প্ররোচনার শিকার হবেন না, ভুলপথে চালিত হবেন না

রাম-বাম জোট বেঁধে চাকরিহারাদের বিপথে চালিত করতে তৎপর। তাঁদের কাছে সবিনয় আবেদন, আপনারা মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। ওদের কথায় চালিত হয়ে এমন কিছু করবেন না যাতে সিপিএম-বিজেপি মদত পায়। লিখছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী

Must read

২৬০০০ শিক্ষক নিয়োগ রাজ্য সরকার করেছে সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। কারণ মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে বাংলার স্কুলগুলিতে শিক্ষা প্রদানের প্রক্রিয়া চালু রাখতে। পাশাপাশি নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ মানে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ঠিক রাখা এবং শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের শিক্ষকতার পেশায় প্রবেশের পথ সুগম করা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তাই চেয়েছেন।
ওয়েটিং লিস্ট-এ থাকা কিছু চাকরি প্রার্থী আদালতের শরণাপন্ন হল কিছু অভিযোগ সামনে নিয়ে। অভিযোগ, কিছু অবৈধ নিয়োগের ফলে তাদের ওয়েটিং লিস্টে স্থান হয়েছে। বিকাশ ভট্টাচার্যরা মামলায় যুক্ত হলেন এবং সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্রুটি যুক্ত ও বেআইনি প্রমাণে সচেষ্ট হলেন। সিবিআই তদন্ত শুরু করল। তদন্তের স্বার্থে শিক্ষামন্ত্রী-সহ এসএসসির কর্মকর্তারা জেলবন্দি হলেন। হাইকোর্টে বিচারক অভিজিৎ গাঙ্গুলি সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করলেন। সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল ও আবার পরীক্ষার গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। জয় হল বিকাশবাবু, বিজেপির এমপি অভিজিৎ গাঙ্গুলির। সিপিএম ও বিজেপির সরকার-বিরোধী আন্দোলনের রসদ পেল। চাকরি হারালেন ২৬০০০ হাজার শিক্ষক। শিক্ষক হারাল স্কুলগুলি, শিক্ষক হারাল ছাত্রছাত্রীরা। সমস্যায় পড়ল গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। ক্ষতি হল বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু কারও চাকরি চলে যাক চাননি। সুপার নিউমেরারি পোস্ট ক্যাবিনেট-এ ক্রিয়েট করা হয়েছিল ওই ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরি প্রার্থীদের জন্য যারা দিনের পর দিন রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন। যারা বিকাশবাবুদের ধরেছিলেন, যাতে প্যানেলে তাদের ঢুকিয়ে দিতে পারেন। বিকাশবাবু তা তো পারলেনই না বরঞ্চ এই অতিরিক্ত পোস্ট তৈরির বিরুদ্ধে মামলা করে সেই উদ্যোগকেও নষ্ট করে দিলেন। সমগ্র প্যানেল বাতিলের পর সেই সমস্ত ওয়েটিং লিস্ট-এ থাকা প্রার্থীরা এখন কী করছে আমি জানি না। কারণ তাদের ন্যূনতম সম্ভাবনাটাও বিকাশবাবুরা নষ্ট করেছেন।

আরও পড়ুন- ২২ লক্ষ ওএমআর প্রকাশ নয় এখনই এসএসসিকে জানিয়ে দিল হাইকোর্ট

শিক্ষক নিয়োগের পর কোনও না কোনও অভিযোগ নিয়ে মামলা এই বাংলায় নতুন নয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর আমলে কোর্টের অর্ডারে ৮ বছর শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিলো এই বাংলায়। ১৯৯২ সালে শিক্ষকদের বয়স ৬৫ বছর থেকে ৬০ বছর করে দেওয়ায় ৭৩০০০ শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। সেই চাকরি-হারা শিক্ষকদের আন্দোলন থামাতে লাঠি পেটা করে করে শিক্ষকদের লকআপে ঢুকিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। ১৯৯৬ সালের প্যানেলের শুধু মেদিনীপুরের ২২০০ শিক্ষক চাকরি হারিয়েছিল ২০১২ সালে, কোর্টের অর্ডারে। কম কিছু হয়নি বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে। এসএসসি গঠনের আগে স্কুল কমিটির মাধ্যমে প্রায় সব সিপিএম এর জোনাল কমিটি, লোকাল কমিটির নেতা-নেত্রী ও তাদের আত্মীয়দের চিরকুটের মাধ্যমে শিক্ষকের চাকরিতে ঢুকিয়ে দিয়েছিল বাম সরকার, সেই সময়কার যোগ্য শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের বঞ্চিত করে। তবুও লাল ঝান্ডার লাল নিশান পত্ পত্ করে ৩৪ বছর উড়েছিল এই বাংলায়। বামফ্রন্ট সরকারের কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা নিদেন পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করেননি।
বামফ্রন্টের আমলে বাংলার যোগ্য ছেলে-মেয়েদের বঞ্চিত করে চিরকুটের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া সিপিএম এর ক্যাডাররা জনগণের ট্যাক্সের টাকা সারা জীবন ভোগ করে চলেছে, এমন কী পেনশন পর্যন্ত। হিসেব করলে এক একজন কোটি টাকার ওপর। এটা কোন সু নীতির মধ্যে পড়ে! জবাব আছে সিপিএম-এর কাছে, যাঁরা বলে চলেন তৃণমূল মানেই চোর।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বদলা নয় বদল চেয়েছিলেন বলেই বেঁচে গিয়েছিলেন সিপিএম-এর অনেক নেতা-মন্ত্রী। ২০১১ সালের পর মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ধ্যান-জ্ঞান ছিল বাংলার উন্নয়ন। তাই ২০০৯ সালের শিক্ষক নিয়োগে বিস্তর গোলমাল (ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী) থাকা সত্যেও বামফ্রন্ট সরকারের কেষ্ট-বিষ্টুরা নিশ্চিন্তে রাত্রিযাপন করেন। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে প্রতি মুহূর্তে ব্যস্ত থাকেন প্রতি হিংসা চরিতার্থ করা তার মানসিকতার মধ্যে পড়ে না।
তাই আজ যখন দেখি সিপিএম-এর নেতারা আস্ফালন করে স্লোগান তোলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই পদত্যাগ করতে হবে, তখন ওদের বলতে হয় “আস্তে কন কত্তা, ঘোড়া শোনলেও হাসবো!”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় যখন বলে চলেছেন, চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের পাশে তিনি আছেন, আইনি সাহায্য নিয়েই আছেন, তখন ভরসা তাঁর ওপরেই রাখতে হবে। যারা চাকরি খেয়ে নিল হাজার হাজার শিক্ষকের, সেই বিকাশবাবু, অভিজিৎবাবুদের দলের পরামর্শে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী আন্দোলন যে শিক্ষকেরা করে চলেছেন, তাঁদের বোঝা দরকার, চাকরি দিয়েছিল এই সরকার, চাকরি বজায় রাখার আইনি লড়াইও লড়ছে এই সরকার, ফলে তার পাশেই থাকা উচিত। যারা সমগ্র প্যানেল বাতিলের হোতা, যারা কিছু অবৈধ শিক্ষকের জন্য (যদিও সেটা বিচারাধীন এখনও) যোগ্য শিক্ষকদের চাকরিগুলোকেও বাতিল করালেন তারাই আসল শত্রু আপনাদের। বন্ধুর বেশে পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যারা, সময় এখন তাদের চিনে নেওয়া। ভাবতে হবে ভুল পথে চলেছি কিনা।

Latest article