্ত অপদার্থতা নয়? এই অপদার্থতা ও ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাহলে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পদত্যাগ করবেন না কেন?
তৃণমূলের আরও প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকারের অসামরিক বিমান চলাচল দফতর করছেটা কী? এখানে কি কোন সরকার আছে? ওই ভয়ংকর ঘটনার পর আতঙ্কে পর্যটকরা ফিরে আসতে চাইছেন। ফিরে আসতে গিয়ে আটকে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে? বিমান ভাড়া দেখছেন একটি বিমান সংস্থার কলকাতা থেকে শ্রীনগরের ভাড়া ৮১ হাজার টাকা। একজন সাধারন মানুষ পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেছেন। একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতায়। এখন তারা ফিরে আসতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না? কেন্দ্রীয় সরকার একটা স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করবে না? বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলিকে ভাড়াটা কন্ট্রোল করতে বলবে না। মানুষগুলো এখন কী করবে?
ঠিক এই সময়টাতেই একাধিক ভিভিআইপির কাশ্মীর সফর ছিল এই সময়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সব সফর বাতিল করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, এই সফরগুলি কেন বাতিল করা হল? তবে কি কোনও আশঙ্কা ছিল? তাই ওখানে ভিভিআইপিরা গেলেন না, বদলে বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া হল নিরীহ পর্যটকদের। আর সেই পর্যটকদেরও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা হল না। এখন সে দায় কার?
কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় মৃত্যু কমপক্ষে ৩২ পর্যটকের, লাগাতার ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, কেন পদত্যাগ করবেন না শাহ
