প্রতিবেদন : ভূস্বর্গে নৃশংস হত্যালীলার পরে কেটে গেছে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আততায়ীদের একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র দফতর। পহেলগাঁও হামলায় জড়িত ৩ জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করেছে এনআইএ। পরে প্রকাশ করা হয় ৪ জঙ্গির ছবিও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এদের কাউকেই ছুঁতে পারা তো দূরের কথা, খুঁজেই পায়নি মোদি সরকার! স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের এই ব্যর্থতায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। হামলাকারীদের গতিবিধি সম্পর্কে খবর দিলে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। এদিকে সন্ত্রাসবাদীদের এই নৃশংস হত্যালীলার প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। পহেলগাঁওতে বুধবার বন্ধ পালন করেন হোটেল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিলেন সাধারণ মানুষ। আসলে জঙ্গি হামলা যে স্থানীয় পর্যটনশিল্পের প্রতি একটা বড় আঘাত, এটা একবাক্যে স্বীকার করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, পর্যটকরাই আমাদের জান-প্রাণ।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে স্কুলে ফিরছেন শিক্ষকরা, আন্দোলন জিইয়ে রাখছেন উসকানিদাতারা
যে সন্ত্রাসবাদীদের ছবি সামনে আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৪ জনই লস্করের। এরমধ্যে দুজন পাক নাগরিক বলে জানা গিয়েছে। সোমবার পহেলগাঁও রিসর্টে এরাই গুলি চালিয়ে অন্তত ৩২ জন পর্যটককে খুন করেছে বলে নিশ্চিত তদন্তকারীরা। এনআইএ যাদের ছবি প্রকাশ করেছে সেই ৪ জঙ্গির নাম জুনেইদ, আসিফ ফুজি, সুলেমান শাহ ও আবু তালহা। প্রত্যেকেই লস্করের ছায়াগোষ্ঠী ‘দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-এর সক্রিয় সদস্য। তবে হামলার মাস্টার মাইন্ড লস্কর-ই তৈবার ডেপুটি চিফ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু একটা ব্যাপারে প্রায় সকলেই নিশ্চিত, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে গভীর পাক-ষড়যন্ত্র। সপ্তাখানেক আগেই পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের বক্তব্যে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। ১৭ এপ্রিল পাক সেনাপ্রধানের উত্তেজক ভাষণেই ছিল পহেলগাঁও হামলার উসকানির বীজ।
আরও পড়ুন-২ কোটি ব্যয়ে তৈরি হবে ১২০ বছরের সীমান্তবর্তী আন্তর্জাতিক মানের হাট
কী করছিলেন অমিত শাহ?
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ভূমিকা নিয়ে। বুধবার সকালে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে হুঙ্কার দিয়েছেন, ভারত সন্ত্রাসের কাছে নতি স্বীকার করবে না। রেহাই পাবে না এই নৃশংস জঙ্গি হামলার অপরাধীরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, ভরা মরশুমে তা হলে পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারল না কেন? কী করছিল স্বরাষ্ট্র দফতর? তাছাড়া এই ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রায় ২৮ ঘণ্টা পরেও একজন আততায়ী ধরা পড়ল না কেন? এটা কি কেন্দ্রের অপদার্থতা নয়?
সন্ত্রাসের প্রতিবাদে
বনধ পহেলগাঁওয়ে
এদিকে পহেলগাঁওয়ের নৃশংস জঙ্গিহামলার প্রতিবাদে ভূস্বর্গের পথে নেমেছেন প্রতিবাদী জনতা। ব্যবসায়ী সংগঠনের ডাকে পালিত হচ্ছে বনধ। মঙ্গলবার রাত থেকেই পহেলগাঁওয়ের রাস্তায় শুরু হয়েছে মোমবাতি মিছিল। হত্যালীলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কাশ্মীরিরা স্লোগান তুলেছেন, ‘হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ’, ‘আমরা ভারতীয়’। বুধবার বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত দোকান-বাজার। স্থানীয় মসজিদ্গুলো থেকে সম্পূর্ণ শাট-ডাউনের ডাক দেওয়া হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছে আমজনতা। মিছিলে হেঁটেছেন হোটেল মালিক এবং দোকানিরা। পর্যটকদের কাশ্মীর ছাড়ার ঢল নামলেও আটকে পড়া মানুষজনকে আগলে রেখেছেন স্থানীয় মানুষ এবং ব্যবসায়ীরাই। সমস্ত পর্যটককে আগামী ১৫ দিন সম্পূর্ণ বিনাখরচে হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় মানুষের মতে, গত ৩৫ বছরে এমন ছবি দেখা যায়নি জম্মু-কাশ্মীরে।
ফের অনুপ্রবেশের
চেষ্টা, খতম ২ জঙ্গি
পহেলগাঁও হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার ভোরে বারামুল্লায় সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে ৩ জঙ্গি। তার মধ্যে দু’জনকেই খতম করেছে ভারতীয় সেনা। পাহাড়-জঙ্গলে ড্রোন উড়িয়ে, কপ্টারে কড়া নজরদারি এবং তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে সেনা।
হাই অ্যালার্ট দিল্লি-মুম্বইয়ে
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পরেই হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে দিল্লি, মুম্বই, জয়পুর, অমৃতসর-সহ একাধিক স্পর্শকাতর শহরে। মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। বাতিল করা হয়েছে পদস্থ পুলিশ কর্তাদের ছুটি। দিল্লির রাস্তায় চলছে নাকা চেকিং। সুপ্রিম কোর্ট, লালকেল্লাতেও কড়া নজরদারি। লক্ষণীয়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেড ইভান্স ৪ দিনের ভারত সফরে এখন সপরিবারে রয়েছেন দিল্লিতেই। এদিকে জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক নেপালের নাগরিকও। সুদীপ নিউপানে নামে ওই ব্যক্তি দিদি-জামাইবাবু এবং মাকে নিয়ে কাশ্মিরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়। নেপালের বিদেশমন্ত্রী আরজু রানা দেউবা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।